প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৪
কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

অভিধানের দৃষ্টিতে মীলাদ :
মীলাদ, মওলেদ এবং মওলুদ এই তিনটি শব্দের আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপ। আরবী ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ অভিধান লেসানুল আরব ও বৃহত্তম অভিধান তাজুল আরুছ, কামুছ, মুহকাম, তাহজীব, আছাছ, ছেহাহ ও জওহরী এবং মিছবাহ প্রভৃতি লোগাতে (অভিধানে) বর্ণিত আছে যে, অলীদ, মওলুদ শব্দের অর্থ নবজাত শিশু। মওলুদূর রেজাল অর্থ মানুষের জন্মকাল, জন্মস্থান, মীলাদুর রেজাল মানুষের জন্মকাল, জন্ম দিন। মীলাদ শব্দটি জন্মকাল ও জন্মদিন ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃত হয় না। সুতরাং মীলাদুন্নবী, মাওলেদুন্নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা এর জন্ম কাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী আলোচনা করা। ঐ মজলিসটি ঈদে মীলাদুন্নবী নামে খ্যাতি অর্জন করেছে।
ইসলামী পরিভাষায় প্রচলিত মীলাদ শরীফের রূপরেখা :
নূরে মুহাম্মদী সৃষ্ট জগতের শ্রেষ্ঠ ও প্রথম সৃষ্ট। এ নূর কিভাবে সৃষ্টি হয়ে ‘ প্রথম কোথায় কিভাবে ছিল, অন্যান্য সৃষ্ট জগত এ নূর হতে কিভাবে সৃষ্টি হলো, এক কথায়, এ নূর মুবারক দেহ পিঞ্জিরের মাধ্যমে ইহজগতে প্রত্যক্ষ আগমন করার পূর্বেকার ঘটনাবলী সংক্রান্ত আলোচনা আহুত অনুষ্ঠানকে মীলাদ মাহফিল বলে। এর জলন্ত প্রমাণ কুরআন পাকে বহু আয়াত ও হাদীছ সমূহে উল্লেখ রয়েছে। হযরত রাসূল মকবুল (সা.) স্বয়ং মজলিস কায়েম করত: নিজের সৃষ্টি, নছবনামা ও তঁার নূর মোবারক হতে জগত সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন এবং ছাহাবায়ে কেরামকে মজলিস কায়েম করে বিজাতির সামনে হুজুরের প্রশংসা করার অনুমতি প্রদান করেছেন। এ’টি সুন্নাতে রাসূল ও সুন্নাতে ছাহাবার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং মীলাদ শব্দের অর্থ প্রসব করানোর যন্ত্র বলে যারা মন্তব্য করেছেন, ইহা তাদের ধৃষ্টতা ও মূর্খতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। সত্যিকার কুরআন হাদীছের জ্ঞানী ব্যক্তিগণ এ ধরণের জঘন্য উক্তি করতে পারেন না। বিশেষত: নবী প্রেমিকরা সর্বদাই মুহাম্মাদ (সা.) জন্ম - লগ্ন কাহিনী, ঐ সময়কার আশ্চর্যজনক ঘটনাবলী প্রকাশ করে প্রীত ও আনন্দিত হন। ধৃষ্টতা পোষণকারী ব্যক্তিগণের হুযুর পাক এর সাথে আন্তরিক শত্রুতা থাকার ইঙ্গিত বহন করছে যার পরিণাম অত্যন্ত খারাপ। ইয়া আল্লাহ ! তাদেরকে সুমতি প্রদান করুন এবং মীলাদ পাঠ ও মীলাদ মাহফিল কায়েম করার তাওফীক দান করুন।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে নবী হযরত ইয়াহইয়া ইবনে জাকারিয়া (আ:) সম্পর্কে বলেন-
তার উপর শান্তি যেদিন সে জন্মেছে, যেদিন তার মৃত্যু হবে আর যেদিন সে জীবন্ত হয়ে উত্থিত হবে।(১৯ সূরা মারইয়াম -১৫)
এ আয়াত দ্বারা এটাই প্রমানিত, নবীরা যেদিন জন্ম গ্রহন করেন, যে দিন ইন্তেকাল হয় এবং হাশর ময়দানে যেদিন পুনরায় উদিত হবেন। এ অবস্হাগুলোতে মহান আল্লাহর রহমত শান্তি নাযিল হয়।
তাই আমাদের নবী (সা.) এর জন্ম দিনেও আল্লাহে শান্তি রহমত নাযিল হয়। ঐ সময়টা বরকতময় সময়।
ঈসা (আ:) সম্পর্কে কুরআনে এসেছে -
আমার উপর আছে শান্তি যেদিন আমি জন্মেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে আর আমি যেদিন জীবিত হয়ে উত্থিত হব।’(১৯ সূরা মারইয়াম - ৩৩)
ঈসা নবীর বেলায় ও একই কথা। নবীদের জন্মে শান্তি নাযিল হয়।
মারইয়াম-তনয় ‘ঈসা বললেন, ‘হে আল্লাহ্ আমাদের রব! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠান; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সবার জন্য হবে আনন্দোৎসব স্বরুপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন।আর আমাদের জীবিকা দান করুন; আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’(৫ মায়িদাহ -১১৪)
ঈসা (আ:) এর উম্মতের জন্য আকাশ থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠালে এটা তাদের জন্য খুশির কারণ হবে।
এজন্য ঈসা (আ:) বললেন এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সবার জন্য হবে আনন্দোৎসব স্বরুপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন।
তাহলে আমাদের কাছে আমাদের প্রিয় নবী (সা.)কে যেদিন পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেদিন উম্মতের জন্য সবচেয়ে বেশি খুশির কারণ।
তাই আমরা খুশি হিসেবে এদিনকে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) বলি।
উম্মত হয়ে নবীর আগমনে খুশি হবেনা, তাহলে কি হবে?
শয়তান নবীর জন্মে খুশি হতে পারেনা।
সে সেদিন বিকট ভাবে চিৎকার করে।
ইমরান নবীর স্ত্রী হান্নাহ বিনতে ফাকুদকে বিবি মরইয়াম ও তৎপুত্র ঈসা নবীর জন্মের সুসংবাদ জানালেন। ইমরান নবীর স্ত্রীর গর্ভধারণ ও প্রসবের কথা উল্লেখ এবং মরইয়াম ও তৎপুত্র হযরত ঈসাকে শয়তানের হাত হতে রক্ষার জন্য দোয়া প্রার্থনা করা, তদুপরি সন্তানের নাম রাখার কথা কুরআন পাকে উল্লেখ রয়েছে। যেমন, সূরা আল ইমরান ৩৪/৩৫ নং আয়াত-
অনুবাদ : ইমরান নবীর স্ত্রী হান্নাহ বিনতে ফাকুদ বললেন, ওহে প্রভু ! আমি তোমার জন্য আমার পেটে যে সন্তান রয়েছে উহা মান্নত করলাম এবং মুক্ত ও আজাদ করলাম। ওহে প্রভু ! আমার মান্নত কবুল কর। তুমি একমাত্র শ্রবণকারী ও অন্তর্যামী। অত:পর ইমরান - স্ত্রী যখন সন্তান (মরইয়াম) কে প্রসব করেন, অথচ আল্লাহ যথেষ্ট জানেন ; ইমরান - স্ত্রী কি প্রসব করেছেন। তখন সে আল্লাহকে জানান ; ওহে প্রভু ! আমি কন্যা সন্তান প্রসব করেছি, পুরুষ সন্তান তো মেয়ের ন্যায় নয়। আমি ঐ কন্যা সন্তানটির নাম মরইয়াম রেখেছি। ঐ মেয়ে সন্তানকে এবং ঐ মেয়েটির (সন্তানটির) সন্তানকে শয়তানের প্রতারণা হতে বঁাচার জন্য তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থী।
সুরায়ে মরইয়াম ৭ ম আয়াতে যাকারিয়া (আ:) এর বিবির গর্ভধারণ ও সন্তান লাভের কথা এবং সন্তানের নামকরণ ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে - অনুবাদ:- ওহে যাকারিয়া ! আমি তোমাকে ইয়াহ - ইয়া নামক সস্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। এ নাম ইতিপূর্বে কারো জন্যে স্থির করিনি। হযরত যাকারিয়া (আ:) এতে বিস্মিত হয়ে বললেন ; ওহে প্রভু ! আমার কি করে সন্তান লাভ হবে ? অথচ আমার স্ত্রী বঁাঝা, এদিকে আমি বৃদ্ধলোক। আল্লাহ পাক বললেন- তোমার প্রভুর জন্য ইহা অতি সহজসাধ্য। তোমাকে পূর্বে যখন সৃষ্টি করেছি তখন তুমি কিছুই ছিলেন। তিনি বললেন, প্রভু ! আমার জন্য এ ব্যাপারে একটি নিদর্শন প্রদান করুন। তদুত্তরে মহান আল্লাহ বললেন, নিদর্শন হলো তুমি একাধারে ৩ রাত ব্যাপী মানুষের সাথে কথাবার্তা বলতে পারবেনা। তাছাড়া হযরত মরইয়ামের গর্ভধারণ ও প্রসব বেদনার কথা কুরআন পাকে উল্লেখ রয়েছে।
সূরায়ে মরইয়াম ১৬-২২ আয়াতগুলোতে ঘোষণা করা হয়েছে - অনুবাদ:- বিবি মরইয়ামের কথা কুরআন পাকে স্মরণ করুন। যখন বিবি মরইয়াম আপনজন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ব দিকে গেলেন এবং তাদের মধ্য হতে নিজেকে পর্দায় রাখলেন। তখন আমি মহান আল্লাহ তঁার নিকট আমার রুহুল আমিন (জিব্রাঈল) কে পাঠালাম। জিব্রাঈল বিবি মরইয়ামের নিকট একজন যুবক বেশে উপস্থিত হলেন। এতে বিবি মরইয়াম বললেন, আমি পরম দয়াময়ের নিকট তোমার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদিও তুমি মুত্তাকী পরহেজগার হওনা কেন ? তদুত্তরে রূহুল আমীন (ফেরেশতা) বললেন, নিশ্চয়ই জেনে রেখ আমি তোমার প্রভুর দূত। আমাকে তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান প্রদানের জন্য পাঠানো হয়েছে। মরইয়াম বললেন, আমার কি করে সন্তান লাভ হবে ? অথচ আমাকে কোন মানুষ এযাবত স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনী, যিনাকারীনী নই। রূহুল আমীন (ফেরেশতা) বললেন, সন্তান প্রদান করা হবে। তোমার প্রভু বলেন, উহা আমার জন্য সহজ সাধ্য। আমি উক্ত কাজটিকে মানুষের জন্য নিদর্শন ও আমার রহমত হিসেবে করতে চাই এবং ইহাই করা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং মরইয়াম গর্ভবর্তী হলেন, উক্ত গৰ্ভ নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস হতে বহু দূরে বাসস্থান বানালো। অত:পর বিবি মরইয়ামের প্রসব বেদনায় তাকে খেজুর গাছের তলায় পেঁৗছালো। মরইয়াম বেদনায় অস্থির হয়ে বলতে লাগল, হায়রে এঘটনার পূর্বেই যদি আমি মৃত্যুবরণ করতাম তাহলে আত্মভোলা হতাম।
উপরন্তু উক্ত কুরআনপাকে হযরত মূসা (আ:) এর মায়ের গর্ভ প্রসব করার কথা ও দুধ পান করানোর কাহিনী বর্ণিত আছে অনুবাদ:- মহান আল্লাহ বললেন, আমি মূসা নবীর মায়ের নিকট বার্তা পাঠিয়েছি যে, তুমি মূসাকে দুধ পান করাও।
উল্লেখিত আয়াতে হযরত ইসহাক, ইসমাঈল, মরইয়াম, ঈসা, ইয়াহইয়া ও হযরত মূসা এবং আমাদের নূর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(সা.) এর সংক্ষিপ্ত নছবনামা সহ বেলাদত (জন্ম) হতে নবুওয়াতের পূর্বের, বরং জন্ম - পূর্ব ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। যদি এ বর্ণনা অনাবশ্যক বস্তু হতো, তাহলে কুরআন পাকে ইহা বর্ণনার কারণ কি ?
মূসা নবীর সম্পর্কে কুরআনে এসেছে -
মূসাকে আমি আমার নিদর্শনাবলীসহ প্রেরণ করেছিলাম (এবং বলেছিলাম,) তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে বের করে আনো এবং
তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলি স্মরণ করিয়ে দাও।
এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (১৪ সূরা ইব্রাহীম - ৫)
স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি‘মাতের কথা স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফির‘আওনী গোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছিলেন যারা তোমাদেরকে জঘন্য রকমের শাস্তিতে পিষ্ট করছিল। তোমাদের পুত্রদেরকে তারা হত্যা করত আর তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে এক কঠিন পরীক্ষা।(১৪ সূরা ইব্রাহীম - ৬)
“তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলি স্মরণ করিয়ে দাও।” (কুরআন)
এ আয়াত দ্বারা কতিপয় স্মরণীয় দিন, রহমত পূর্ণ দিন। আল্লাহ করুনা করেছেন এমন কতিপয় দিনের কথা স্মরণ করার কথা কুরআনে আছে।
তাই নবী (সা.) যেদিন পৃথিবীতে তাশরীফ এনেছেন, উম্মতের জন্য ঐ দিন স্মরণ করা ঈমানের দাবী।
আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ করা।
পবিত্র কুরআনে এসেছে -
আর স্মরণ কর, ‘আদ জাতির (ধ্বংসের) পরে তিনি তোমাদেরকে (তোমাদের আগের লোকদের) স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আর তিনি তোমাদেরকে যমীনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরী করছ।
কাজেই তোমারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।’(৭ সূরা আ’রাফ - ৭৪)
আল্লাহর নেয়ামত বেশি বেশি স্মরণ করা -
আর তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত কর।(৯৩ সূরা দুহা -১১)
নবী (সা.) সবচেয়ে বড় নেয়ামত -
আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন নবীকে পাঠিয়ে।
কুরআনে এসেছে -
আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তঁার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল। (৩ সূরা আলে ইমরান -১৬৪)
ইব্রাহীম (আ:) এর দোয়া - ‘হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন ; তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (২ সূরা বাকারা -১২৯)
হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম-এর দোআ, ঈসা ‘‘আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৬২] ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদের অর্থ তার এ উক্তি,কুরআনের ভাষায় -
“আমি এমন এক নবীর সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তার নাম আহমাদ”। [সূরা আস-সাফ: ৬] তার জননী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে, তার পেট থেকে একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছে। কুরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবের আলোচনা প্রসংগে দু’জায়গায়, সূরা আলে-ইমরানের ১৬৪তম আয়াতে এবং সূরা জুমুআয় ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম-এর দোআয় উল্লেখিত ভাষারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এভাবে ইংগিত করা হয়েছে যে, ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম যে নবীর জন্য দোআ করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
অনুগ্রহে আনন্দ প্রকাশ :- নবী (সা.) এর আগমনে খুশি - বলুন, ‘এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহে ও তঁার দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।’ তারা যা পুঞ্জীভুত করে তার চেয়ে এটা উত্তম।(১০ সূরা ইউনুস -৫৮)
নবী (সা.) উম্মতের কাছে সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ এটা কোন উম্মত অস্বীকার করতে পারেনা।
তাই নবী (সা.) আমাদের কাছে অনেক বড় নেয়ামত এজন্য আমরা এদিনকে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) হিসেবে পালন করি।
নবীজি (সা.) রহমতের নবী - কুরআনে এসেছে - আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই পাঠিয়েছি। (২১ সূরা আম্বিয়া -১০৭)
নবী কারীম (সা.) সমগ্র জগতের জন্য রহমত। তাই নবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করা তঁাকে ভালোবাসার মাধ্যমে রহমত লাভ করা যায়।
রাসূল ও নবীদের বৃত্তান্ত শুনলে অন্তর দৃঢ় হয় - রাসূলকে নবীদের বৃত্তান্ত শুনানো হয়েছে অন্তর দৃঢ় হওয়ার জন্য।
রসূলদের যে সব সংবাদসমূহ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করলাম, এর দ্বারা আমি তোমার দিলকে মযবুত করছি, এতে তুমি প্রকৃত সত্যের জ্ঞান লাভ করবে আর মু’মিনদের জন্য এটা উপদেশ ও স্মারক। (১১ সূরা হুদ - ১২০)
নবীদের বৃত্তান্ত শুনলে দিলে ঈমান মযবুত হয়, তাই আমাদেরকে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এর জন্মে তঁার শুরু থেকে সমগ্র জীবনী আলোচনার মাধ্যমে উম্মতের দিলে ঈমান মযবুত হবে।
এ জন্য মিলাদুন্নাবী (সা.) এ আমরা প্রিয় নবী (সা.) এর জীবনী আলোচনা করে ঈমানী শক্তি জামিল করি।
আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত পড়েন। এবং ঈমানদারদেরকেও সালাত ও সালাম পড়ার তাগিদ দেন -
নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তঁার ফিরিশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরূদ ও সালাম পেশ কর।) (৩৩ সূরা আহযাব -৫৬)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নবী রাসূলদের জন্মের কথা পবিত্র কুরআনুল কারীমে আছে।
নবী রাসূলদের জন্মে আল্লাহ শান্তি নাযিল করেন।
নির্দিষ্ট দিনকে স্মরণ করা যায়।
কোন নিয়ামত লাভ করলে খুশি হওয়া যায়।
মীলাদ শরীফ হাদীছ শরীফ হতে প্রমাণিত :
তিরমিজী শরীফ ২/২০৪ পৃষ্ঠায় মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরত মুত্তালিব বিন আব্দুল্লাহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন। অনুবাদ:- আব্দুল্লাহর পুত্র মুত্তালিব নিজ দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি ও হযরত নবী করীম (সা.) হাতী সালে জন্ম গ্রহণ করেছি। হযরত ওছমান (রা:) কিবাছ বিন আশইয়ামকে প্রশ্ন করেন, আপনাদের উভয়ের মধ্যে বয়সে কে বড় ? তিনি উত্তরে বলেন, বয়সের দিক দিয়ে আমি হযরত নবী করীম (সা.) হতে বড়, কিন্তু সম্মানে ও মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি আমার চেয়ে বড়।
অত্র হাদীছ হতে প্রমাণিত হলো ছাহাবায়ে কেরাম হযরত নবী করীম (সা.) এর জন্ম কাহিনী পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতেন।
ছহীহ বুখারী শরীফ ১/২০ পৃষ্ঠায় উমাইয়্যা খলীফা হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয হতে বর্ণিত আছে, তিনি বিজিত রাষ্ট্র প্রধানের নিকট এ মর্মে পত্র লিখে পাঠিয়েছেন। যথা: অনুবাদ:- হযরত নবী করীম(সা.) এর হাদীছগুলির প্রতি যত্নবান হও ও সমুদয় হাদীছগুলি লিপিবন্ধ কর। কেননা, আমার ভয় হচ্ছে ইলমে দ্বীন ধ্বংস ও বিলীন হওয়ার এবং ওলামায়ে কেরামের ইহলোক ত্যাগ করার। তাই তোমরা হাদীছ শরীফের আলোচনা মজলিস কায়েম কর যাতে অজ্ঞ লোক বিজ্ঞ হতে পারে। কেননা, হাদীছ শরীফ ধ্বংসের মূল কারণ হলো, তাবলীগ ও প্রচার বন্ধ করে দেয়া।
ইহা ধ্রুব সত্য যে, মীলাদ অনুষ্ঠান হাদীছ শাস্ত্র প্রচার করার একটি অন্যতম মাধ্যম ও এতে ফায়দা ব্যাপক।
ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন প্রসংগ : বর্তমান সমাজে দেখা যায়, একদল লোক পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মীলাদুন্নবীর মাহফিল উদ্যাপন করেন না। বরং যারা এ পবিত্র মাহফিল কায়েম করে হুযুর পাক এর জন্মলগ্ন ইতিহাস বর্ণনা করে আনন্দ প্রকাশ করেন, সভার শেষে খুশীতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও হযরত রাসূল করীম(সা.) নেক নজর হাছিলের উদ্দেশ্যে আর্থিক দান ও তাবারক প্রদান করেন, এসব কাজকে জঘন্যতম গুনাহ মনে করেন। যার ফলে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই এ নেককাজে যোগদান থেকে বিরত রয়ে মীলাদুন্নবী মাহফিলের বিশেষ ছওয়াব হতে মাহরূম হচ্ছে।
কুরআন পাকে ঈদ শব্দটি এসেছে। অপরদিকে হাদীছ শরীফে বহু জায়গায় হযরত রাসূল মকবুল (সা.) ও ছাহাবায়ে কেরাম ঈদ শব্দ ব্যবহার করেছেন। বিশেষত: জন্মকে কেন্দ্র করে স্বয়ং রাসূল মকবুল (সা.) এর জন্ম উৎসব বা ঈদে মীলাদুন্নবী করে উম্মতগণকে উহা পালনের জন্য উৎসাহিত করেছেন।
হুযুরের (সা.) এর প্রতি যে, মহান আল্লাহর মীলাদুন্নাবীর আয়াত ও হাদীছ সমূহ বয়ান করার নির্দেশ ছিল উহা তিনি গোপন করেননি। মজলিস কায়েম করে স্বয়ং এবং কোন কোন সময় বিশেষ বিশেষ ছাহাবায়ে কেরাম দ্বারা স্বয়ং উপস্থিত থেকে বর্ণনা করায়ে নিজে ও ছাহাবায়ে কেরাম খুশী প্রকাশ করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যত উম্মতে মুহাম্মদীর আগমন হবে তাদেরকেও বর্ণনা করতে ও আনন্দ প্রকাশ করতে বলে গেছেনন। আশাকরি তা পড়ে শুনে প্রীত ও আনন্দিত হবেন ও সংশোধন একথা দিবালোকের ন্যায় সত্য। মহান আল্লাহ মানবজাতির উপর যখন যেকোন মস্তবড় নিয়ামত অর্পন করেন, জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানবতার দৃষ্টিতে সাধারণত: মানুষ উহার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। এমন কি সকলের সমন্বয়ে ঐ দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ঈদ বা উৎসব উদযাপন করে থাকেন। শরীয়তে আদিকাল থেকে আরম্ভ করে অদ্যাবধি ঐ উৎসব প্রতিপালিত হয়ে আসছে। আমি সকলের এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পূর্বেকার নজীর গুলি উল্লেখ করার ইচ্ছা করছি।
যারা বলে ঈদ মাত্র দু’টি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। বরং ঈদ হচ্ছে মোট নয়টি। আশুরার দিনটি ঈদের দিন।
মায়েদা অবতীর্ণের দিন ঈদ।
জুমআ ও আরাফাতের দিন ঈদের দিন।
শবে বরাত ও শবে ক্বদর ঈদ।
রাসূল (সা.) জন্ম দিন ঈদের দিন।
হযরত রাসূল মকবুল (সা.) এর (জন্ম দিন) ঈদের দিন :
এখন আসল কথা হচ্ছে- সাইয়্যেদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন শাফীউল মুজনেবীন, রহমাতুললিল আলামীনের মীলাদুন্নবীর ঈদ উদযাপন করা শরীয়ত সমর্থিত কিনা ? প্রতি উত্তরে বলছি, “ ঈদে মীলাদুন্নবী ” উদযাপন করা সুন্নাতে রাসূল, সুন্নাতে ছাহাবা ও সুন্নাতে তাবেয়ীন এবং সুন্নাত অদ্যাবধি বিশ্ব মুসলিম প্রতিপালন করে আসতেছেন। এ হিসেবে এটাকে ইজমায়ে উম্মতের সুন্নাত বলা হয়। যেহেতু মহান আল্লাহর বাণী অনুবাদ:- ওহে নবী ! আল্লাহর দান ও দয়ার কথা বলুন। লোকজন উহা শুনে যেন খুশী হন উক্ত খুশী উদযাপন দুনিয়ার সঞ্চিত সর্বপ্রকার সম্পদ হতে উত্তম।
আবূ শায়খ ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই ফযল অর্থ ইলম, রহমত অর্থ মুহাম্মদ (সা.)।
খতীব ও ইবনে আসাকের ইবনে আব্বাস হতে ফযল শব্দের তাফসীর নবী করীম (সা.) বলেছেন, রহমত অর্থ হযরত আলী বলেছেন। তবে সর্বজন বিদিত কথা, রহমত হল নবী পাকের ছিফাত।
সকলে জানেন জন্ম উৎসবের প্রথম ধাপ হচ্ছে আকীকা। হযরত রাসূল মকবুল (সা.) এর জন্মের ৭ ম দিবসে তার দাদা আব্দুল মুত্তালিব একটি দুম্বা আকীকা করেছেন। মজলিস ডেকে সকলের মেহমানদারী করে নাতীর নামকরণ করলেন “ মুহাম্মাদ “। এতে প্রশ্ন উঠল এ নাম তো আপনার পূর্ব পুরুষের কারো নাম ছিল না। তিনি উত্তরে বললেন, আমার ইচ্ছে হলো, যেন আসমানে এর প্রশংসা করেন আল্লাহ, আর যমীনে প্রশংসা করেন মানুষ। সীরতে হলবীয়া ১ ম খণ্ড ৯৩ পৃষ্ঠায়।
বায়হাকী শরীফে হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত আছে, অনুবাদ: নিশ্চয়ই হযরত রাসূল মকবুল(সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে মদীনায় গিয়ে নিজের আকীকা করেছেন। অথচ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, তার জন্মের ৭ ম দিবসে তার দাদা আব্দুল মুত্তালিব আকীকা করেছেন। আকীকা দু’বার করা হয় না। এমতাবস্থায় মুহাদ্দেছীন উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার জন্য এ বর্ণনা দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ তাকে রাহমাতুলল্লিল আলামীন করেছেন বিধায়, শুকরিয়া স্বরূপ এরূপ করেছেন এবং উম্মতগণকে এরূপ করার বিধান করলেন। যেমন তিনি নিজের উপর দরূদ শরীফ পাঠ করেছেন। তা শুনে যেন উম্মতগণ দরূদ পড়ার জন্য আগ্রহান্বিত হন। সুতরাং মীলাদুন্নবীর জন্য ঐ আয়াত ও এ হাদীছ শরীফই যথেষ্ঠ।
একটা সাধারণ কথা সকলেই জানেন, রমযানুল মোবারকের আগমনে রোযার ফজীলত ও রোযা না রাখার কুফল সম্পর্কে খুৎবায় বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়। তদ্রূপ জিলহজ্জ মাসে হজ্জের ফজীলত ও হজ্জের যাবতীয় আহকামের বর্ণনা থাকে। অথচ এসব বর্ণনার বাহিরে অন্যান্য বর্ণনাও থাকে। তদ্রূপ মাহে রবিউল আউয়ালে হুযুরের জন্ম মাস হিসেবে জন্ম বৃত্তান্ত সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীছ শরীফ সমূহের আলোচনা করা অবশ্য কর্তব্য। মহান আল্লাহর বাণী সুরায়ে দোহায় বর্ণিত আছে - “আপনি আপনার প্রভুর প্রদত্ত নিয়ামত লোক সমাজে প্রচার করুন।” এতে আল্লাহ পাকের নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়।
সকলে জানেন আয়াতের শানে নুযূল খাছ, হুকুম আম। সে হিসেবে সকল উম্মতের উপর খোদা প্রদত্ত নিয়ামতের কথা মজলিস কায়েম করে বর্ণনা করা ওয়াজিব।
অন্য আয়াতে বর্ণিত আছে- “আমার প্রদত্ত নিয়ামতের শুকুর কর, অবমাননা কর না।” আপনার কর্তব্য উম্মতের সামনে উহা প্রচার করা। আর তাদের কর্তব্য উহা শুনে আনন্দিত হওয়া। কুরআনে এরশাদ হয়েছে - অনুবাদ: হে নবী বলুন মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের কথা এবং সে অনুগ্রহ ও দয়ার কথা শুনে তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত।”
তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১১ খণ্ড ২০৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে। খুশী হওয়া কোন প্রিয় ও পছন্দনীয় বস্তু লাভ করার ফলে অন্তরে যে আনন্দ পাওয়া যায় সেটাকে ফারহুন বলা হয়। এর অর্থ হলো ঈমানদারগণের আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার উপর আনন্দিত হওয়া উচিত। যেহেতু হযরত ইবনে আব্বাস, হাসান ও কাতাদা বলেছেন- রহমত ও ফাদ্বল। রহমত শব্দ দ্বারা ইসলাম ও কুরআন বুঝানো হয়েছে। অন্য অভিমত হলো যে, রহমত দ্বারা কুরআন, ফাদ্বল দ্বারা হাদীছ শরীফগুলো বুঝানো হয়েছে।
এতে প্রমাণিত হলো, আমার নবী পাকের সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে ও হাদীছ শরীফে যে বর্ণনা এসেছে উহা মজলিস কায়েম করে আমরা ওলামায়ে কেরাম বর্ণনা করবো।
আর সাধারণ মুসলমানগণ উহা শ্রবণ করে আনন্দিত হবেন। এরই নাম ঈদে মীলাদুন্নবী।
কোন লোকের জীবনী লিখতে ও বলতে গেলে প্রথমে জন্মলগ্ন ইতিহাস থেকে আরম্ভ করেন। কারণ জন্ম বৃত্তান্ত চিরদিন অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। বিশেষ করে যারা জাতির কর্ণধার ও শাসনকর্তা তাদের জন্য কথা সমাজের সামনে তুলে ধরতেই হবে। যেমন মহান আল্লাহ হযরত মরইয়াম, হযরত ঈসা, হযরত মূসা, হযরত ইয়াহইয়া (আ:) ও আমাদের নবীজীর জন্ম কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব হতে বর্ণিত - একদা হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব হযরত রাসূল মকবুল (সা.) এর নিকট আসলেন। মনে হচ্ছিল, তিনি হযরত (সা.) এর আভিজাত্য সম্পর্কে সমালোচনা শুনতে পেয়েছেন তা শুনে হুযুর মিম্বারে দঁাড়িয়ে সকলকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কে ? সকলে বলল আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, আমি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহর পুত্র, আর আব্দুল্লাহ আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ মাখলুক সৃষ্টি করে আমাকে তাদের মধ্যে উত্তম মাখলুক করেছেন। অত:পর তাদেরকে ২ টি দলে আরবে আজমে বিভক্ত করেছেন। তন্মধ্যে আমাকে উত্তম দলে রেখেছেন। অত:পর তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে পরিণত করেছেন, আমাকে তাদের মধ্যে উত্তম গোত্রে রেখেছেন। অত:পর তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারে পরিণত করেছেন, আমাকে তাদের মধ্যে উত্তম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সুতরাং ব্যক্তি ও পরিবার হিসেবে আমি তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিরমিযী শরীফ ২ / ২০২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। বর্ণিত হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় জন্ম ইতিহাস কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনুবাদ: হযরত আব্বাসের পুত্র আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে কুরাইশ মহান আল্লাহর দরবারে নূর হিসেবে বিদ্যমান ছিল। ঐ নূর তাসবীহ পাঠে রত ছিল এবং ঐ তাসবীহ শুনে ফেরেশতাগণ তাসবীহ পাঠ করতেন। যখন হযরত আদমকে সৃষ্টি করা হলো, তখন ঐ নূর হযরত আদমের পৃষ্ঠদেশে রেখে দেয়া হলো। হযরত রাসূল(সা.) বলেন- আল্লাহপাক আমাকে যমীনে নামিয়ে আদম নবীর পৃষ্ঠদেশে রেখে দিলেন। তথা হতে নূহ নবীর পৃষ্ঠদেশে, তারপর ইব্রাহীম নবীর পৃষ্ঠদেশে তারপর সেখান হতে বিভিন্ন সম্মানিত পীঠ ও পবিত্র উদরে স্থানান্তরিত করেন, অবশেষে আমাকে আমার পিতা - মাতার মাধ্যমে বের করলেন। আমার পিতা - মাতা কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হননি। সীরাতে হালাবিয়া ১ ম খণ্ড ৩০ পৃষ্ঠা এবং তিরমিযী শরীফ ২/৩৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
তিরমিযী শরীফের ২ খণ্ড ২০২ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে - অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে, ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ওহে আল্লাহর হাবীব ! বলুন, আপনি কখন হতে নবী ? তিনি বললেন, আমি ঐ সময় হতে নবী যখন আদম (আ:) আত্মা ও শরীরের মাঝ খানে ছিলেন। অর্থাৎ আমি তার সৃষ্টির পূর্ব থেকেই নবী।
হাকিম ও মাওয়াহিবুলল্লাদুন্নীয়া ১ ম খণ্ড ২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে - অনুবাদ: হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত আছে- মক্কা শরীফে এক ইয়াহুদী ব্যবসা করত। হযরত রাসূল কারীম যে রাতে জন্ম গ্রহণ করেন সেরাতে ঐ ইয়াহুদী, কুরাইশী লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, অদ্যকার রাতে কোন ছেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে কি ? তারা বলল আমাদের তা জানা নেই। তখন সে বলল, অদ্য রাত্রে আখেরী উম্মতের এমন এক সন্তান জন্ম নিয়েছে যার দু’কাধের মাঝে একটি চিহ্ন আছে। উহার মধ্যে ধারাবাহিক কতগুলো লোম আছে ঘোড়ার ঘাড়ের চুলের মত। সকলে ইয়াহুদীকে সাথে নিয়ে খেঁাজ করতে করতে হুযুর আকরাম এর মায়ের ঘরে এসে পেঁৗছলেন। সকলে বললেন, আপনার সন্তান দেখান তখন তঁার মাতা তঁাকে বের করে দিলেন। তারা পিঠ হতে কাপড় সরায়ে হুবহু ঐ চিহ্ন দেখতে পেল। ইয়াহুদী উহা দেখে বেহুঁশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হুঁশ হওয়ার পরে সকলে জিজ্ঞেস করল, বেহুঁশ হওয়ার কারণ কি ? তখন সে বলল আল্লাহর কসম, ইস্রাঈলীর বংশ হতে নবুওয়াত চলে গেল। মাওয়াহেব ১ ম খণ্ড ২৬ পৃষ্ঠা। সুবহানাল্লাহ !
১২ ই রবিউল আউয়াল হুযুর আকরাম (সা.) এর জন্ম উৎসবের দিন না শোকের দিন :
একথা আলেম ও সকলে জানেন যে, শরীয়তে মোহাম্মদীর দৃষ্টিতে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর শোক করার মুদ্দত চার মাস দশদিন। আর নবী - অলী, পীর - মুর্শেদ, পিতা - মাতা, আত্মীয় - স্বজন, পাড়া - পড়শী সকলের মৃত্যুতে মাত্র মৃত্যু দিন হতে তিন দিন শোক করার হুকুম। সুতরাং ১২ ই রবিউল আউয়াল উপলক্ষে আনন্দ উৎসব করাই নিয়ম শোক করা অনিয়ম বরং জন্ম মাস ও জন্ম দিবস হিসেবে ঈদ উদযাপন এবং ঈছালে ছওয়াব করাই ঈমানের দাবী। আল্লামা সুয়ূতী তদীয় গ্রন্থে, হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী হতে নকল করেছেন -
অনুবাদ:- উক্ত ঘটনা হতে এ শিক্ষাই পাওয়া যায় যে, মহান আল্লাহ কোন নির্দিষ্ট দিনে কোন নিয়ামত প্রদান করেন অথবা কোন মুছিবত হতে রক্ষা করেন তজ্জন্য প্রতি বছর ঐ দিনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা শরীয়ত সম্মত। উক্ত শুকরিয়া বিভিন্ন রকম ইবাদত যেমন নামায, রোযা, দান - খয়রাত ও তিলাওয়াতে কুরআন ইত্যাদি দ্বারা আদায় করা যায়।
বলুন ! মহান আল্লাহর হাবীব যে দিন এ ধরাধামে জন্ম নিলেন উহা হে আর উত্তম নিয়ামত এ জগতে আর কি আছে ? এরই উপর ভিত্তি করে সকলের উচিৎ হুযুরের জন্ম দিনে ঈদ উদযাপন করা। তাহলেই হযরত মূসা (আ:) এর আশুরার ঘটনার সাথে এর সামঞ্জস্যতা রক্ষা হবে। যারা বলে থাকে, হযরত রাসূল মাকবুল (সা.) প্রতি বৎসর মাহে রবিউল আউয়ালে নতুন করে জন্ম লাভ করে কি ? কেন এ জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে ? তদুত্তরে বলবো, তাহলে হযরত মূসা নবী বনী ইসরাঈল সহকারে প্রতি বৎসর মুহররম মাসে আশুরার দিন নীলনদ পার হন কি ? সুতরাং উহা উদযাপন করা যে রূপ সুন্নাত তদ্রূপ ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সুন্নাত। অতএব যারা মীলাদ অনুষ্ঠান না করে এ মাহে রবিউল আউয়ালে সিরাতুন্নবীর অনুষ্ঠান করতেছে তারা ভুল করতেছে। বিরাট ছওয়াব হতে নিজেরাও বঞ্চিত হচ্ছে অন্যকেও বঞ্চিত করতেছে। হে আল্লাহ তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং মীলাদুন্নবী উদযাপন করার তৌফিক দিন।
ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপনের ফজীলত:
ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনে এজাম এবং আওলিয়ায়ে কেরামের বাণী সমূহ: অনুবাদ: হুযুর আকরাম এর সহোদর চাচা আবু লাহাবকে তার দাসী ছোয়াইলা যখন হুযুর আকরাম (সা.) এর জন্মের সুসংবাদ জানালেন তৎক্ষণাৎ সে খুশীতে আত্মহারা হয়ে তাকে আযাদ করে দিলেন। কথিত আছে, উক্ত আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর তার পরিবারবর্গের কোন এক ব্যক্তি স্বপ্ন যোগে দেখে জিজ্ঞেস করল কেমন আছ ? সে উত্তরে বলল দোযখে পড়ে আছি, তবে সপ্তাহের সোমবার রাতে আমার শাস্তি হালকা করে দেয়া হয়। আঙ্গুলের মাথা দ্বারা সে ইশারা করে বলল, আমি এ দু’টি আঙ্গুলের মাঝে পানি চুষতে থাকি। উহার একমাত্র কারণ হলো, ছোয়াইবা দাসী আমাকে নবী পাকের জন্মের সুসংবাদ দেয়ায় এবং তঁাকে দুগ্ধ পান করানোর কারণে আযাদ করে দিয়েছিলাম। ইবনুল জাফরী বলেছেন, যে আবু লাহাব জাহান্নামী বলে কুরআন পাকে ঘোষিত, তাকে যখন মীলাদুন্নবীর খুশীতে দান করার কারণে দোযখ হতে প্রতি সোমবার নিস্তার দেয়া হয়, তাহলে যে মুসলমান মীলাদুন্নবীর ঈদ উদযাপন করেন ও তঁার মহব্বতে মাল দৌলত অর্থাৎ জনগণকে দান খয়রাত বা তাবারক প্রদান করেন তার প্রতি মহান আল্লাহর কি পরিমাণ অনুগ্রহ ও দয়া অবতীর্ণ হতে পারে, আপনারা উহা চিন্তা করুন। (হাবীউল ফাতাওয়া -১ / ২৬২ পৃ:)।
হযরত হাসান বছরী (র:) বলেছেন - অনুবাদ: যদি মহান আল্লাহ আমাকে অহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণের মালিক করতেন আমি উহা মীলাদুন্নবী উদযাপনে দান করে দিতাম।
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রহ:) এর বাণী - অনুবাদ: যে ব্যক্তি মীলাদ অনুষ্ঠানে হাজির হল ও উহার প্রতি সে অত্যাধিক সম্মান প্রদর্শন করল সে অবশ্যই ঈমানের দ্বারা সাফল্য মণ্ডিত হল।
তিনি আরো বর্ণনা করেছেন- অনুবাদ: যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী উপলক্ষে তাবারকের ব্যবস্থা করে, বন্ধু বান্ধবগণকে একত্রিত করে, আলোকসজ্জা করে নতুন কাপড় পরিধান করে এবং খুশবো ও আতর গোলাপ ছিটায় মহান আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রোজ কিয়ামতে সর্ব উচ্চ বেহেশতে নবীদের প্রথম দলে স্থান দেবেন।
ঈমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ:) বলেছেন - অনুবাদ: যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে নিমক বা আটা অথবা অন্য যে কোন খাদ্যের উপর ফুক দিবে ঐ খাদ্য ভক্ষণকারীর পেটে স্থির হবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দেন।
ঈমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ:) আরো বলেছেন - অনুবাদ: ঈমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ:) বলেছেন, যদি মীলাদুন্নবী (সা.) করে পানিতে ফুঁক দেয়া হয় অত:পর যে ব্যক্তি ঐ পানি থেকে পান করবে তার অন্তরে এক হাজার নূর ও রহমত প্রবেশ করবে এর এক হাজার হিংসা বিদ্বেষ বের হয়ে যাবে। আর ঐ অন্তর মরবেনা ঐ দিন যে দিন বহু লোকের অন্তর মরে যাবে। যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে কতক রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার উপর ফুঁক দিবে ঐ সব মুদ্রা তার অন্যান্য যে সব মুদ্রার সাথে মিলবে হযরত নবী পাক (সা.) এর নামের বরকতে ঐ সব মুদ্রায় বরকত হবে। আর ঐ ব্যক্তি কোন সময় অভাবী হবে না এবং তার হাত শুন্য হবে না ঐ নামের বরকতে।
হযরত সিররী সাকাতী (রহ:) বলেছেন - অনুবাদ: যে ব্যক্তি কোন মীলাদ মাহফিলে যোগ দান করার ইচ্ছা করল, সে যেন বেহেশতের বাগানে যাওয়ার ইচ্ছা করলো। কেননা, লোকটি হুযুরের মহব্বতের কারণেই ঐ মাহফিলে যোগদান করতে যাচ্ছে। হাদীস পাকে এসেছে- যে আমাকে ভালবাসবে সে আমার সহিত বেহেশতে থাকবে।
ঈমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ:) “আল অসায়িলু ফি শারহিশ শামায়িল “ গ্রন্থে বলেছেন - অনুবাদ: যে কোন গৃহে বা মসজিদে অথবা মহল্লাতে মীলাদ পাঠ করে আল্লাহ পাকের ফেরেশতা ঐ স্থানকে বেষ্টন করত: ঐ স্থানে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে তাদের জন্য ইসতেগফার করতে থাকে। মহান আল্লাহর রহমত ও রেজামন্দী ব্যাপক ভাবে তাদের উপর নাযিল হতে থাকে। আর যে সমস্ত ফেরেশতা নূর নিয়ে মজলিসে প্রদক্ষিণ করে অর্থাৎ জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইস্রাফীল, আজরাঈল (আ:) তঁারা ঐ মজলিসের আহ্বায়কদের জন্য দোয়া করতে থাকেন।
উক্ত গ্রন্থে আরো বর্ণিত আছে - অনুবাদ: যে কোন মুসলমান নিজ গৃহে মীলাদুন্নবী পাঠ করবে ঐ ঘর হতে মহান আল্লাহ অনটন, বালা - মুসীবত, অগ্নি জ্বলন, পানিতে নিমগ্ন, যাবতীয় মুছীবত ও হিংসা, হাসাদ, কু - দৃষ্টি, চোর - ডাকাত হতে মুক্ত রাখবেন। যখন সে মৃত্যুবরণ করবে মুনকার - নাকীর ফেরেশতার প্রশ্নোত্তর তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে এবং সে পরম সুখের বেহেশত বাসী হবে। নেয়’মাতুল কুবরা কিতাবের ১১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
মীলাদুন্নবীর মাহফিলে তাবারকের ব্যবস্থা করা অতিশয় ছওয়াবের কাজ ও নবী প্রেমের পরিচয় :
প্রকাশ থাকে যে, আল্লামা ইবনে হাজার হাইছামী, ইমাম আবু সামা, আল্লামা সাখাবী ও আল্লামা ইবনুল জওয়ী যেসব মন্তব্য করেছেন উহা সকলের অবগতির জন্য মূল আরবী এবারতের অনুবাদ নিম্নে পেশ করা গেল। সীরাতে হালাবীয়া ১ / খন্ড ৮৪ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে - অনুবাদ: ইবনে হাজার হাইছামী বলেছেন, বিদয়াতে হাসানার প্রতি আমল করা সর্বসম্মতিক্রমে মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়েছে। সেমতে দলবদ্ধ ভাবে মীলাদ অনুষ্ঠান আহুত করা মুস্তাহাব।
ইমাম নববীর ওস্তাদ শায়খ আবু শামা বলেছেন, প্রতি বছর বারই রবিউল আউয়াল নুরনবীর জন্ম দিবসে এতদঞ্চলে সদকা খায়রাত সহকারে জঁাক - জমক পূর্ণ যে উৎসাহদায়ক মাহফিল অনুষ্ঠিত হতে চলছে উহা বিদয়াতে হাসানা বা উত্তম বিদয়াত।
উক্ত মাহফিলে ফকীর - মিসকীনকে দান - খয়রাত দেয়া হয়, যার ফলে মাহফিল আয়োজনকারীর মনে নূরনবীর মহব্বত ও তা’লীম বিরাজ করছে।
ইবনুল জওযী বলেছেন, মীলাদ মাহফিলের বিশেষত্বের মধ্যে একটি বিশেষত্ব হলো যে, একবার মীলাদ মাহফিল যে স্থানে অনুষ্ঠিত হয় উহা এক বৎসরকাল যাবতীয় বালা - মুছীবত হতে নিরাপদ থাকে এবং মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে আমরা সকলেই মনে প্রাণে ভালোবাসি। নবিজী (সা.) এর জন্মদিন উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) পালন করা ভালোবাসারই বহি:প্রকাশ।
রবিউল আউয়াল মাসের তুলনায় এত বেশি নবী (সা.) এর জীবনী পাঠ, জীবনী আলোচনা, সুন্নাহ ভিত্তিক আলোচনা, নবী (সা.) এর আদর্শ প্রচার, আর কোন মাসে হয়না।
বিভিন্ন ব্যাক্তিদের জন্ম মৃত্যুতে তাদের স্মরণ করার উদ্দেশ্য হলো তাদের আদর্শ প্রচার করা।
তাই আমরাও সবাই সবার অবস্হান থেকে নবিজী (সা.) এর জীবনী /আদর্শ প্রচার করে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, র্যালী করি।
অনেকে আবার ঈদে মিলাদুন্নাব(সা.) এর বিরোধীতা করতে গিয়ে নবিজীর জন্মের বিষয় নেগেটিব ভাবে আলোচনা করে থাকে। তাদেরকে সাবধান করছি, নবিজী (সা.) মুমিনের ঈমান। ঈমানে আঘাত দিয়ে কথা বলা যাবে না।
প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা,কলেজ হাসপাতাল,স্কুল কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়। সংসদ, মন্ত্রী পরিষদ, সরকারী বে-সরকারী সহ সকল প্রতিষ্ঠানে মিলাদুন্নাবী (সা.) পালন করে নবীজির আদর্শ সর্বত্র ছড়িয়ে দিন।
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে হজ্জে বাইতুল্লাহ, জিয়ারতে মাদীনা,প্রিয় নবিজীর জিয়ারত ও হাশর ময়দানে নবিজীর সাথে হাশর করিয়ে নবিজীর শাফায়াতে জান্নাত নসীব করুক।আমিন।
লেখক : সদস্য, সাহিত্য একাডেমি, চঁাদপুর।
ছবি-২১
ইসলামে নারীর ভূমিকা ও আধুনিক যুগে তাদের করণীয়
ইসলাম এমন এক ব্যবস্থা, যা নারীকে প্রকৃত মর্যাদা ও নিরাপত্তা দিয়েছে। কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নারী পুরুষ উভয়ই আল্লাহর বান্দা, উভয়ের দায়িত্ব আল্লাহর ইবাদত করা এবং তঁার সন্তুষ্টি অর্জন করা। নারীকে কখনোই হীন বা দুর্বল সত্তা হিসেবে গণ্য করা হয়নি; বরং মা, কন্যা ও স্ত্রী— প্রতিটি অবস্থানে ইসলাম তাদের অনন্য সম্মান প্রদান করেছে।
মা হিসেবে নারীর মর্যাদা সর্বোচ্চ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “জান্নাত মায়ের পদতলে।” অর্থাৎ, মায়ের সেবা ও সন্তুষ্টির মাধ্যমেই জান্নাতের রাস্তা খুলে যায়। কন্যা হিসেবে ইসলাম নারীর জন্য দয়া, রহমত ও কল্যাণের ঘোষণা দিয়েছে। আর স্ত্রী হিসেবে নারীকে পরিবারের প্রশান্তি, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার উৎস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে: “আর তঁার নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।”
শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে। নবী ﷺ এর অসংখ্য মহিলা সাহাবিয়া হাদিস, ফিকহ, চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আজকের দিনে যখন শিক্ষার নামে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, তখন মুসলিম নারীর উচিত ইসলাম প্রদত্ত জ্ঞান ও আধুনিক কল্যাণমূলক বিদ্যা উভয়ই অর্জন করা, যাতে সে পরিবার ও সমাজকে আলো দিতে পারে।
নারীর প্রধান ভূমিকা পরিবারকে ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলা। সন্তানদের সঠিক লালন-পালন, নৈতিকতা শেখানো এবং ঈমানী পরিবেশ সৃষ্টি করা নারীর প্রথম দায়িত্ব। তবে ইসলাম নারীদের কেবল ঘরের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ রাখেনি। চিকিৎসা, শিক্ষা, সমাজসেবা ও কল্যাণমূলক কাজে তারা অংশগ্রহণ করতে পারে, যদি তা ইসলামী শালীনতা ও পর্দার মধ্যে হয়। এভাবেই নারী সমাজে কল্যাণ ছড়িয়ে দিতে পারে।
আধুনিক যুগে নারীর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজকের বিশ্বে অনেক নারী অন্ধভাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করে নিজেদের মর্যাদা হারাচ্ছে। অথচ ইসলাম নারীকে প্রকৃত সম্মান দিয়েছে, তাকে ভোগ্যপণ্য বানায়নি। তাই আধুনিক যুগের নারীর উচিত— ইসলামের আলোকে নিজেদের গড়ে তোলা, চরিত্র ও ব্যক্তিত্বকে দৃঢ় করা এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হওয়া। সামাজিক মাধ্যমে কিংবা জনজীবনে নারীরা যদি ইসলামের পরিচ্ছন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, তবে আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে আনা সম্ভব হবে।
সত্যিকার অর্থে নারী হলো সমাজের অর্ধেক, আর অপর অর্ধেক তার হাতে লালিত হয়। তাই একজন নারীর চরিত্র মানেই একটি জাতির চরিত্র। ইসলাম নারীকে যে সম্মান দিয়েছে, তা পৃথিবীর আর কোনো ব্যবস্থা দিতে পারেনি। সুতরাং আজকের যুগের নারীদের উচিত— নিজের ঈমান ও আমলকে মজবুত করা, জ্ঞানার্জনে অগ্রসর হওয়া, সমাজে সৎকর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এবং সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টিকে জীবনের মূল লক্ষ্য বানানো।
মোঃ ইউসুফ হোসাইন, আল-আজহার ইউনিভার্সিটি, কায়রো,মিশর।
ছবি-২২
ক্ষমা, উদারতা ও আরবদের যুদ্ধ বন্ধে রাসূল (সা.)-এর অনন্য উদ্যোগ
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত লাভের আগে থেকেই আরবের অস্থিতিশীল পরিবেশে শান্তি, ভারসাম্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। ভালোবাসার সমাজ নির্মাণে তিনি অন্যকে ক্ষমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বারবার। নবুয়ত প্রাপ্তির আগেই ‘হিলফুল ফুযুল’ কল্যাণ সংস্থা গঠন করে মানবতাকে ফিজার যুদ্ধ পরবর্তী ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন তিনি। তার অনন্য এই গুণের বর্ণনা আম্মাজান খাদিজা (রা.) বর্ণনা করেছেন এভাবে, আল্লাহ কখনোই আপনাকে লাঞ্চিত করবেন না। আপনি তো সম্পর্ক রক্ষাকারী, দুর্বলের বোঝা বহনকারী, অসহায়ের ত্রাতা, অতিথির সেবাকারী এবং মানুষের বিপদের আশ্রয়স্থল।
নির্মম নিপীড়নের পরেও তায়েফবাসীকে ক্ষমা এবং দাউস গোত্রের লোকদের জন্য হেদায়াতের দোয়া করা রহমতের নবী ক্ষমা দিয়ে, দয়া দিয়ে মানুষের হৃদয়ে এমনই আসন জয় করে নিয়েছিলেন যে, বদরে, উহুদে, হুদায়বিয়াতে সাহাবাদের আত্মোৎসর্গের হাজারো ঘটনা পৃথিবীবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
‘আপনার নির্দেশ পালনে আমরা সমুদ্রে ঝঁাপিয়ে পড়তেও সামান্য দ্বিধা করব না’— ইতিহাসের কিতাবগুলোতে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত সা'দ ইবনে উবাদাহ রা.-এর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি আত্মোৎসর্গের অতি ক্ষুদ্র একটি উদাহরণ।
আরবের গোত্রগুলোতে শতাব্দীকাল ধরে চলা ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের অবসান করতে আলোর নবী রহমাতুল লিল আলামীন মানুষের মাঝে ভালবাসার এমনই প্রাণ সঞ্চার করেছেন যে, কোরআন সে ঘটনাকে এভাবে স্মরণ করছে, েেতোমরা ছিলে এমনই শতধা বিভক্ত যে, ধ্বংসের কিনারে পেঁৗছে গিয়েছিল। কিন্তু পরস্পরে ভ্রাতৃত্ব গড়ে দিয়ে তিনি তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন।
যাতুর রিকার যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে খুনের নেশায় মত্ত দুসুর নামের এক বেদুঈনের চরম ধৃষ্টতার জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম ক্ষমার যে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন ইতিহাস তা এভাবে স্মরণ করে, রাসূল যুদ্ধ সফরে দীর্ঘ পথচলার ক্লান্তি এবং অবসাদ ঘোচাতে ছায়া মতন একটি জায়গায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অদূরে কঁাটাদার একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন খাপবদ্ধ তরবারি। এক বেদুঈন-লোকমুখে নিন্দামন্দ শুনে যে নবীজীর প্রতি বিদ্বেষী হয়ে উঠেছে- রাসূলকে নিরুদ্বেগ ঘুমন্ত দেখে বদ-মতলব চরিতার্থ করার মোক্ষম সুযোগ মনে করল।
কোষমুক্ত তরবারি হাতে আক্রমণ উদ্ধত হয়ে বুদ্ধু লোকটি রাসূলকে চ্যালেঞ্জ ছূড়ে দিল, আসো মুহাম্মদ এবার, দেখি, আমার হাত থেকে কে বঁাচায় তোমায়? রাসূল নিরুত্তাপ। সামান্য ভয়হীন, দরাজ গম্ভীর কণ্ঠে তিনি জবাব দিলেন, কেন? আল্লাহ বঁাচাবেন।
খাপমুক্ত তরবারির সামনে অস্ত্রবিহীন এক ব্যক্তিকে নিরুদ্বেগ দঁাড়িয়ে আছে দেখে বেদুঈন ভড়কে গেল। হতাশা এবং ভীতি বিহ্বলতায় তার হাত থেকে তরবারি খসে পড়ে গেল। এবার রাসূল তরবারি উচিয়ে বললেন, বল দেখি, এবার তোমাকে কে বঁাচায়? হত্যা করতে এসে বিধ্বস্ত, ধরাশয়ী বুদ্ধু ব্যক্তি নিরুত্তর। তবে রাসূল তাকে ছেড়ে দিলেন। দৃষ্টতার চূড়ান্ত করা সত্ত্বেও দয়ার নবী বেদুঈনকে ক্ষমা করে দিলেন।
ইতিহাস আমাদেরকে আরও জানায়, রাসূলের দয়া, ক্ষমা এবং মহানুভবতা দেখে দুসুর পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
মদীনার পার্শ্ববর্তী ইয়ামার বিশিষ্ট ব্যক্তি সুমামার ইসলাম গ্রহণ পরবর্তী অভিব্যক্তিও সিরাতের কিতাবগুলোতে বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়।
হে আল্লাহর রাসূল, ইসলাম গ্রহণের আগে ‘মুহাম্মদ’ নামের চেয়ে ঘৃণিত কিছু আমার কাছে ছিল না। কিন্তু -আমার সমগ্র সত্ত্বা উৎসর্গিত হোক- ইসলাম গ্রহণের পরে আপনার নামের চেয়ে মধুর কিংবা আপনার শহরের চেয়ে প্রিয় কিছু এখন আর আমার কাছে নেই। অবশ্য রাসূলের সদাচারের আরও উত্তম নমুনাটি ইতিহাস আমাদেরকে জানাচ্ছে পরবর্তী ঘটনাবলী থেকে।
এককালে শিবে আবি তালিবে রাসূল এবং তার অনুসারীদের বয়কট করে খাদ্যকষ্টে নিপতিত করা পাষাণ প্রাণ কোরায়েশদের থেকে কঠিন প্রতিশোধের হুমকি দিলেন ইয়ামামার গোত্রপতি সুমামাহ বিন আসলাব। রাসূলের অনুমতি ছাড়া ইয়ামামাহ হয়ে একটি খাদ্যকণা বা শস্যদানাও মক্কায় প্রবেশ করবে না বলে হুশিয়ারি জারি করলেন ইসলামে নব দীক্ষাত সুমামাহ। তবে রাসূলের কাছে এ খবর পেঁৗছুলে তিনি চিন্তিত এবং দয়াপরবশ হয়ে পড়েন। 'রাহমাতুল লিল আলামীন' যার উপাধি, তিনি তো প্রতিশোধপরায়ন হতে পারেন না। এটা তো তার খুলুকে আযিম ভূষণকে কলঙ্কিত করবে।
সুমামাহকে পত্র লেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তড়িৎ নির্দেশ দিলেন, এ কাজ করতে যেও না সুমামাহ। অবরোধ উঠিয়ে নাও। এরা তো আল্লাহর বান্দা। কাউকে খাদ্যভাবে রাখা শোভন কিছু নয়।
সদাচারের সর্বোত্তম দৃষ্টান্তটি স্থাপিত হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ মক্কা বিজয়ের গৌরব অর্জন করার দিন।
‘আজ চূড়ান্তু যুদ্ধের দিন। আজ শত্রুদের দখল থেকে কাবাকে অবমুক্ত করার দিন'-এক আনসারি সাহাবির জবানে এমন ঝঁাঝালো, কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হতে শুনে কোমল প্রাণ, দয়ার নবী ছোট্ট একটি সংশোধন এনে বললেন,
‘আজ দয়া ও ভালবাসার দিন। আজ কুরায়শের সম্মানিত হওয়ার দিন’।
মুক্তির বার্তাবাহক দয়ার নবীকে জন্মভূমিতে থাকতে না দেওয়া পাষাণ দিল কাফেরের দলকে কাবা ঘরের সামনে জড়সড় কম্পিত দণ্ডয়মান দেখে নবীজীর হৃদয়ে ক্ষমা এবং মায়ার জোয়ার উঠল।
আত্মম্ভরিতা এবং শয়তানের প্ররোচনায় এক সময় সত্য দ্বীনের বিরুদ্ধবাদীদের কোমল সম্ভাষণে জিজ্ঞেস করলেন, হে কোরায়শ, তোমাদের কী আশা, আজকের দিনে তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করা হবে?
উপস্থিত জনতা মধুবর্ষণে বিমুগ্ধ হয়ে উত্তরে জানালো- আমরা তো ভালো কিছুরই আশা করি। আপনার ব্যক্তিত্ব সম্ভ্রান্ত। আপনি তো সম্মানিত ভাই এবং কূলীন ঘরের সন্তান।
অতঃপর রহমাতুল লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজ আমি তাই বলব, ইউসুফ আলাইহিস সালাম যা তার ভাইদের বলেছিলেন, ‘আজকের দিনে তোমাদের প্রতি কোনো অনুযোগ নেই। যাও তোমরা সবাই মুক্ত’।
এর আগেই মক্কায় প্রবেশের সময়ই ঘোষণা করা হয়েছিল, আবু সুফিয়ানের ঘরে যে আশ্রয় নিবে সে নিরাপদ। যে নিজ ঘরে আশ্রয় নিবে তাকেও কিছু করা হবে। হারামে আশ্রয়গহণকারীদেরও দেওয়া হবে পূর্ণ নিরাপত্তা।
এছাড়াও ইকরিমা, হিনদা, ওয়াহশিসহ অল্প যে কয়জনের ব্যাপারে ঘোষণা করা হয়েছিল- তাদের ক্ষমা নাই- তাদেরও সবাই প্রায় ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করেছিলেন।
তবে রাসূল কেবল স্থানের জয় করেননি। জগতের জন্য রহমত হিসেবে যাকে পাঠানো হয়েছে আলোর নবী মুহাম্মাদ রাসূল দয়া, মমতা এবং সম্ভমতা দিয়ে সমস্ত মানুষের হৃদয় জয় করলেন।
মক্কা বিজয়ের দিন এক ব্যক্তি কোনো একটা বিষয় নিয়ে নবীজীর সাথে কথা বলতে এসে ভয়ে কঁাপছিল দেখে রাসূল বললেন, কী হলো তোমার! ভয় কিসের? আমি কি কোনো বাদশাহ? আমি তো কুরায়শের এক সাধারণ মায়েরই সন্তান!
এটা ছিল সেই ব্যক্তির উত্তর; নানামুখী অত্যাচারের শিকার হয়ে যিনি একদিন প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিল।