প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬
জনপ্রতিনিধির বাড়িতে যখন মাদক!

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা চৌরাস্তা সংলগ্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৯শ’ পিচ ইয়াবা ও নগদ টাকা সহকারে ইউপি সদস্যের স্ত্রীসহ মাদক কারবারি ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. বাহার মিয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। সোমবার ভোর ৫টায় হানারচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাশার দর্জির বাড়িতে এ অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবাসহ তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো : চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বাশার দর্জির স্ত্রী শাহিনা বেগম (৪০) ও একই এলাকার নুরু গাজীর ছেলে মো. মোস্তফা গাজী (৩০)।
পুলিশ জানায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাশার দর্জির বাড়িতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. বাহার মিয়ার নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে ইউপি সদস্য বাশার দর্জি, তার ভাই ছলেমান দর্জি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেলেও স্ত্রী শাহিনা ও সহযোগী মোস্তফা গাজীকে আটক করা হয়। এ সময় ১৯টা জামের আকৃতির কালো স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ইয়াবা ও নগদ অর্থ জব্দ করে পুলিশ। পরে আটককৃতদের থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মিন্টু দত্ত, এসআই মোখলেছুর রহমানসহ সঙ্গীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. বাহার মিয়া জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া থানা পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে বড়ো ধরনের সাফল্য খুব কমই পাচ্ছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুরে পুলিশকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। তারা এককভাবে মাদকবিরোধী কার্যক্রমে যেমন সাফল্য পাচ্ছে, তেমনি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলার তদন্তেও সাফল্য পাচ্ছে। তার মধ্যে সোমবার ভোরে ৯৫০ পিচ ইয়াবা সহ ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে সহযোগী মাদক ব্যবসায়ীসহ ধরতে পারাটা উল্লেখযোগ্য। এতে মাদক বিস্তারের ভয়াল রূপটাই ফুটে উঠেছে। তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য তথা মেম্বার। সেই মেম্বারই যদি সপরিবারে মাদক ব্যবসায় জড়ায়, তাহলে মাদকের ভয়াল রূপটা কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, সেটা আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না কারো। মাদক এখন অপ্রতিহত গতিতেই তার বিস্তার ঘটিয়ে চলছে। কেননা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো চেতনা ও শক্তি সাধারণ্যে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ধৃত মাদক ব্যবসায়ীরা আইনের ফাঁকফোকরে বারবার ছাড় পেয়ে দৌরাত্ম্য প্রদর্শনের কারণে। এমন দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই জীবনের ঝুঁকি নেয়া। এমন ঝুঁকি নেয়া লোকের সংখ্যা ক্রমশ শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। মাদকবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করতে যেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ইউপি মেম্বার/চেয়ারম্যান কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এগিয়ে আসবেন, সেখানে তারাই যদি মাদকের সাথে জড়িয়ে যান, তাহলে প্রতিবাদী কার্যক্রম তো মুখ থুবড়ে পড়েই। আমাদের দেশে বিদ্যমান মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে এর কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মাদকের কারণে ধরা পড়া লোকজনের জামিন না দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং মাদকবিরোধী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করার মধ্যেই মাদকের সর্বগ্রাসী থাবাকে প্রতিহত করার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া অন্য কিছু আছে বলে আমাদের জানা নেই।