শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ১২:৪১

নারীশিক্ষার অনন্য দৃষ্টান্ত প্রিন্সেস নূরা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি মূল্যবোধে

মোহাম্মদ সানাউল হক
নারীশিক্ষার অনন্য দৃষ্টান্ত প্রিন্সেস নূরা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি মূল্যবোধে

একটা সময় ছিল, যখন মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল সমাজে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষা অনেকটাই সীমিত ছিল। পারিবারিক ও সামাজিক নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে থাকা নারীরা শিক্ষার আলোর দেখা ক্ষেত্রবিশেষে পাওয়ার সুযোগ পেত না বললেই চলে। তবে সেই কঠিন সামাজিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে এক সাহসী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব সরকার।

নানা জল্পনা-কল্পনা, বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সৌদি আরবের প্রথম নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—মহিলা শিক্ষা কলেজ। এটি ছিল কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং নারীদের আত্মপরিচয়, ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক ভিত্তিপ্রস্তর।

এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের নারী শিক্ষা এক নতুন দিগন্তের দিকে যাত্রা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান বিকশিত হতে হতে পরিণত হয় এক বিস্তৃত শিক্ষাব্যবস্থায়। আর সেই ধারা ধরে রেখেই এই কলেজেরই আধুনিক রূপ আজকের প্রিন্সেস নূরা বিনত আবদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়—যেটি বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ নারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত।

এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সৌদি নারীদের জন্য নয়, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বের নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বৃহত্তম নারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত এই প্রতিষ্ঠানটি আধুনিকতা, প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব স্থাপত্যশৈলীর চমৎকার সমন্বয়ে গঠিত। বিশাল আয়তনের এই ক্যাম্পাসে রয়েছে নারী শিক্ষার জন্য উপযোগী সর্বাধুনিক অবকাঠামো। ইসলামি মূল্যবোধের অবিচল ভিত্তির ওপর দঁাড়িয়ে প্রিন্সেস নূরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রমাণ করেছে, নারীরাও উচ্চশিক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারে – মর্যাদা ও আত্মমর্যাদা বজায় রেখেই।

মহিলা শিক্ষা কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম ২৫ বছরেই সৌদি আরবজুড়ে ৭২টি শহরের অলি-গলিতে গড়ে ওঠে ১০২টি মহিলা কলেজ। যেখানে অধ্যয়ন করতেন প্রায় ৬০,০০০ ছাত্রী। শুধুমাত্র রাজধানী রিয়াদেই ছিল ছয়টি কলেজ, যা পরিচালিত হতো শিক্ষা, সমাজসেবা, বিজ্ঞান, কলা ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে।

সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে নারীশিক্ষার প্রসারে স্পষ্ট নীতিগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যার ফলাফল ২০০৪ সালে রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত সকল মহিলা কলেজকে একীভূত করে পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের সিদ্ধান্ত।

২০০৮ সালে সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ ও দুই পবিত্র মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক, বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ, এক যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে এই নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নামকরণ করেন—প্রিন্সেস নূরা বিনত আবদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের সর্ববৃহৎ নারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা সৌদি আরবসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাইলফলক।

প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ ছিল তঁার বোন প্রিন্সেস নূরার প্রতি সম্মান জানিয়ে, যিনি ছিলেন সৌদি আরবের প্রথম রাজা আবদুল আজিজের সহোদরা। ‘নূরা’ শব্দটি আরবিতে ‘আলো’র প্রতীক—যা নারীশিক্ষায় আলোর নতুন দিগন্তের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। সেসময়কার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেক্টর নিযুক্ত হন প্রিন্সেস আল জাওহারা বিনত ফাহাদ আল সৌদ।

প্রিন্সেস নূরা বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্মাণ সম্পন্ন হয় মাত্র দুই বছরে, যেখানে কাজ করেন ৭৫,০০০ নির্মাণ শ্রমিক। এটি বর্তমানে ১৩ মিলিয়ন বর্গমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এখানে একসঙ্গে অধ্যয়ন করতে পারে ৬০,০০০ জন ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে রয়েছে: ৬০০ স্মার্ট বিল্ডিং, আধুনিক ছাত্রাবাস, গবেষণা কেন্দ্র ও গ্রন্থাগার,বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ছাত্র সহায়তা কেন্দ্র, স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও ইনডোর অ্যাকটিভিটি হোল, স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রি-স্কুল থেকে হাই স্কুল), স্বয়ংক্রিয় মেট্রো রেল সিস্টেম, যা নির্মাণ করেছে (ঐরঃধপযর জধরষ ওঃধষু) ও আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নারী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় রয়েছে উন্নতমানের রিক্রিয়েশন সুবিধা। অলিম্পিক মাপের সুইমিং পুল, এছাড়াও রয়েছে বাস্কেটবল, ভলিবল, সাইক্লিং এবং অ্যারোবিকসের আলাদা হোল।

২০১৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো একটি অপেরা শো আয়োজন করে— “আন্তার ও আলবা”, যা পরিচালনা করে ঙঢ়বৎধ খবনধহড়হ। এটি ছিল সৌদি সংস্কৃতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি সৌদি আরবের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার উদ্দেশ্য ২০৩০ সালের মধ্যে নারীদের ক্রীড়া অংশগ্রহণ ৪০%-এ উন্নীত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্মাণে সর্বাধুনিক ও পরিবেশসম্মত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে: পানি পুনঃব্যবহার প্লান্ট, সৌর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৪০০০ বর্গমিটার সৌর প্যানেল, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬% হিটিং এবং ১৮% শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

এছাড়া, ৩৮টি ভবন খঊঊউ (খবধফবৎংযরঢ় রহ ঊহবৎমু ধহফ ঊহারৎড়হসবহঃধষ উবংরমহ) গ্রীন বিল্ডিং রেটিংয়ের জন্য মনোনীত হয়েছে এবং গ্রন্থাগারটি খঊঊউ এড়ষফ রেটিংয়ের জন্য আবেদন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষ করে এর সঙ্গে রয়েছে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব, যেমন: টহরাবৎংরঃু ড়ভ অঁপশষধহফ, (নিউজিল্যান্ড), টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঝড়ঁঃযবৎহ, (ডেনমার্ক), ঠধষবহপরধ ঈড়ষষবমব, (যুক্তরাষ্ট্র), জড়ঁবহ টহরাবৎংরঃু, (ফ্রান্স), ঊৎধংসঁং টহরাবৎংরঃু, (নেদারল্যান্ডস), গড়হধংয টহরাবৎংরঃু, (অস্ট্রেলিয়া), উঁনষরহ ঈরঃু টহরাবৎংরঃু, (আয়ারল্যান্ড)।

সূত্রে জানায়, প্রিন্সেস নূরা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সৌদি নারীদের জাগরণের প্রতীক। এটি প্রমাণ করে সুযোগ পেলে নারীরাও হতে পারে আধুনিক, সচেতন, দক্ষ এবং নেতৃত্বদানের সক্ষম। আজ প্রিন্সেস নূরা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে, ইসলামি মূল্যবোধের মধ্যে থেকেও নারীরা উচ্চশিক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারে— মর্যাদার সঙ্গে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।

মোহাম্মদ সানাউল হক, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রিয়াদ।

ংধহধঁষযধয়ঁব১৯৮০@মসধরষ.পড়স

ছবি-১৬

ইসলামের দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব

মো. তামিম সিফাতুল্লাহ

ভারসাম্যপূর্ণ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে বৃক্ষরোপণ তথা বনায়নের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বৃক্ষ শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়; বরং ধর্মীয় কারণেও মানুষের বৃক্ষরোপণ করা চাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের একাধিক বর্ণনায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যার উৎসাহ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

গবেষকদের গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মোট উদ্ভিদ প্রজাতির ভেতরে ২৫ শতাংশই বৃক্ষ। বৃক্ষ ছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য কল্পনা করা অবান্তর। সঙ্গত কারণেই ইসলাম পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণে জনসচেতনতা তৈরিতে উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়েছে।

কুরআনের বৃক্ষরাজি ও প্রকৃতি নিয়ে বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে ফলজ-বনজ ও সবুজ-শ্যামল বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেছেন। বনভূমির মাধ্যমে পৃথিবীকে সুশোভিত ও অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। গাছ-পালার মাধ্যমে ভূমণ্ডল ও পরিবেশ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণের শিক্ষা দিয়েছেন। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

১. ‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টিবর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি উদ্গত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।’ (সুরা কাফ : আয়াত ৭-৯)

২. ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পেঁৗছান, তখন তারা আনন্দিত হয়। (সুরা রুম : আয়াত ৪৮)

৩. পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কিছু দৃশ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। যেন মানুষ প্রাকৃতিক বিচিত্র, প্রকারভেদ, বর্ণ, গন্ধ ও সৌন্দর্য দেখে পুলকিত ও অভিভূত হয়। সব কিছুর উন্নতি, অগ্রগতি ও সক্রিয়তা দেখে মানুষ আল্লাহর শক্তিমত্তার কথা স্মরণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘তিনি তোমাদের জন্য তা (পানি) দিয়ে জন্মান শস্য, জাইতুন, খেজুরগাছ, আঙুর ও সব ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১১)

৪. বৃক্ষরাজি যে কত বড় নিয়ামত, পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতের মাধ্যমে তা প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদি পশু এবং তারা নিজেরা আহার গ্রহণ করে।’ (সুরা সাজদা : আয়াত ২৭)

একটি বৃক্ষের অর্থনৈতিক মূল্য কত?

গাছবিহীন পৃথিবী এক মুহূর্তও অসম্ভব। মানুষের যাপিত জীবনের সব কিছুই গাছকে ঘিরে ও গাছকে নিয়ে। তাই গাছ নিধন হলে গাছ শুধু একাই মরে না। মানুষসহ প্রায় সব প্রাণসত্তার জন্যই তা ঝুঁকি ও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দঁাড়ায়। একটি পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষ বছরে যে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে, তা কমপক্ষে ১০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের বার্ষিক অক্সিজেনের চাহিদা মেটায়। (সুবহানাল্লাহ!)

ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টি এম দাস ১৯৭৯ সালে পূর্ণবয়স্ক একটি বৃক্ষের অবদান আর্থিক মূল্যে বিবেচনা করে দেখান যে ৫০ বছর বয়সী একটি বৃক্ষের অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় এক লাখ ৮৮ হাজার মার্কিন ডলার। (ইন্ডিয়ান বায়োলজিস্ট, ভলিয়ম-১১, সংখ্যা-১-২)

বৃক্ষরোপণে ব্যাপারে হাদিসের উৎসাহ ও নির্দেশনা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষরোপন ও বনায়নের উৎসাহ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি গাছের পরিচর্যা সম্র্পকেও একাধিক হাদিসে সুস্পষ্ট প্রতিদান পাওয়া কথা ঘোষণা করেছেন।

১. হাদিসে পাকে এসেছে, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকা (দান) স্বরূপ গণ্য হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

২. এ হাদিসটি আরও স্পষ্ট করে অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলদার হওয়া পর্যন্ত তার পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা নষ্ট হয়, তার বিনিময়েও আল্লাহ তাআলা তাকে সাদকার নেকি দেবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৩. অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিদান দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৫৬৭)

৪. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করতে নির্দেশ দিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, মুসনাদে আহমাদ)

৫. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত এসে গেছে, এমন অবস্থায় তোমাদের কারো হাতে যদি ছোট একটি খেজুর গাছও থাকে, তাহলে সে যেন গাছটি রোপণ করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, আল-আদাবুল মুফরাদ, মুসনাদে বাজ্জার)

বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটার পরিণাম

প্রয়োজন ছাড়া গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন বিশ্বনবি। বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটলে শাস্তির কথা এসেছে হাদিসে-

‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে (যে গাছ মানুষের উপকার করতো), আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (বায়হাকি)

গাছের ছায়ায় বিশ্বনবির অবস্থান

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘মক্কা এবং মদিনার মাঝে অবস্থিত একটি বৃক্ষের কাছে যখন তিনি আসতেন তখন তার নিচে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন। তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতেন।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)

গাছ-বৃক্ষ প্রকৃতি ও পরিবেশের ‘বন্ধু’। তাই নির্বিচারে গাছ না কেটে প্রচুর বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়