শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ১০:২১

কোরবানির ঈদ ত্যাগের মহিমায় মহান এক উৎসব

কবির হোসেন মিজি
কোরবানির ঈদ ত্যাগের মহিমায় মহান এক উৎসব

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি

ঈদ মানেই ভেদাভেদ ভুলে দুঃখ সুখে হাসি...!

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল আযহা, অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। তবে এই ঈদ শুধু উৎসব নয়, এ এক ত্যাগের মহোৎসব। এখানে উৎসবের আনন্দ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আত্মশুদ্ধির সুযোগ, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশের বিরল মুহূর্ত। ঈদুল আজহা আমাদের শিখিয়ে দেয়, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাহে কোরবানি করে কিভাবে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয়।

কোরবানির ইতিহাস কোরবানির ইতিহাস জানতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হয়, হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সেই বিস্ময়কর ঘটনার কাছে। যেখানে এক পিতা আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করতে প্রস্তুত হন। আর এক পুত্র অবলীলায় নিজেকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিতে সম্মত হন। এই মহান ত্যাগের দৃষ্টান্ত আজও আমাদের ঈমানের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার প্রতীক হয়ে রয়েছে। আল্লাহ তাঁদের পরীক্ষাকে কবুল করে পুত্র ইসমাইলের স্থলে জান্নাত থেকে পাঠিয়ে দেন একটি পশু। সেই থেকেই শুরু হয় কোরবানির ঐতিহাসিক অনুশীলন।

ঈদুল আজহার তাৎপর্য এই ঈদ শুধু পশু জবাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কোরবানির প্রকৃত মর্ম হচ্ছে আত্মত্যাগ, লোভ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা এবং মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে নিজের প্রিয় জিনিস বিলিয়ে দেওয়ার মনোভাব গড়ে তোলা। এটি আমাদের ভোগবাদী মনোভাব থেকে দূরে রাখে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ উৎসবের মাধ্যমে।

সামাজিক সংহতির প্রতীক কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে আত্মীয়-স্বজন, দরিদ্র-অসহায় এবং নিজের পরিবারের মধ্যে বণ্টনের যে প্রথা, তা নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়Ñএটি এক গভীর সামাজিক বার্তা বহন করে। এই ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে সমাজে ধনী-গরিব বৈষম্য কমে, সৃষ্টি হয় সৌহার্দ্য ও সহানুভূতির এক বন্ধন।

শহর ও গ্রামের ঈদÑদুই রকম অনুভব

গ্রামবাংলার ঈদ যেন আরও নিবিড়, আপন, আর আবেগময়। এখানকার মানুষরা অনেক আগে থেকেই ঈদের জন্য কোরবানির পশু লালন-পালন শুরু করেন। প্রতিটি পশুর সঙ্গে গড়ে ওঠে এক আত্মিক সম্পর্ক। ঈদের দিন সেই প্রিয় পশুকে কোরবানি করতে গিয়ে অনেকেই চোখের জল সংযত করতে পারেন না।

অন্যদিকে শহরের মানুষ সাধারণত পশু ক্রয় করে হাট থেকে। প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ায় অনলাইন কোরবানিও জনপ্রিয় হচ্ছে। শহরের ঈদ হয়তো কিছুটা কাঠামোগত এবং ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু অনুভবের জায়গায় তা ততটাই গভীর।

পরিবেশ সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা

এ উৎসবে আমাদের মনে রাখতে হবে, কোরবানি শুধুমাত্র ইবাদতের অংশ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্বও। কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা দেখানো আবশ্যক। নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, বর্জ্য অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণÑএসবই একটি সুশৃঙ্খল ও মানবিক সমাজ গঠনে সহায়ক।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ এলাকার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। কারণ, ধর্মীয় আচার পালন করতে গিয়ে যদি অন্যের কষ্টের কারণ হয়, তবে সেটি আর ইবাদত থাকে না।

এই ঈদের শিক্ষা

কোরবানির ঈদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃত ত্যাগই মানুষের আসল পরিচয়। মানুষের ভালোবাসা অর্জনের পথ শুরু হয় নিজের লোভ-হিংসা-অহংকারকে কোরবানি করার মাধ্যমে,। সমাজের দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই ঈমানের পরিপূর্ণতা। ঈদের নতুন পোশাক, সুস্বাদু খাবার, বা সামাজিক আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে নয়Ñবরং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রিয় জিনিসটি কোরবানি করাই হলো এই ঈদের মূল শিক্ষণীয় বার্তা।

আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল পশু নয়, নিজেদের অহংকার, হিংসা, লোভ, হানাহানি আর বিদ্বেষকেও কোরবানি করি। তবেই কোরবানির ঈদ হবে সত্যিকারের আত্মশুদ্ধির উৎসব। সকলকে পবিত্র ঈদ-উল আযহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

লেখক পরিচিতি : সংবাদকর্মী, গীতিকার ও লেখক, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়