বৃহস্পতিবার, ০৮ মে, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২২, ১৩:৪৮

অতিরিক্ত ডিআইজি হলেন চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার

রাসেল হাসান
অতিরিক্ত ডিআইজি হলেন চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার

২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শামসুন্নাহার পিপিএম (বার) অতিরিক্ত উপ পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্য হিসেবে লিয়েনে ইতালীতে অবস্থান করছেন। ৩১ মে (মঙ্গলবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ থেকে এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আরো দু'জন পুলিশ কর্মকর্তাকে একই পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। তারা হলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার হাসান মোঃ শওকত আলী। যিনি বর্তমানে সসুদান মিশনে কর্মরত ও পুলিশ অধিদপ্তরের সহকারি পুলিশ মহাপরিদর্শক বেগম সহেলী ফেরদাউস পিপিএম -সেবা। যিনি বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে অবস্থান করছেন।

চাঁদপুরে প্রায় আড়াই বছরে সাড়া জাগানো এই পুলিশ সুপার সাধারণ মানুষের মন এতটাই জয় করেছেন যে আজও চাঁদপুরের মানুষের মুখে মুখে শামসুন্নাহারের নাম উচ্চারিত হয়। প্রতিজন সাহসী নারী পুলিশ সুপারের মধ্যে মানুষ একজন শামসুন্নাহারকে খুঁজে পান।

বাংলাদেশ পুলিশে তাঁর অর্জন অনেক। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পরপর দু’বার দেশের প্রথম নারী হিসেবে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাস তৈরি করেন। মেট্টোপলিটন পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ, ও র্যাবসহ ১৩ টি দলের সহস্রাধিক সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনে সাত বার জাতিসংঘ শান্তি পপদক (২০০৯ -২০১৪), নিজ দেশে দায়িত্বপালনে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (২০১৮), সাহসী নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নারী পুলিশ পদক (২০১৮) ও দুই বার আইজি ব্যাজ প্রাপ্ত হন। নিউজিল্যান্ডের সুপরিচিত সাময়িকী দ্য ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনে শামসুন্নাহারকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে তাকে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও রুচিশীল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

চাঁদপুরে থাকাকালীন এই নারী পুলিশ সসুপার নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে তাঁর কার্যালয়ে তিনি নারী সেল গঠন করেন। এতে প্রতিনিয়ত বিচারপ্রার্থীরা এসে ভিড় করে এবং মামলাবিহীন পারিবারিক কলহসহ নারী ও শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে মীমাংসা করেন।

শামসুন্নাহার ফরিদপুরের সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নে ১৯৭৩ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শামসুল হক ভোলা মাস্টার একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী। যিনি ফরিদপুরের জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি একই জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শামসুন্নাহারের মা আমিনা বেগম "রত্নগর্ভা" সম্মানে ভূষিত। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশবে তিনি কিছুদিন গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। পরবর্তীতে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সারদা সরকারি সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । এখান থেকে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএসএস সম্মান ও ১৯৯৮ সালে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল পাশ করে স্কলারশীপ পান।

২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০২১ সালে বাংলাদেশে "পুলিশ প্রশাসনে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সংস্কার" বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকাবস্থায় বিএসসিসি-তে নাম লেখান। তখন সেরা ১০ ক্যাডেটের একজন হিসেবে রাইডার ফ্লাইংয়ে সুযোগ পান। বিএনসিসি-তে থাকার সময় প্যারেড করেছেন, অস্ত্র ধরেছেন। বিএনসিসির পোশাক, নিয়মশৃঙ্খলা দেখে পুলিশ বিভাগে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়। সে দিক থেকে বিএসএস পরীক্ষায় তার প্রথম পছন্দ ছিলো পুলিশ।

কর্মজীবনে শামসুন্নাহার ২০তম বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৫ অক্টোব ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার ও ২৬ আগস্ট ২০১৮ থেকে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শামসুন্নাহার পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সঙ্গীত চর্চাও করেন। তিনি চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমীতে গান পরিবেশন করে দর্শকনন্দিত হয়েছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে বিস্মৃত করেছেন দর্শকদের। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভূক্ত শিল্পী।

ব্যক্তিগত জীবনে শামসুন্নাহার বিবাহিত। স্বামী মো. হেলাল উদ্দিন আমেরিকা প্রবাসী ও ব্যবসায়ী। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়