রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩

রায়পুরে ইউনিয়ন পরিষদের দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তার অপসার দাবি

চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ২৩ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা !

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
রায়পুরে ইউনিয়ন পরিষদের দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তার অপসার দাবি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সম্প্রতি চেয়ারম্যান হজ্বে যাওয়ার সুযোগে তার স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্দের ২৩ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা এবং জন্মনিবন্ধন করা নিয়ে মানুষকে চরম হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আফসার উদ্দীন নামে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব)-এর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত এক মাস ধরে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে। অভিযুক্ত আফসার উদ্দিন উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) পদে দায়িত্বরত।

হত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিন ইউনিয়ন পরিষদ গেলে ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) আফসার উদ্দীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ এবং পরিষদকেন্দ্রিক জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যানসহ ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন নেতা-কর্মীরা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজিসহ ১০ জন সদস্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

ইউপি সদস্য বশির হাওলাদার, মোহাম্মদ আলী, দিদার মোল্লা, আবুল হোসেন ও ফাতেমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দীন ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর এক বছর ভালই ছিলেন। তারপর থেকেই সরকারি বিভিন্ন সেবা-ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, জেলে চাল, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধনসহ প্রায় সব ধরনের সুবিধার বিনিময়ে সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ নিয়মিত টাকা আদায় করেন। অনলাইনভিত্তিক ভিজিডি রেজিস্ট্রেশনেও দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তারা আরও জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আফসার উদ্দীন বেপরোয়া হয়ে গেছেন। মেম্বারদের সাথে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রেখেছেন। সম্প্রতি চেয়ারম্যান হজ্বে গেলে এ সুযোগে তার স্বাক্ষর জাল করে আফসার উদ্দীন টিআর-কাবিখার বরাদ্দের ২৩ লাখ টাকার প্রথম কিস্তি তুলতে যায় পিআইও অফিসে। তখন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) চেয়ারম্যান না আসায় ওই চেক বাতিল করেছেন। তখনই বিষয়টি আমরা পরিষদের সকল সদস্য জানতে পেরেছি। ওই প্রকল্পের কাজ শুরু না হতেই কিছু টাকা উত্তোলনও করা হয়েছে। এছাড়াও পরিষদের সদস্য বশিরের নামে বরাদ্দ দেওয়া ডিপ-টিউবওয়েলের দশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার পর বুধবার তা চেয়ারম্যানে কাছে ফেরত দিয়েছে ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। পাশের দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এবং চেয়ারম্যানের সাথে খারাপ আচরণের কারণে ৭ মাস সেখানে থাকার পর দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদে বদলি হয়ে আসেন। সামান্য চাকুরির বেতনে কীভাবে নিজের বাড়িতে বহুতল আলিশান বাড়ি ও রাস্তা নির্মাণ কাজ করছেন বলেও প্রশ্ন তুলেছেন।

দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম জিকুও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দীন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বলেও স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোল্লারহাট বাজারের দুজন ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহুবার স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে (সাবেক ইউএনও ইমরান খান) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল হাই খানকে জানালেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে দাবি করেছেন তারা।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ৩টি দাবি তুলে ধরেছেন : সচিবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ, দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত সচিবকে দ্রুত অপসারণ করে দুর্নীতিমুক্ত পরিষদ পরিচালনা নিশ্চিত করা।

এ বিষয়গুলো নিয়ে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দীন বলেন, কয়েকজন মেম্বার অনৈতিক সুবিধা ভোগ করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা-ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। আমি কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও আত্নসাতের ঘটনার সাথে জড়িত না।

এদিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) মো জসিম উদ্দীন বলেন, আমরা বিষয়গুলো জেনেছি। নবাগত জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়