প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৩৯
গাজা অবরোধ ভাঙার উপাখ্যান: ফ্লোটিলা কেন শুধু 'জাহাজ' নয়, একটি চলমান প্রতিবাদ?
ভূমধ্যসাগরের তীরে রক্তাক্ত মানবিকতা!
গাজা: যখন 'জেলখানা' ভাসমান, প্রতিবাদ তখন জলপথগামী।

গাজা ফ্লোটিলা বলতে বোঝানো হয় সেই সব আন্তর্জাতিক মানবাধিকারভিত্তিক নৌবহরকে, যারা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উপর ইসরায়েল আরোপিত অবরোধ ভাঙতে খাদ্য, ওষুধ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে যাত্রা করেছিল। এসব ফ্লোটিলা মূলত বেসরকারি সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্যোগে সংগঠিত হয়।

ছবি ;"গাজার মানবিক সংকট",সংগৃহীত
মানবিক সাহায্য থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ
২০০৭ সালে হামাস ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েল গাজার স্থল, নৌ ও আকাশপথে কঠোর অবরোধ আরোপ করে। এর ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে সরাসরি সাহায্য পৌঁছে দিতে ফ্লোটিলা যাত্রা শুরু করে।
২০১০ সালের ‘মাভি মারমারা’ ঘটনা
২০১০ সালের মে মাসে সবচেয়ে আলোচিত ফ্লোটিলা ছিল তুরস্ক থেকে যাত্রা করা ‘মাভি মারমারা’। এতে কয়েক শ’ যাত্রী ছিলেন এবং তারা গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাচ্ছিলেন। ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক সমুদ্রে হামলা চালালে ৯ জন তুর্কি কর্মী নিহত হন।

ছবি :ক্রুজ জাহাজ মাভি মারমারা,সংগৃহীত।
মানবিক প্রশ্ন বনাম ভূরাজনীতি
গাজার ফ্লোটিলা প্রশ্নটি কেবল একটি মানবিক উদ্যোগ নয়; এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক সরকার প্রকাশ্যে নিন্দা জানাতে সাহস করেনি, কিন্তু জনমনে ইসরায়েলি অবরোধকে অন্যায় ও অমানবিক হিসেবে দেখা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পর গাজায় মানবিক সংকট অভূতপূর্ব আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছে। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ ঘাটতি, ওষুধের অভাব এবং জ্বালানি সংকটের কারণে হাজার হাজার আহত মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলা প্রচেষ্টা গড়ে উঠছে। তুরস্ক, ইউরোপ ও আরব বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সমুদ্রপথে মানবিক সাহায্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও ইসরায়েল আগের মতোই এই ধরনের ফ্লোটিলাকে “নিরাপত্তার হুমকি” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বাধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈত নীতি আজ আবারও আলোচনায় এসেছে। একদিকে তারা মানবিক সহায়তার কথা বলছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়ে চলেছে। ফলে গাজার মানুষের কাছে ফ্লোটিলা কেবল মানবিক সহায়তার প্রতীক নয়, বরং আন্তর্জাতিক সংহতির একমাত্র আশ্রয় হয়ে উঠছে।

ছবি :ফ্লোটিলা থেকে শহিদুল আলম।সংগৃহীত
ফ্লোটিলার বার্তা
ফ্লোটিলার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ফ্লোটিলা আন্দোলন দেখিয়েছে যে, মানবতার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সংহতি তৈরি করা সম্ভব।
গাজার ফ্লোটিলা ইতিহাসে মানবিক সাহসের প্রতীক হয়ে থাকবে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মানুষকে অবরুদ্ধ করে, সেখানে নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারে। আজকের গাজা পরিস্থিতি আবারও বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোই ইতিহাসের আসল দায়িত্ব।
Facebook-এ শেয়ার করুন
— ডিসিকে/এমজেডএইচ