সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ০২:৩৫

নেতানিয়াহুর নতুন কৌশল!

ইরান অভিযানের পর গাজায় বন্দি মুক্তির পথে ইসরায়েল!

বিশেষ প্রতিবেদক মো. জাকির হোসেন
নেতানিয়াহুর নতুন কৌশল!
ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে সাম্প্রতিক অভিযানের পর গাজায় হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্ত করার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। শনিবার দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা 'শন বেট'–এর (Shin Bet) কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নেতানিয়াহু বলেন, “ইরানে সফল অভিযান পরিচালনার ফলে আমাদের সামনে বহু সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গাজায় আটক থাকা আমাদের নাগরিকদের মুক্তির সুযোগ।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য একটাই—সব বন্দিকে ফিরিয়ে আনা এবং গাজায় চলমান সংঘাতের একটি কার্যকর সমাপ্তি।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর প্রায় ২৫১ জন ইসরায়েলিকে গাজায় অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে ১০৫ জনকে মুক্ত করা হলেও এখনও আনুমানিক ৫০ জন গাজায় বন্দি রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে অনেকেই হয়তো প্রাণ হারিয়েছেন।

নেতানিয়াহুর এই ঘোষণায় গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ‘Hostages Families Forum’ নামে একটি সংগঠন এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা সন্তুষ্ট যে প্রধানমন্ত্রী অবশেষে বন্দি উদ্ধারের বিষয়টিকে জাতীয় অগ্রাধিকারের পর্যায়ে রেখেছেন। তবে কেবল বক্তব্য নয়, বাস্তব পদক্ষেপ চাই।”

গাজা সংকটের সমাধানে মধ্যস্থতা করছে কাতার ও মিসর। অতীতেও তাদের মাধ্যমে বেশ কিছু বন্দি বিনিময়ের চুক্তি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। ইরান অভিযানের পর নতুন করে আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থা শন বেট জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গড়ে প্রতিদিন দুইটি বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে। ইরানে গোপন অভিযানে সফলতার পর এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান অভিযান হামাসের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলে বন্দি মুক্তির বিষয়ে তারা আলোচনায় বসতে আগ্রহী হতে পারে।

দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বন্দি ইস্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের চাপ এবং পরিবারগুলোর বিক্ষোভের মুখে নেতানিয়াহু এখন স্পষ্টভাবে বলছেন, বন্দিদের মুক্তিই তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ইস্যুতে সফল হলে নেতানিয়াহু তার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ নেতানিয়াহুর ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তারা গাজায় সংঘাত বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার পক্ষে। এই প্রেক্ষাপটে বন্দি মুক্তির চুক্তি একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ইরান অভিযানের সফলতা ইসরায়েলের সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে কিছুটা শক্ত করেছে। এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে গাজায় বন্দি থাকা নাগরিকদের মুক্ত করার বাস্তব চেষ্টা এখন সময়ের দাবি। যদিও এখনও চূড়ান্ত কোন পরিকল্পনার ঘোষণা আসেনি, তবে নেতানিয়াহুর ভাষ্য আশা জাগাচ্ছে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়