সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫, ০৩:১৯

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বার্তা ও ইসরায়েলের প্রতিশোধের হুঙ্কার

নেতানিয়াহুর ‘ঘরে’ আঘাত!

তেহরান-জেরুজালেম উত্তেজনার চূড়ান্ত রূপ: নেতানিয়াহুর পরিবারঘেঁষা কেসারিয়ায় ইরানের হামলার নিশানা

বিশেষ সংবাদদাতা: মো. জাকির হোসেন
নেতানিয়াহুর ‘ঘরে’ আঘাত!
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্য যেন এক নতুন আগুনের বৃত্তে! গতকাল শনিবার (১৪ জুন) গভীর রাতে ইরান একযোগে ৭০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন অংশে ছুঁড়ে মারে। এই হামলার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পারিবারিক বাসভবনের এলাকা, কেসারিয়া।

ইরান বলেছে, এটি ছিল একটি ‘প্রতিরোধের বার্তা’। তারা দাবি করেছে, “ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সিরিজ বিমান হামলার জবাবে আমরা ন্যায্য প্রতিশোধ নিয়েছি। কেসারিয়া ছিল তাদের নেতৃত্বের প্রতীকী কেন্দ্র, তাই এটি ছিল আমাদের কৌশলগত আঘাত।”

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, “Iron Dome” এবং “David’s Sling” প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও, বেশ কয়েকটি লক্ষ্যভেদ করেছে। বাত ইয়াম এবং তেল আবিবে কমপক্ষে ৭ জন নিহত, আহত ২০০+। তেল আবিবের দক্ষিণাঞ্চলে একটি স্কুলে সরাসরি আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র।

নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া: “আমরা ভয় পাই না, প্রতিশোধ নেবই”

বাত ইয়ামে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল এখন অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে। আমাদের শহর, ঘর, এমনকি পরিবারকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। আমরা চুপ করে থাকবো না।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট ঘোষণা দিয়েছেন, “ইরানের অভ্যন্তরেও আমাদের উত্তর আসবে। আমরা এখন কেবল আত্মরক্ষা নয়, আক্রমণের প্রস্তুতিতে আছি।”

বিশ্ব প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা

ইরানের এই হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স কূটনৈতিক জরুরি বৈঠক ডাকে। ব্রিটেন ইতোমধ্যে F-35 ফাইটার জেট মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য আরও একটি পূর্ণমাত্রিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।”

এক্সক্লুসিভ বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এখন প্রতিক্রিয়াশীল কৌশল থেকে আক্রমণাত্মক অবস্থানে চলে গেছে। কেসারিয়া লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে তারা স্পষ্টভাবে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। এটি শুধুই একটি সামরিক বার্তা নয়, এটি ছিল রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন পালাবদলের ইঙ্গিত। হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুথিদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে পরবর্তী আঘাত আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইরানের সরাসরি এই ধরণের আগ্রাসন ইসরায়েলের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ। নেতানিয়াহুর বাসভবনের এলাকা লক্ষ্যবস্তু হওয়া মানেই যুদ্ধের পরিধি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পর্যন্ত পৌঁছেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যুদ্ধের ঘনঘটা—এই হামলা কি যুদ্ধের সূচনা না কি একটি নতুন বিশ্ব রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট?

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়