প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫, ০৩:০৩
হলিউডকেও হার মানানো বাস্তব থ্রিলার!
ভয়ংকর ও রহস্যময় সুব্রত বাইনের জীবনপথ!

|আরো খবর
সেই সুব্রত বাইন, যার জীবনপথ রীতিমতো স্পাই থ্রিলার সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়, অবশেষে ২০২৫ সালের মে মাসে ভারত থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। শুধু তিনিই নন, তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী ও আরেক পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদও পুলিশের জালে ধরা পড়েছে।
সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসের বীজ বপন
২০০১ সালে পরিস্থিতির চাপে পড়ে সুব্রত বাইন যশোরের পুটখালি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি ভারতে অবস্থানকারী কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ছত্রছায়ায় তার অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। মাঝে মধ্যেই অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চাঁদার টাকা সংগ্রহ করতেন। তার বাসা ছিল যশোর শহরের বেজপাড়ায়।
গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রছায়ায়
কোলকাতা পুলিশের হাতে একবার ধরা পড়লেও, তৎকালীন কোলকাতা পুলিশ কমিশনার এস কে চক্রবর্তীর মাধ্যমে সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও তানভিরুল ইসলাম জয় ‘RAW’ এবং MI (Military Intelligence) এর সংস্পর্শে আসেন। এরপর এই সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের দুর্গম অঞ্চলে।
‘র এর সিনিয়র অফিসার এস. মাথুর সুব্রতকে দিল্লিতে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থবিরোধী শক্তিদের (উলফা, এনএসসিএন, এমকিউএম) বিরুদ্ধে মিশনে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
বাংলাদেশে গোপন হত্যা মিশন
২০০৩ সালে ঢাকায় এসে সুব্রত বাইন প্রথমে বম সম্প্রদায়ের এক নেতার স্ত্রী ও শিশুকে হত্যা করে। এরপর মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পের এমকিউএম সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তাকিমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এটি ছিল ভারতের স্বার্থবিরোধী সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে ‘র এর একটি বার্তা।
✈️ চীন, সিঙ্গাপুর হয়ে দুবাই পাড়ি
২০০৭ সালে কোলকাতা CID এর অভিযান চালু হলে সুব্রত আলী মোহাম্মদ নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে যান সিঙ্গাপুর হয়ে চীনে, পরে দুবাই। সেখানে ‘র এর সহায়তায় মাফিয়া নেটওয়ার্কে ঢোকার চেষ্টা করে টাইগার মেমন ও দাউদ ইব্রাহিমের কাছাকাছি পৌঁছাতে চেয়েছিলেন—যদিও ব্যর্থ হন।
র্যাবের গোপন ডিল ও লন্ডন মিশন
২০২৩ সালে র্যাবের সহযোগিতায় ফের বাংলাদেশে ফিরে আসেন সুব্রত। র্যাব সদরদপ্তরে রাখা হয় তাকে। দেখা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জিয়াউল আহসান ও মনিরুল ইসলাম। তাকে লন্ডনে পাঠিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যা করার গোপন পরিকল্পনা করা হয়।
সুব্রতকে দেওয়া হয় স্নাইপার ট্রেনিং, যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট ফোন, তার পরিবারের জন্য কানাডায় পাসপোর্টের আশ্বাসও।
শাসন পতনের পর ভেসে ওঠা বাস্তবতা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। সুব্রতকে তার মেয়ে বিতুর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং র্যাবের সকল যোগাযোগ স্থগিত করা হয়। এরপর আবারও 'র এর সঙ্গে তার যোগাযোগ শুরু হয়। বাংলাদেশে পাঠানো হয় সহযোগী মোল্লা মাসুদকেও।
চূড়ান্ত ধরা পড়া: শেষ হলো পলাতক জীবনের অধ্যায়
২০২৫ সালের মে মাসে ভারতীয় পুলিশ ও STF এর যৌথ অভিযানে সুব্রত বাইন এবং মোল্লা মাসুদ কলকাতা শহরের উপকণ্ঠ থেকে গ্রেফতার হন। তারা উভয়েই বর্তমানে ভারতের হেফাজতে রয়েছে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষণ
বিশ্ব রাজনীতির ছায়ায় দাঁড়িয়ে একজন দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী কিভাবে একের পর এক সরকারের ছত্রছায়ায় আন্তর্জাতিক খেলা খেলেছে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সুব্রত বাইন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে RAW ও RAB এর ছত্রছায়ায় থাকা এই চরিত্রটি শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও চরম হুমকি হিসেবে বিবেচিত ছিল।
ডিসিকে/এমজেডএইচ