রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:৪৮

দুর্ঘটনাক্রমে বিদ্যুৎ ছাড়াই বাতাস থেকে পানি সংগ্রহের উপায় পেলেন বিজ্ঞানীরা

তথ্য-প্রযুক্তিকণ্ঠ ডেস্ক
দুর্ঘটনাক্রমে বিদ্যুৎ ছাড়াই বাতাস থেকে পানি সংগ্রহের উপায় পেলেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানের দুনিয়ায় দুর্ঘটনাক্রমে এক চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। তারা নতুন এক উপাদান খুঁজে পেয়েছেন, যা বিদ্যুৎ বা বিশেষ যন্ত্রপাতি ছাড়াই বাতাস থেকে পানি টেনে আনতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এ আকস্মিক আবিষ্কার শুষ্ক অঞ্চলে পানি সরবরাহের নতুন উপায় দেবে ও ইলেকট্রনিক্স বা ভবনকে আরও সহজে ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করবে।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। এক ল্যাব পরীক্ষার সময় এ আবিষ্কারটি ঘটে। এ সময় অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া’র পিএইচডি শিক্ষার্থী ভরথ ভেঙ্কাটেশ।

গবেষণাগারের একটি ধাতব উপাদানের ওপর পানির ফোঁটা তৈরি হচ্ছিল। তবে এ উপাদানটি ঠাণ্ডা করা এমন নয়, আর এর আর্দ্রতাও বেশি ছিল না। তাহলে পানির ফোঁটা এলো কোথা থেকে?

প্রথমে গবেষণা দলটি ভেবেছিল ল্যাবের পরিবেশের কারণে কোনো একটা ভুল থেকে এমনটি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। তবে আরও পরীক্ষা করে দেখা গেল এখানে আসলেই কিছু একটা ঘটছে।

‘ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া’র প্রফেসর ডায়েওন লি ও আমিশ প্যাটেলের নেতৃত্বে গবেষকরা এমন এক নতুন ধরনের উপাদান আবিষ্কার করেছেন, যার মধ্যে ছোট ছোট ন্যানোপোর থাকে, যা এমনভাবে পানি টেনে আনে ও স্থানান্তরিত করে, যা আগে কেউ দেখেনি বলে দাবি তাদের।

গবেষকরা বলছেন, এ নতুন ধরনের উপাদান তৈরি হয়েছে পানি পছন্দ করে এমন বা হাইড্রোফিলিক ন্যানোপার্টিকল ও পানি প্রতিরোধী বা হাইড্রোফোবিক প্লাস্টিককে সঠিক ভারসাম্যে মিশিয়ে।

অন্য অনেক উপাদানে বাতাসের জলীয় বাষ্প ছোট ছিদ্রে জমে যায়, কিন্তু ভেতরেই আটকে থাকে। তবে এই উপাদানে পানি কেবল ছিদ্রে ঢুকে যেতেই পারে না, বরং তা ওপরে উঠে আসে ও ফোঁটা তৈরি করে, যেটি একেবারে নতুন এক আচরণ।

আরও বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, পানির এসব ফোঁটা সহজে শুকিয়ে যায় না। যদিও, সাধারণভাবে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে এমনটি হওয়ার কথা নয়। নিশ্চিত হওয়ার জন্যে গবেষণা দলটি এ উপাদানের আরও পুরু সংস্করণ পরীক্ষা করে দেখেছে।

তারা দেখলেন, উপাদানটি যতো পুরু হয়, ততোই বেশি পানি সংগ্রহ করছে। এতে প্রমাণ মেলে, পানি কেবল বাইরের পৃষ্ঠের ওপর ঘনীভূত হচ্ছে বা জমছে না, বরং উপাদানের ভেতর থেকেও উঠে এসেছে।

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে তোলা ভিডিওতেও দেখা গিয়েছে, ধারাবাহিক এক চক্র চলছে, যেখানে পানি ছোট ছিদ্রগুলোর ভেতরে জমছে, তারপর ওপরে উঠে আসছে ও এভাবে স্থির ফোঁটা তৈরি করছে।

গবেষকরা বলছেন, এ আচরণটির কারণ হচ্ছে উপাদানের ভেতরে থাকা লুকানো পানি সংরক্ষণের একটি নেটওয়ার্ক। এই ছোট ছোট জলাধারগুলো বাতাস থেকে আর্দ্রতা টেনে নেয় ও তা ওপরে পাঠায়। ফলে ধারাবাহিক এক প্রক্রিয়া তৈরি হয়। পানি টানার (হাইড্রোফিলিক) ও পানি ঠেকানোর (হাইড্রোফোবিক) এসব অংশের সঠিক ভারসাম্যই এ কাজটি সম্ভব করেছে।

এ উপাদানটি সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি ও সহজ উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করে এটিকে বানানো যেতে পারে, যার ফলে এ আবিষ্কার হয়ে উঠেছে আরও রোমাঞ্চকর।

বাস্তব জীবনে নানা কাজে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারে এ উপায়। যেমন–শুষ্ক অঞ্চলে বিদ্যুৎ ছাড়াই পানি সংগ্রহের যন্ত্র, আর্দ্রতার প্রতি সাড়া দেয় এমন আবরণ ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে ভবন বা বাড়িঘর ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা।

পুরো প্রক্রিয়াটি এখনও গবেষণাধীন পর্যায়ে থাকলেও এ আকস্মিক আবিষ্কার আমাদের পানি সংগ্রহ ও উত্তপ্ত পৃথিবীতে তাপ নিয়ন্ত্রণের ধরণই বদলে দিতে পারে।

ছবি-

লাগবে না কোনো ক্যাবল সংযোগ

স্টারলিংকের চেয়ে শতগুণ বেশি গতি নিয়ে আসছে ‘তারা’

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিশ্ব এখনও স্যাটেলাইট-নির্ভর ইন্টারনেট প্রযুক্তি স্টারলিংক-এর বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তখনই নতুন আলোড়ন তুলেছে এক ভিন্নধর্মী উদ্ভাবন। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক স্টার্টআপ ‘তারা’ নিয়ে এসেছে এমন একটি ইন্টারনেট প্রযুক্তি, যা স্যাটেলাইট কিংবা ফাইবার ছাড়াই উচ্চগতির সংযোগ দিতে সক্ষম।

কীভাবে কাজ করে ‘তারা’? ‘তারা’র উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘লাইট ব্রিজ’, যেখানে এক প্রান্তে থাকে লেজার প্রজেক্টর, অপর প্রান্তে রিসিভার। এই লেজার সরাসরি ডেটা পাঠায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ফলে ভূগর্ভস্থ ফাইবার কিংবা মহাকাশে স্যাটেলাইটের প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা সম্ভব হয়।

গতিতে স্টারলিংককে পেছনে ফেলবে? ‘তারা’ দাবি করেছে, তাদের প্রযুক্তি স্টারলিংক-এর চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি দ্রুত। এটি প্রতি সেকেন্ডে ২০ গিগাবিট গতিতে ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে এবং ২০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত সংযোগ বজায় রাখতে সক্ষম। এটি প্রযুক্তিগতভাবে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

প্রাকৃতিক বাধায়ও নির্ভরযোগ্য লেজার প্রযুক্তি সাধারণত কুয়াশা, বৃষ্টি কিংবা পাখির গতিবিধির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েÑতবে তারা সেই বাধা পেরিয়ে এসেছে ‘অটো-অ্যালাইনমেন্ট সিস্টেম’ ব্যবহারের মাধ্যমে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেজারের দিক ঠিক করে সংযোগ স্থিতিশীল রাখে।

ইতোমধ্যে সফল ব্যবহার বিশ্বের ১২টি দেশে ইতোমধ্যে সফলভাবে পরীক্ষা চালিয়েছে তারা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে, কঙ্গো নদীর দুই তীরের রাজধানীÑব্রাজাভিল ও কিনশাসার মধ্যে এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ। সেখানে ৯৯.৯৯% আপটাইম নিশ্চিত করে ৭০০ টেরাবাইট ডেটা ট্রান্সফার করা হয়েছে।

ফোনোটিক্স চিপ

তারা ২০২৬ সালে বাজারে আনতে যাচ্ছে ‘ফোনোটিক্স চিপ’, যা ড্রোন, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন ও ওড়ঞ ডিভাইস-এ ব্যবহৃত হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি পরিস্থিতিতে এটি ফাইবার নেটওয়ার্কের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারবে।

বিশ্বে ইন্টারনেট প্রযুক্তি এখন এক নতুন মোড়ের দিকে এগোচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলোÑতারা কি স্টারলিংকের জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যাবে? নাকি এই দুই প্রযুক্তি যুগপৎ কাজ করে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অভিগম্যতাকে আরও সহজ, সুলভ ও গতিশীল করে তুলবে? এর উত্তর সময়ই দেবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়