প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১:২০
লক্ষ্মীপুরে এক বছরে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ১১ হাজার মানুষ

রায়পুরসহ লক্ষ্মীপুর জেলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুর। গত এক বছরে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার মানুষ। একই সময়ের মধ্যে এলাকায় ৩০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
|আরো খবর
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসেই জেলা সদর হাসপাতালে কুকুর বা বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ৪শ' ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিনই সদর হাসপাতালে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। আক্রান্তদের ভ্যাকসিন দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে কুকুর বা বিড়ালের কামড় ও আঁচড়ে আক্রান্ত হয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। প্রতিজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে তিন ডোজ করে ভ্যাকসিন নিতে হয়। এ হিসেব অনুযায়ী এক বছরে জেলায় ৩০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিন নানা বয়সী মানুষ কুকুর বা বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন নেন। এই সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। শুধু সদর হাসপাতালেই নয়, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ভিড় করছেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা। আক্রান্তের সংখ্যা অনুযায়ী ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত নয়। দ্রুত ভ্যাকসিন সরবরাহ দেয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর আগে একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকায় কয়েক হাজার কুকুরকে ‘জলাতঙ্ক রোধক’ টিকা দেওয়া হলেও সেটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। এতে টিকা সংকট তৈরি হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগ সময় যাতায়াত করতে গিয়ে কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
আক্রান্তদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাস্তায়, বাসাবাড়িতে এবং স্কুলে যাতায়াত করার সময় হঠাৎ করে কুকুর আক্রমণ শিকার হতে হচ্ছে। গত কয়েকমাস ধরে কুকুরের উৎপাত বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে কুকুরের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।
কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের স্বজন হাফিজ উদ্দিন ও মাইনুদ্দিন মোল্লা বলেন, কুকুরের কামড়ের পর ভ্যাকসিন দিতে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু ভ্যাকসিন না থাকায় বাইরে থেকে বেশি দামে ভ্যাকসিন কিনে দিতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি হয়। রায়পুরের নতুনবাজার এলাকার ব্যাবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, রাত দশটার পর হায়দরগঞ্জ সড়কে আমার বাড়িতে নর্দমা এলাকা যেতে পারি না। লাঠি হাতে লোকের সহযোগিতায় বাড়ি ফিরতে হয়। গত তিন মাসে কুকুরের কামড়ে ১৫ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়।
সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. রোকনুজ্জামান বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে ৮শ' আক্রান্ত মানুষকে ২৪০০ ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত এক বছরে ১০ হাজার মানুষকে প্রায় ৩০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মানুষ কুকুর বা বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ভ্যাকসিন নিতে আসে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কুকুর নিধনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। আবারও নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর বাইরে করার কিছু নেই। কুকুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তিনি সবাইকে সচেতন হয়ে চলাচল করার অনুরোধ জানান।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. অরুপ পাল ও রায়পুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মামুনুর রশিদ পলাশ বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন রয়েছে। কোনো সংকট নেই। হঠাৎ সড়কে কুকুর বেড়ে যাওয়া ও প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করার কারণে এমনটা হতে পারে। হাত-পিঠ ও গালসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কুকুর বিড়াল কামড় দিলে আক্রান্ত স্থান দ্রুত সাবান পানি বা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দ্রুত হাসপাতালেএসে ভ্যাকসিন চিকিৎসা নিতে হবে।