সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০

মে দিবস ও আজকের বাস্তবতা

রহিমা আক্তার মৌ
মে দিবস ও আজকের বাস্তবতা

পহেলা মে ২০২৪ পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এদিন সকাল ৭টায় বের হয়ে ঘুরেছি ঢাকা জেলার সাভার এলাকার কয়েকটি জায়গায়। একটাই উদ্দেশ্য- কিছু শ্রমজীবী মানুষের সাথে কথা বলা আর মে দিবসের বাস্তবতা জানা। প্রশ্ন হতে পারে- আজ তো সরকারি ছুটির দিন তাও কেনো মে দিবসে শ্রমজীবী বা কর্মজীবী মানুষদের সাথে কথা বলতে বের হওয়া? জবাব হলো দিবস ও আজকের বাস্তবতা তুলে ধরা।

বিভিন্ন পেশার কয়েকজনের সাথে কথা বললাম, তাদের সবার একই কথা মে দিবসে বন্ধ হলে পেট কি বন্ধ বুঝবে। পেটের কি ছুটি আছে? ভবন নির্মাণে কাজ করছে মামা, ভাগনা আর তাদের এক রিলেটিভ নারী। ভাগনার বয়স ১৭/১৮ হবে। যে মাটির ঝুড়িটি ভাগনা মাথায় নিচ্চে সেটাই কিছু দূরে গিয়ে নারী মাথায় নিচ্ছে, মানে শ্রম সমান। সমান শ্রম দিয়ে মজুরি পাচ্ছে কেমন বলতে তারা জানায় সবাই আজ সমান মজুরি পাবে, তার পরিমাণ ৫০০ টাকা করে। নারী শ্রমিকের সাথে আলাদা কথা বললে তিনি জানান, আজ সবাই সমান করেই পাবো, তবে মাঝে মধ্যে নারীরা ৫০/১০০ টাকা করে কম পায়।

আজ শুধু উনারা তিনজনেই কাজ করছেন এই ভবন নির্মাণের কাজে। মূলত কাজটা দেখলাম আজ মাটি ভরাট করা। আজকে লোকজন কম বের হয়েছে কাজ করতে, আবার কম ব্যক্তিই গিয়েছে শ্রমিক কিনতে। তাই উনারা কাজ পেয়েই খুশি সেটা ৫০০ হোক আর বেশি হোক। ছুটি বলে ঘরে থাকলে তো খাবার হেঁটে হেঁটে আসবে না। আজ যে মে দিবস এটা জানেন কিনা জিজ্ঞাস করায় বললো, জানি আজ অফিস-আদালত সব বন্ধ, অফিস বন্ধ হলে তো তাদের বেতন ঠিকই থাকবে কিন্তু আমরা একদিন না আসলে আমাদের তো টাকা আসবে না।

মে দিবসে বন্ধ বলে আলোচনা করতেই এক বন্ধু বললেন, কিসের বন্ধ আমার নিজের অফিসই খোলা। একটা কোম্পানিতে জব করেন তিনি, ৩০ এপ্রিল ঘোষণা আসে যে, পহেলা মে কোন বন্ধ নেই। সবাই অফিসে আসতে হবে। সত্যিই সবাই আসতে বাধ্য হয়। তবে অফিস ৫/৬টায় ছুটি হওয়ার জায়গায় বেলা ২টায় ছুটি হয়। এই ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন- ৫/৬টার জায়গায় ২টায় ছুটি দিয়ে কোম্পানির মালিককি মহান হতে চেয়েছেন? এই কর্মচারীদেরকে প্রতিদিনের মতো ঠিক সময়ে আসতে তো হয়েছে, দিনটা তো কাজ করেই কাটাতে হয়েছে তাহলে মানবতার ফেরিওয়ালা সাজা শ্রমিকদের মাথার ছাতা হয়ে তিনি কি আসলেই একজন কোম্পানির মালিক নাকি অন্যকিছু।

মে দিবস উপলক্ষে অনেক কিছুই বন্ধ, অনেকে গুরুত্ব দিয়ে বন্ধ রেখেছেন নিজেদের কাজ বা প্রতিষ্ঠানের কাজ ও। সাধারণত সব এলাকায় শ্রমিকের হাট বসে। সেই হাট থেকে যার যতজন শ্রমিক দরকার তাদের নিয়ে আসা হয়। দিনশেষে কাজের পারিশ্রমিক দেয়া হয়। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ চলমান কাজ পেলে শ্রমিকরা খুশি হয় অনেক। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে শ্রমিক হাঁটে যেতে হয়না। সরাসরি তারা কাজের জায়গায় চলে আসে। অধিকাংশ শ্রমিক কাজ শুরু করে সকাল ৮টা থেকে। তার মানে সেই শ্রমিকের হাটে তাকে ৭টার আগে উপস্থিত হতে হয়। কাজ না পেয়ে ফিরে আসা ৪৫/৫০ বছর বয়সী একজনের সাথে দেখা। জিজ্ঞাস করায় বললেন, আজ শ্রমিকের বাজার মন্দ, কাজ বন্ধ বলে অনেকেই কাজ পায়নি। তিনি আরো জানান, এই যে আমি আজ কাজ পাইনি, দিনশেষে যে ৫/৬শ’ টাকা আসতো আমার হাতে তা তো আসবে না। তাহলে সংসার চলবে কি করে?

একটা নামকরা প্রতিষ্ঠানের কাজ করেন একভাই জানান, আমার অফিসও খোলা। ২০১৬ সাল পর্যন্ত মে দিবসে আমরা ছুটি পেয়েছি, ২০১৭ সালে ছুটি বাতিল করলে আমরা কয়েকজন বসকে জানাই, বসের সেই এক কথা ‘অফিস খোলা কাজ করলে করবে না করলে চলে যাবে’। এবার বলেন আমরা কি চাকরি ছেড়ে যাবো একদিনের ছুটির জন্য। তবে শুধু একদিন নয়, ২০১৭ সালের পর থেকে আমাদের বন্ধ শুধু শুক্রবারে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বর এসব দিনেও আমাদের অফিস খোলা থাকে।

মে দিবসে অফিস খোলা নিয়ে আরেক তথ্য দিলেন চট্টগ্রামের একভাই। তিনি জানান, আজ আমাদেরও অফিস খোলা। তবে বাধ্যতামূলক নয়, ভিন্ন বিষয় হলো আজ যারা অফিস করবে তারা অন্যদিনের চেয়ে দ্বিগুণ বেতন পাবে। মে দিবসে অফিস খোলা কিনা জানতে চেয়ে একটা পোস্ট দিই। কেউ কেউ কমেন্টে খোলা বা বন্ধের কথা বললেও কেউ কেউ ম্যাসেঞ্জারে জানায় তাদের অবস্থানের কথা। যার সারমর্ম দাঁড়ায় মে দিবসের বন্ধ আসলে একটাই সরকারি অফিসের বন্ধের মতো। সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। নামকরা প্রতিষ্ঠান বা কিছু কলকারখানা বন্ধ থাকে। বাস্তব হলো যার অফিস যিনি মালিক তার নির্দেশ মতোই অফিস অফ বা অন থাকে। যারা মাসিক বেতনে কাজ করে, তারাই মে দিবসের ছুটি ভোগ করে বা করতে চায়। আর যারা দৈনিক হিসাবে কাজ করে তাদের জন্য প্রতিদিনই কর্মদিবস। তাদের কোন মে দিবস নেই আর তারা নিজেরাও চান না মে দিবসে তাদের কাজ বন্ধ হোক।

মে দিবসের ইতিহাস সবার জানা। আজ থেকে ১৩৮ বছর আগে সময়টা ১৮৮৬ সাল, ব্রিটিশ সমাজ সংস্কারক রবার্ট ওয়েনের এক চিন্তা থেকে শুরু মে দিবসের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে এক বিরাট প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকারখানা ও ইউনিয়ন সংগঠনগুলোর কেন্দ্র শিকাগো শহরে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক সমাবেশ। একটাই দাবি উঠে- দৈনিক ২৪ ঘন্টার মাঝে ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিনোদন এবং ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম।

দাবি রূপ নেয় আন্দোলনে। উত্তেজনা বাড়তে থাকে, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মাঝে। একজন মারা যায় ও অনেকে আহত হয়। প্রতিবাদে শ্রমিক নেতারা ৪ মে শিকাগোর বিখ্যাত হেমার্কেট স্কয়ারে কর্মসূচির ডাক দেয়। একসময় তা বিক্ষোবে পরিণত হয়। সাতজন পুলিশ সদস্য নিহত হয় এবং ৬৭ জন কর্মকর্তা আহত হয়। চারজন বিক্ষোভকারীও নিহত হয় এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়। এই ঘটনাগুলোর স্মরণে, ১৮৮৯ সালে ২০ দেশের সমাজকর্মী, শ্রমিক নেতা ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর এক আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে পহেলা মে তারিখ ‘মে দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাস্তবতা হলো এই দিবসের পেছনের আসল প্রতিবাদটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু সেখানে এটি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয়ে থাকে।

কাজের পরিবেশ আরও ভালো করা এবং ট্রেড ইউনিয়নকে আরও শক্তিশালী করার দাবিতে প্রতিবছর পহেলা মে শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। নানান সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি হতে দেখা যায়। দিবস উপলক্ষে সবই হয় কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্যের বদল কতটুকু হয় আর বাস্তবে শ্রমিকেরা কি চায় কি পায় তার হিসাব করা হয় না তা দেখার ও কেউ নেই। ভাগ্যবিড়ম্বিত শ্রমিকরা এখন আর ছুটি না তারা কাজ চায়, কাজের বিনিময়ে নিজের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে চায়। যদিও দিবসের দাবি ছিলো ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা, বিনোদন আর ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম।

এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।’ ভারত ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টি দেশ একই সাথে এই দিবসটি পালন করে থাকে। ১৯২৩ সাল থেকে ভারতে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিনটি উদযাপনে মিছিল ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয় এবং একইসাথে রাষ্ট্রীয় প্রচারণার জন্য বেছে নেয়া হয় দিনটিকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে শ্রমিক ও ইউনিয়নগুলো আরও ভালো কাজের পরিবেশের দাবিতে মে দিবস ঘিরে র‌্যালি ও সমাবেশ করে।

শ্রমিকদের শ্রম অধিকার, নিরাপত্তাসহ কাজের নিয়ম শৃঙ্খলার সাথে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতার সাথে লড়াইয়ে শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনে বেশি গুরুত্বের সাথে দেখা হয়ে থাকে। লোক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেকারত্ব কমলেও এবং কাজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসলেও, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন- আইএলও তাদের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলছে, বেশিরভাগ জি-২০ দেশে গত বছরের মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল রেখে মূল বেতন ভাতা দিতে পারেনি।

দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে যে কোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। সব সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে’।

রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প ও শ্রমবান্ধব বর্তমান সরকার শ্রমিকের সার্বিক কল্যাণসাধন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের পেশাগত নিরাপত্তা ও সুস্থতাসহ সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই’।

বিশ্বব্যাপী মে দিবস পালিত হলেও সব দেশ একই দিনে বা একই স্লোগান নিয়ে পালন করে না। যুক্তরাষ্ট্রে ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জন স্পারও ডেভিড থমসন সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার কানাডার সরকারি শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। মিশরে ১ মে শ্রম দিবস নামে পরিচিত এবং এটি বেতনসহ ছুটি হিসেবে বিবেচিত হয়। মিশরের রাষ্ট্রপতি ঐতিহ্যগতভাবে মে দিবসের আনুষ্ঠানিক উদযাপনে সভাপতিত্ব করেন। ব্রাজিলে শ্রমিক দিবস সাধারণ ছুটি হিসেবে পালিত হয়। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো দিনব্যাপী আলোচনা-অনুষ্ঠানের আয়জন করে থাকে। ব্রাজিল শ্রমিকদের জন্য ভিন্ন আয়োজন করেছে। এদিন ঐতিহ্যগতভাবে অধিকাংশ পেশাদার বিভাগের ন্যূনতম বেতনকাঠামো পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

কয়েকজন গৃহশ্রমিক এর সাথে কথা বলি। তারা বলে, জানি আজ সব কিছু বন্ধ, আমাদের তো কোন বন্ধ নেই। অন্য একজন বলে, জানি আজ বন্ধের দিন আমি নিজেই ছুটি নিই নাই। আজ বাসা বাড়িতে সবাই আছে কাজ বেশি তাই কাজে এসেছি। আমি আমার সুযোগমত কাজ থেকে ছুটি নিই। একজন বলে, কাজে না গেলে কথা শুনতে হয়, কাজ করেই যখন খেতে হবে আর ছুটি কিসের? বকা না খেয়ে কাজ করাই ভালো। গৃহশ্রমিকদের ছুটির কথা বলতেই মা বলেন, আমাদের বাসায় যে কাজ করে তাহলে তো তাকেও ছুটি দেয়া দরকার আজ। অন্যদিকে আমি বাসায় নেই বলে আমার বাসায় যে গৃহশ্রমিক কাজ করে তাকেও ছুটি দিই নাই। বাস্তব এটাই, আমরা বলার সময় অনেককিছুই বলি বা বলতে পারি, বাস্তবতা এটাই দিবস আসে দিবস যায় শ্রমিকের ভাগ্যের পরিবর্তন অধরাই থেকে যায়।

মে দিবসের ছুটিকে সামনে নিয়ে ৩০ এপ্রিল বিকেলে মহিলা বাস সার্ভিসে উঠা। আশেপাশের প্রায় সকলেই ছিলেন কর্মজীবী নারী। আমি নিজেকে কর্মজীবী নারী হিসাবে পরিচয় দিই না, কথা প্রসঙ্গে বলেছি, আমি শ্রমজীবী নই তবে শব্দ শ্রমিক। হ্যাঁ শব্দটা অনেকের সাথে নতুন হলেও এটাই সত্য। বাংলা বর্ণমালা দিয়ে যখন শব্দ সাজাই বলেই নিজেকে এমন পরিচয় দেয়া। সবার প্রায় আলোচনা ছিলো মে দিবস নিয়ে, ছুটি আছে কি কি ভাবে সাজিয়েছে ছুটির দিন তাই শোনা। একজনতো বললেন, অফিস বসেই সিডিউল ঠিক করেছি কাল কি কি করবো। কথা প্রসঙ্গে মেট্টোরেলের কথাও আসে। মে দিবসে মেট্টোরেল কি বন্ধ থাকবে? অধিকাংশই চেয়েছিলো বন্ধ থাকুক।

অবশেষে পহেলা মে বিকেলে সাভার থেকে রওয়ানা ঢাকার পথে। রাস্তার দুইপাশে থাকা অনেক অনেক শিল্পকারখানার মাঝে অনেকগুলো দেখি খোলা। ভবনের ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরছে ফ্যান, জ্বলছে লাইট, চলছে কারখানার মেশিনের চাকা। প্রতিদিনের মতো কর্মদিন শেষ হয় দলবেঁধে তারা ফিরছে আপন গৃহে, তবে অন্যদিনের চেয়ে সংখ্যায় কম। হয়তো কেউ আজকের জন্য ডাবল বেতন বরাদ্দ করেছে, কেউ হয়তো কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছে। কেউ হয়তো এসবের কিছুই করেনি। সেই নামকরা প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপ অফ কোম্পানির মতো ঘোষণা দিয়েছে, ‘অফিস খোলাই থাকবে, সবাইকে কাজে আসতে হবে’। নয়তো বলেছে, ‘যার চাকরি করার ইচ্ছা আছে সে আসবে যার করার ইচ্ছা নেই সে আসবে না’। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের এমন ঘোষণার মাঝে কয়জনের বুকের পাঠা আছে বর্তমান সময়ে চাকরি যখন সোনার হরিণ তখন মে দিবসের সাথে তাল মিলিয়ে শ্রমিক হিসাবে নিজের ইচ্ছা মতো ছুটি ভোগ করবে। সত্যিই তো, ‘পেট কি ছুটি বুঝে না কি পেটের কোন ছুটি আছে’। চলতে চলতে সন্ধ্যায় ঢাকায় এসে দেখলাম মেট্টোরেল চলমান। শ্রমিক দিবস হিসাবে যেসব প্রতিষ্ঠান ছুটির আওতায় পড়ে মেট্রোরেল নিশ্চয়ই সেই আওতায় পড়ে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়