সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

নদীর পাড়ে সবজির বাজারে মাসে কোটি টাকার লেনদেন

কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক ॥
নদীর পাড়ে সবজির বাজারে মাসে কোটি টাকার লেনদেন

হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পাড়ে চরাঞ্চল থেকে আসা সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বসে দুই ঘন্টার বাজার। এই বাজারে মাসে কমপক্ষে ১থেকে সোয়া কোটি টাকার লেনদেন হয়। প্রায় একযুগেরও অধিক সময় আগে স্থানীয়দের উদ্যোগে উপজেলার তেলিরমোড় লঞ্চঘাটে এই বাজার গড়ে উঠে। চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত লোকজন তাদের উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী ভালো দামের জন্যে নিয়ে আসেন এই বাজারে। সম্প্রতি এই বাজারে গিয়ে কথা হয় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে। সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে বাজারের বেচাকেনা শেষ হয়। ট্রলার দিয়ে চরাঞ্চল থেকে সবজিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। একই সাথে নদীতে আহরণ করা ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছও বিক্রি হয় বাজার সংলগ্ন আড়তে। ভোর থেকেই মেঘনা পাড়ে অপেক্ষমান থাকেন পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

মাঝের চর থেকে আসা কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি মৌসুমে সব ধরনের সবজি উৎপাদন করেন। দাম ভাল পাওয়ায় বছর জুড়ে এখানে এনে সবজি বিক্রি করেন। তার জমিতে লাউ, কুমড়া, পেঁপে, লাল শাক, পুঁই শাক, মুলা ও কাঁচা কলা উৎপাদন হয়।

একই এলাকার যুবক আনোয়ার দুটি হাঁস নিয়ে এসেছেন বিক্রি করতে। তিনি দুটি হাঁস বিক্রি করেছেন ১হাজার ১শ’ টাকা। এসব হাঁস ব্যবসায়ীরা শহরে নিয়ে বিক্রি করেন ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা।

বাজারের আড়তদার নেছার আহমেদ তালুকদার জানান, চরাঞ্চলের লোকজন আগে তাদের উৎপাদিত সবজি, দুধ, মাছ, মুরগী ও হাঁস নিয়ে বিক্রি করার জন্যে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে যেতেন। কিন্তু তারা সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন। প্রায় এক যুগ আগে এই ঘাটে মেঘনা নদীর পাড়েই দুই ঘন্টার বাজার বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর থেকে চরাঞ্চলের লোকজন এখানে তাদের উৎপাদিত সব ধরনের পণ্য সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন।

বাজারের আরেক ব্যবসায়ী সৈয়দ পাটওয়ারী জানান, প্রতিদিন এই বাজারে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হয়। তবে শীতের সময় বিক্রি বেড়ে যায়। কারণ চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজির চাহিদা বেড়ে যায়। যে কারণে খুচরা বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ে। এছাড়া হাঁস ও মুরগী এখান থেকে ক্রয় করে সরাসরি শহরে নিয়ে বিক্রি করা হয়।

এই বাজারে মৌসুমী সবজি বেশি বিক্রি হয়। যে কারণে সবজির বেশি বেচাকেনা হয়। কাজী চৌকিদার, নওয়াব মোল্লা, খলির চৌকিদার, বাদশা পেদা, খাজা আহম্মদ গাজী ও সোলায়মানের আড়তে মেঘনা নদীর পশ্চিমের ঈশানবালা, মধ্যচর, মাঝির বাজার, বাংলা বাজার, সাহেববাজার থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে নিয়ে আসেন।

খুচরা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, মোঃ বাবুল ও মাছুম হোসেন জানান, তারা এই দুই ঘন্টার বাজার থেকে সবজি ক্রয় করে উপজেলার আলগী বাজারসহ পাশর্^বর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি করেন। কারণ এসব এলাকায় চরাঞ্চলে উৎপাদিত সবজির কদর বেশি এবং বিক্রি করে লাভও ভাল হয়।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী জানান, জেলার কয়েকটি উপজেলায় চরাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমের চরাঞ্চলগুলোতে বছরজুড়ে কৃষকরা মৌসুমী শাকসবজি উৎপাদন করেন। এ কারণে চরাঞ্চলের অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে, তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা। সেই কাজটিই এখন আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অব্যাহত রেখেছেন। আমি আশা করছি, চরাঞ্চলের কৃষকরা পরিকল্পিতভাবে কৃষি আবাদ বাড়ালে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়