রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৪

বিদেশি মাল্টার চেয়ে দেশি মাল্টার দাম কম

কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক
বিদেশি মাল্টার চেয়ে দেশি মাল্টার দাম কম

চাঁদপুরের বাজারে দেশি মালটা ভরপুর। হরহামেশা বেচা-বিক্রি করতে দেখা মিলে। বিপণীবাগ বাজারে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফল কিনতে গিয়েছিলেন মাসুম বিল্লাহ নামের একজন। ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকানগুলোয় দেশি ও বিদেশি মাল্টার দাম যাচাই করে দেখছিলেন তিনি।

বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করে দু কেজি দেশি মাল্টা ১৮০ টাকা দিয়ে কিনলেন মাসুম বিল্লাহ। কেজি পড়লো ৯০ টাকা।

কোড়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা মাও. দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘বিদেশি মাল্টার দাম অনেক। সব সময় কেনার মতো অবস্থা থাকে না। দেশি মাল্টা দামে সস্তা। তাই বিকল্প হিসেবে দেশি মাল্টা কিনলাম।

চাঁদপুর শহরের ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকানগুলোয় বিদেশি ফলের সঙ্গে রাখা হয় গাঢ় সবুজ মাল্টা। বিদেশি মাল্টার দাম যেখানে কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সেখানে দেশি মাল্টা পাওয়া যায় বাজারভেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। কিছুদিন আগেও বিদেশি মাল্টার কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা ছিল।

কয়েক বছর আগেও দেশি মাল্টার দাম বেশি ছিলো কেজিপ্রতি ১৫০ টাকার আশপাশে। এ বছর দাম আগের চেয়ে বেশ কম।

দেশি মাল্টা খেতে মিষ্টি, বিদেশি মাল্টার চেয়ে কম। তবে কাছাকাছি। রস কিছুটা কম। তবে বিদেশি মাল্টার তুলনায় দাম অনেক কম বলে মধ্যম আয়ের ক্রেতারা দেশি মাল্টাও কিনছেন।

যে ভ্রাম্যমাণ দোকানির কাছ থেকে দ্বীন ইসলাম মাল্টা কিনেছেন তার নাম মো. মাসুদ। ৪০ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ীর বাড়ি প্রফেসর পাড়া। চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে দশ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন তিনি।

মাসুদ বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে দেশি মাল্টা বাজারে আসছে। চাহিদাও ভালো। শুরুতে সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি ছিল। এখন কমেছে।

প্রশ্ন হলো, দেশি মাল্টা কি আসলেই দেশি? এর দাম এতোটা কমল কীভাবে?

যেভাবে এলো দেশি মাল্টা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)-এর বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ও ফল বিশেষজ্ঞ মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, মাল্টা কমলা জাতীয় ফল। পৃথিবীতে যতো কমলা উৎপাদন হয়, তার ৭০ শতাংশই সবুজ।

‘যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাকে বলা হয় ‘দ্য স্টেট অব অরেঞ্জ’। সেখানেও উৎপাদিত কমলার ৮০ শতাংশ সবুজ। বাংলাদেশে হলুদ ও কমলা রঙের কমলা ও মাল্টা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

মেহেদী মাসুদ বলেন, ১৯৯০ দশকের দিকে ভারত থেকে প্রথম সবুজ রঙের মাল্টা বাংলাদেশে আসে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে সেখান থেকে ভালো ফল বেছে নিয়ে চারা করা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ চারার চাষযোগ্যতা পরীক্ষা করা হয়। চাষযোগ্যতা প্রমাণিত হলে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির মাধ্যমে এটি বারি মাল্টা-১ নামে স্বীকৃতি পায়। এরপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাঁচ বছর মেয়াদি (২০০৫-১০) সাইট্রাস প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড় ও সমতলে মাল্টার চাষের প্রচলন শুরু করা হয়। তবে তখনো এটির বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি—এমন তথ্য জানিয়ে সাবেক মেহেদী মাসুদ বলেন, ২০১৮ সালে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অন্যান্য ফলের সঙ্গে মাল্টার দেশব্যাপী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হলে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, দেশি মাল্টা পাকার সময় একেক এলাকায় একেক রকম। পাহাড়ি অঞ্চলসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী ২৪ জেলায় দেশি মাল্টা পাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। দিনাজপুরের দিকে পাকে নভেম্বরের দিকে। তবে শীত পড়া শুরু হলে দেশি মাল্টায় রস কমে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার (উদ্যানতত্ত্ব) শাখার উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. ময়নুল হক বলেন, বারি মাল্টা-১-এ চাষিদের কাছে জনপ্রিয়। এই ফল দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খেয়েছে। ফলে এর সম্ভাবনা ভালো। এটি খাবার যোগ্য। ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়