শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:০৫

ধারাবাহিক উপন্যাস-৮

নিকুঞ্জ নিকেতন

রাজীব কুমার দাস
নিকুঞ্জ নিকেতন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

(৫)

বর্ষায় বিকেলের রোদটা ভালোই লাগে। বৃষ্টির পর রোদের ঝিলিক যেন চারপাশে শুদ্ধতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়। এখন আমার বাগান পরিচর্চা আর করা লাগে না। অন্য সময় গাছের গোড়ায় গোবর-মাটি দেওয়া, জল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে কিন্তু বর্ষায় সেটা লাগে না। প্রাকৃতিক বর্ষণে প্রতিটি তরুলতাই জীবন্ত হয়ে ওঠে। বৃষ্টির জল যেন গাছপালার জন্য অমৃত। সমস্যা একটাই আগাছা নিংড়ানো লাগে ঘন ঘন। গত কয়েকদিন আগেই তো বাগানটায় আগাছা পরিষ্কার করেছিলাম আর আজ আবারও নতুন করে ঘাস ও লতা গাছগুলোর ডালপালা গজিয়েছে দেখছি। যাক আরও কিছু দিন তারপর না হয় একদিন নিংড়ে দিব। বৃষ্টি নেই তবু ছাতা নিয়ে বের হয়েছি। চলতে গিয়ে আবার বৃষ্টি শুরু হলে পথে দঁাড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে বৃষ্টি কমার। পেয়ারা গাছটায় এবার বেশ পেয়ারা এসেছে দেখছি। পাশের বাড়ির হরিপদ দাদার মেয়ে বিশাখা একদিন পেয়ারা গাছের একটা চারা এনে বলে কাকাবাবু আপনার বাগানে এই পেয়ারা গাছটা রোপন করি? আমি তাকে কোনো কিছুতে না করিনি কারণ একটাই সে আর আমার রাজীব একসাথে স্কুলে যেত। বিশাখা ও রাজীবের বয়সের ব্যবধান যদিও তিন-চার বছরের হবে তবুও তারা দুজনে ভালো বন্ধু। রাজীবের মা যখন মারা যায় তখন ওকে দেখাশোনা করা আমার পক্ষে বেশ কষ্টকর ছিল। বিশাখার মা মৃণ্ময়ী তার দেখভাল করত। আমি তো থাকতাম অফিসে ফিরতাম সেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায়। ততক্ষণ মৃণ্ময়ী তার খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে খেয়াল রাখত। প্রথম প্রথম বেশ সংকোচ বোধ করতাম একজন মানুষকে এভাবে কষ্ট দেওয়ায়। একদিন সৌজন্যবোধে বলায় হরিপদ ও তার স্ত্রী বেশ দুঃখ প্রকাশ করে বললেনÑদাদা আজ দিদি বেঁচে থাকলে কী ওর আদর যত্ন করত না? তাছাড়া মা নই বলে কী মায়ের মতো খেয়াল রাখতে পারব না? আমি আর বিষয়টা বাড়াইনি। প্রয়োজন আমারও ছিল কারণ অফিসে থাকলে সর্বসময় একটা টেনশন থাকতÑছেলেটা কী করছে? খেয়েছে কী না? কোনো বিপদ হয়নি তো! ইত্যাদি বিষয়গুলো আশপাশে ঘোরাফেরা করত। ওদের কাছে থাকলে আমি হয়তো অনেকটা টেনশন থেকে মুক্ত থাকব। বদলি হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন বাইরে কাটাই তারপর ছেলের পড়াশোনার কথা বিবেচনা করে অনেক চেষ্টা ও তদবির করে এখানে চলে আসি। ওর মায়ের মৃত্যু আর ওর একা থাকার বিষয়টা হয়তো পুনরায় বদলির জন্য সহায়ক হয়েছে। ফিরে আসার পর থেকে এই পর্যন্ত আর কোথাও যাওয়া হয়নি।

‘কাকাবাবু আসব?’

‘আরে বলে কী মেয়ে আসব মানে! এই বাড়িতে আসার জন্য তোর অনুমতি লাগবে কেন আগে সেটা বল?’

‘অনুমতি তো লাগবে না তারপরও ভদ্রতা আর কী।’

‘বেশ...তা তোর গাছের পেয়ারাগুলো পেঁকেছে বোধ হয়।’

‘তাই তো চলে এসেছি এগুলো তোলার জন্য।

‘হা হা হা...এজন্যই তাহলে সৌজন্যবোধ। চল আমি তোকে পেয়ারা পেড়ে দিব। আজ আমার মনটা অনেক খুশি জানিস।’

‘সেটা তো দেখতেই পারছি। তা কারণটা কী বলবে?’

‘রাজীব আসবে সহসাই।’

‘সত্যি কাকাবাবু! মাকে তাহলে আজই জানাতে হবে কথাটা।’

‘আগে শোন পুরো কথা তারপর বলিস। আমার সাথে কথা হয়েছিল ফোনে। তারপর বলল এই ডিসেম্বরে নাকি তার ভেকেশন আছে তাই সে সময়টা বাড়িতে আমাদের সাথে কাটাতে চায়। আমার সেই থেকে কেমন যেন অজানা আনন্দ ভর করেছে। ’

‘তুমি বড় বেশি ভালোবাস তো তাই এমন মনে হয়। সারাদিন একা কাটাও কীভাবে বল তো?’

‘ওরে পাগলি একা কোথায় এখন তো আমার একটা আড্ডা পার্টি আছে।’

‘আড্ডা পার্টি! কই আমাকে তো আগে কখনো বলনি? তা এই বয়সে নতুন করে কীভাবে বন্ধু জোগাড় করলে শুনি। উনারা কী সকলেই তোমার বয়েসি?’

‘বলতে পারিস। আমরা সকলেই রিটায়ার তাই হয়তো আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব হয়েছে।’

‘তাহলে তো আর আমার খেঁাজও নিবে না। ভুলে যাবে এই মেয়েকে।’

‘আরে বলে কী! মেয়েকে ভুলে কী থাকতে পারে কোনো বাবা।’

‘আচ্ছা এই বিষয়টা আমাকে এড়িয়ে গেলে কেন? তুমি তো আমাকে সবকিছু জানাতে কাকাবাবু।’

‘ওরে না এড়িয়ে যাইনি, ব্যপারটা হলো তুই তোর ভার্সিটির ফাইনাল এক্সাম নিয়ে ব্যস্ত ছিলি তাছাড়া আমিও বেশ কিছুদিন ওদের সাথে কাটিয়ে সময়টাকে পার করছিলাম। পরীক্ষার সময়টুকুতে তোকে আর নতুন করে কিছু বলতে চাইনি। ইচ্ছে ছিল তোকে সারপ্রাইজ দিব কিন্তু আজ মুখ ফসকে বলে ফেললাম। নাহ্ আমিও বুড়ো হয়ে গেছি কিছুই পেটে থাকল না।’

‘হা হা হা... সারপ্রাইজ তো এখনো দিলে। এই যে আমি জানতাম না তোমার বন্ধুমহলের কথা। যাক শুনে ভালোই হলো তোমাকে সবসময় সময় দেওয়া হয় না। নিজের মতো করে থাকাটা সত্যি প্রয়োজন তাই না কাকাবাবু।’

‘ঠিক বলেছিস। আড্ডাটা এখন জীবনের একটা প্রয়োজন হয়ে গেছে কারণ অবসরটা বুঝিয়ে দেয় জীবনের শেষ প্রান্তে বসবাস করছি।’

‘আবার শুরু করলে হতাশার বাণী। তোমাকে না কতবার বলেছি এগুলো ভাববে না। দেখ মৃত্যু এলে আমরা কেউই তো এড়িয়ে যেতে পারব না কিন্তু প্রতিনিয়ত মরে লাভ কী। তোমার আড্ডার অন্যান্যরাও কী এমনি ভাবে?’

‘ভাবতে হয় না মা ভাবনাগুলো এমনিতে চলে আসে। তাছাড়া সময়টাও আমাদের তেমনি বাস্তবিক হতে শেখায়।’

‘রাজীব কী জানে তোমার আড্ডা পার্টির কথা?’

‘বলেছিলাম কথা বলার সময়।’

‘নিশ্চয় শুনে খুশি হয়েছিল। তোমাকে একা এভাবে রেখে সেও টেনশনে থাকত। আমার সাথে কথা হলে বলত বাপিকে দেখে রাখিস।’

‘এইবার বুঝেছি এই কাকাবাবুর জন্য নয় রাজীবের কথায় আমার খেঁাজখবর নেওয়া হয় তাহলে।’

‘আরে না! রাজীব না বললেও কী তোমার খেঁাজখবর নেওয়া হতো না! তাছাড়া আমি না নেই বাবা কী তোমার খেঁাজ করতেন না। কাকাবাবু অনেকগুলো পেয়ারা পাড়া হয়ে গেছে আর লাগবে না। চলুন আজ বাপ-বেটি মিলে পেয়ারা বানানো খাই।’

মনটা এখন আর পেয়ারা পারার দিকে ঝুঁকছে না। আকস্মিক একটা অনুভব চটজলদি ভর করে বসল। বৃষ্টির পর রোদের ঝিলিকটাও তেমন একটা অনুভূতি দিতে পারেনি যতটা এই খবরটায় দিল। আমার খেয়াল আছে রাজীব যেদিন আমাদের বাসায় এসে বাবা-মাকে তার স্কলারশিপের কথাটা বলেছিল। সকলেই তাকে উৎসাহ আর বাহবা দিয়ে প্রশসংশিত করল। মা ফ্রিজে রাখা মিষ্টি এনে তাকে মিষ্টিমুখ করালেন। আমি কলেজ থেকে সবে মাত্র ফিরেছিলাম। বাসায় এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করি কিন্তু কেউ আমাকে কিছু বলেনি। আমি আর রাজীব ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি। বৈশাখী মেলায় যাওয়া, গোল্লাছুট, দাবা, মারামারি আরও কত স্মৃতি জড়িত শৈশবের। আমাদের মাঝে ঝগড়া হতো আবার কিছুক্ষণ পর একে অপরে কথা না হলে মন খারাপও হয়ে যেত। অভিমানগুলো তখন আর দীর্ঘ হতো না। বাসায় রাজীবকে একটা ভালো ছাত্র আর আমাকে সাধারণের মতোই মনে করা হতো। আমার অবশ্য এটাতে একটু কষ্ট হতো বরাবরই কারণ মায়ের বকুনি কম খাইনি প্রথম না হতে পেরে। আমার এটা একপ্রকার সয়ে গিয়েছে তাই সেদিনও তেমন একটা গুরুত্ব দেইনি। নিশ্চয় বিদ্যাসাগর মহাশয় কোনো বিষয়ে পারদশর্ীতা দেখাতে কিছু একটা বলেছে তাই বাবা-মা প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখানে আমি থাকলে কিছু তিক্ত বাণী আমাকে শুনতে হবে তাই কেটে পড়াই ভালো। আমার কামড়ায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে যাই। আমি জানি রাজীব আমাকে না জানিয়ে থাকবে না তাই জানার আগ্রহটা কম। কিছুক্ষণ পর সে নিজেই ছাদে আসে আমাকে বলতে।

‘তুই কী জানিস কেন আমাকে কাকীমুনি মিষ্টি খাইয়েছিল?’

‘আমাকে কটুকথা শোনানোর জন্য নিশ্চয় কিছু একটা করেছ তাই মিষ্টি মুখ করিয়েছে।’

‘আরে ধুর... অযথা আবল-তাবল বলিস। আমার একটা স্বপ্ন আজ পূর্ণ হলো তাই।’

‘কেমন স্বপ্ন?’

‘এটা নে, দেখ।’

‘কী এটায়?’

‘আ:হা: খুলেই দেখ না।’

খামটা খুলে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই পড়ে। তার সফলতা প্রশংসিত কিন্তু কেমন যেন মলিন হয়ে গেল চেহারা। আমি বিষয়টা সহজে মেনে নিতে পারিনি। কেন? সেটা জানা ছিল না। রাজীবের প্রতিটি সফলতাই আমাকে আনন্দ দিত। আমি নিজেই উল্লাসিত হয়ে উঠতাম কিন্তু আজকের এত বড় সফলতায় কেন সেরকম হয়নি। সেদিন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম ছোটবেলার সেই ঝগড়া-মারামারি আর খেলাধুলার মাঝে কখন যে মনের কোনে অল্প করে ভালোলাগার বিষয়টারও জন্ম হয়েছিল যা বুঝতে পারিনি কভুও। আজ যখন স্কলারশিপে সে দূরে চলে যাবে তখন অনুভবটা যেন আনন্দের হয়েও কষ্টময় ছিল। আমার খুশিতে উল্লাস করার কথা অথচ পারছি না। চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। চেহারায় মলিনতা ফুটে উঠেছে তবুও হাসি রাখার চেষ্টা করছি। আচমকা সে বলে উঠেÑ

‘আমি জানতাম তুই খুশি হবি না কারণ আজ তোকে আবার কাকীমুনি কটু কথা শোনাবে।’

‘তুমি এটা বলতে পারলে! তোমার সফলতায় আমার চেয়ে কেউ বেশি খুশি হয়নি আর হবেও না।’

‘তাহলে তোর চেহারা মলিন কেন?’

‘এই কেন এর উত্তরটা যে আমারও জানা নেই। কাকাবাবু জানে তোমার স্কলারশিপের কথা?’

‘চিঠিটা পেয়েছি ঘণ্টাখানেক আগে তাই বাপিকে বলা হয়নি। অফিস থেকে ফিরলে বলব। আমি এসেছিলাম তোকে প্রথম জানাতে কিন্তু হয়নি। কাকীমুনি সামনে পড়ল তাই উনাকেই বলেছি প্রথম।’

‘কাকাবাবু দিবেন তোমায় বিদেশে পড়তে?’

‘সমস্যাটাতো সেখানেই আর এজন্যই তোকে সাথে নিয়ে গিয়ে বলব। বাপি তোকে ভালোবাসে তাই তুই পাশে থাকলে না করতে পারবে না সহজে।’

‘এ বিষয়ে আমি তোমাকে সহযোগিতা করতে পারব না কারণ বিষয়টা উনার একান্ত নিজের এখানে আমি একটা বিরক্তির কারণ হব।’

‘তাহলে তুই আমার সাথে আসবি না?’

‘না। তোমার বিষয় তুমি নিজে বল গিয়ে।’

এক প্রকার রাগ করেই সে চলে যায়। আমি তখনো ছাদে দঁাড়িয়ে। কেমন যেন মিলিয়ে নিতে পারছিলাম না। আগে তো কখনো এমনটা হয়নি তাহলে আজ কেন? রাতে কাকাবাবুকে সে বললে তাদের মধ্যে বেশ বিতর্ক হয়। পারিবারিক বিষয় তাই আমার নাক গলানো উচিত হবে না আবার আমি নিজেও তো চাইনা সে চলে যাক। বেশ কয়েকদিন চলে বাপ-ছেলের বিতর্ক তারপর একদিন ছেলের অভিমানের কাছে বাবার ভালোবাসা হেরে যায়। যাওয়ার দিন এয়ারপোর্টে আমরা সকলেই গিয়েছিলাম। আমি দূরে দঁাড়িয়ে শুধু তাকিয়ে দেখছি। তার চেঁাখে-মুখে নতুনত্ব ও উচ্ছ্বাসের চিত্র স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। জীবনটাকে নতুনরূপে গড়ে তুলতে যাচ্ছে আর আমার কাছে মনে হচ্ছে বহু যতনে লালন করা কিছু অনুভূতি বিলিন হয়ে যাচ্ছে। সে সবার সাথে দেখা করে গেইট দিয়ে ঢোকার সময় দেঁৗড়ে ফিরে আসে আমার কাছে। হাত দুটো তার হাতে নিয়ে বলেÑ

‘আমার প্রতিটি সফলতায় তোর আনন্দ ছিল অথচ এবার সেটা পাইনি। আমার পৃথিবীর সবচেয়ে আপন দুজন মানুষ খুশি নয়।’

‘কোন দুজন?’

‘বাপি আর তুই।’

‘তুমি যেভাবে ভাবছ সেটা ভুল। আমি সকল কিছুতেই তোমাকে সফল দেখতে চেয়েছি তাই তোমার সফলতায় খুশি না হয়ে কী পারি! তুমি দূরে চলে যাবে এজন্যই হয়তো মন ভালো নেই আর একটা কথাÑকোনো বাবাই তার সন্তানের সফলতায় অখুশি থাকতে পারে না। তোমার ভাবনাগুলো ভুল। আমরা সকলেই বেশ খুশি।’

‘সত্যি বলছিস! যাক মনের একটা দ্বিধা দূর হলো।’

তার মনের দ্বিধা দূর হলো কিন্তু আমার? তার চোখে-মুখে ছিল নতুনত্বের ছেঁায়া আর আমার চোখ ছলছল করছিল। এনাউন্সমেন্ট শুনে সে তড়িঘড়ি করে ছুটে যাচ্ছে। আমি নির্বিকারে তাকিয়ে দেখছি তার চলে যাওয়া। যাওয়ার সময় ঠিকই বুঝেছিল আমরা দুটি মানুষ অখুশি। কাকাবাবু তার একমাত্র ছেলেকে না চাইতেও এত দূরে পাঠাচ্ছে তাই হয়তো তার মনটা বিষণ্ন দেখাতে পারে কিন্তু আমি কেন? প্রশ্নটা ছিল অথচ উত্তর তখনো অজানা।

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় ছাপা হবে]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়