প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫১
মন্টকের পথে এক দিন

শহরের কোলাহল আর ব্যস্ততা থেকে একটু দূরে, নিজের জন্য কিছু শান্ত মুহূর্ত খুঁজে নিতে আমরা কয়েক বন্ধু রওনা দিলাম। গন্তব্য নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের লং আইল্যান্ডে অবস্থিত মনোরম এক জায়গা মন্টক শহর। এটি নিউইয়র্কের সর্বশেষ প্রান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগরের কিনারে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পাশে অনেক দূরে ইউরোপের স্পেন-পর্তুগাল অবস্থিত।
ভোরবেলা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের রাস্তার পাশে প্রাকৃতিক দৃশ্য, ছায়াময় গাছগাছালি আর দূরে দেখা সমুদ্রের রেখা সব মিলিয়ে মনটা ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসে।
মন্টক রওনা হয়ে প্রথমেই ঢুঁ মারলাম রিভারহেড শহরের ওয়াইল্ডউড লেকের ধারে। লেকের ধারে হাঁটার জন্য রয়েছে অসাধারণ ট্রেইল। লেকের পাশটায় দাঁড়িয়ে হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে গেল। পাখির ডাক, জলের ওপর সূর্যের ঝিলমিল প্রতিফলন আর চারপাশের সবুজে মোড়ানো পরিবেশ যেন আমাদের মনকে একদম নতুনভাবে জাগিয়ে তুলল। কিছুক্ষণ লেকের ধারে বসে প্রকৃতির সঙ্গে একান্তে শান্ত ও মনোরম পরিবেশে কাটানোর পর আমরা আবার রওনা দিলাম পরবর্তী গন্তব্যে।
গাড়ি নিয়ে পৌঁছালাম গ্রিনপোর্ট শহরে। সেখানে একটি ছোট ফেরিতে চড়ার সুযোগ পেলাম। ফেরিটি যাবে শেল্টার আইল্যান্ড। ফেরির ডেকে দাঁড়িয়ে চারপাশে শুধু জল আর আকাশ। মনে হচ্ছিল যেন সময় কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেছে। হালকা বাতাস মুখে লাগছিল আর দূরে দেখা যাচ্ছিল ছোট ছোট দ্বীপ ও মাছ ধরার নৌকা দেখে বুঝলাম জীবন এখানেও কী শান্ত, ছিমছাম আর অপরূপ। এই ফেরিযাত্রা ছিল স্বল্প কিন্তু মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতা।
প্রায় চার ঘণ্টার যাত্রা শেষে পৌঁছাই মন্টক লাইটহাউস। এটি নিউইয়র্কের একদম পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত, যাকে বলা হয় মন্টক পয়েন্ট। মন্টক শহরের বিশেষ আকর্ষণ হলো মন্টক লাইটহাউস। দূর থেকে দেখা লাল-সাদা লাইটহাউসটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন শত বছরের ইতিহাসের সাক্ষী। জানা গেল এটি নিউইয়র্কের প্রথম এবং দেশের চতুর্থ প্রাচীনতম বাতিঘর, নির্মিত হয়েছিল ১৭৯৬ সালে। লাইটহাউসে উঠে যখন ওপরের বারান্দা থেকে চারপাশে তাকালাম, মনে হলো যেন একটা বিশাল ক্যানভাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি।
চারপাশে নীল আকাশ, তার নিচে শান্ত অথচ গর্জনরত সাগর আর ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়ছে পাথুরে উপকূলে। সত্যিই এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য! সাগরের ধারে বসে কিছুক্ষণ কাটালাম, ছবি তুললাম, গল্প করলাম। শহরের চাপ আর দায়িত্বগুলো যেন অনেক দূরে ফেলে এসেছি। এই ছোট্ট সফর আমাদের মনে করিয়ে দিল জীবনের ব্যস্ততার মাঝে এমন নিঃশব্দ সুন্দর মুহূর্তগুলো কতটা দরকার। মন্টক লাইটহাউস শুধু একটা দর্শনীয় স্থান নয়, বরং নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার একটা ঠিকানা।