সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:০১

বর্ষার ভরা মৌসুমেও পানির সংকটে বিপদে পাটচাষি

কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক
বর্ষার ভরা মৌসুমেও পানির সংকটে বিপদে পাটচাষি

আষাঢ় মাস। বর্ষা ঋতুর ভরা যৌবন থাকার কথা। আকাশে মেঘ, হালকা বৃষ্টি হলেও চাঁদপুরের মাঠে মাঠে নেই নদীর জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ। বর্ষায় মাঠে পানিতে টইটম্বুর থাকার কথা, কিন্তু এবার সেই পানিই যেন কৃষকদের জন্যে সবচেয়ে বড়ো সংকটে পরিণত হয়েছে।

পাট চাষের মৌসুম চলছে। পাট কেটে পানিতে ‘জাগ’ দেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন। কিন্তু পানির অভাবে কৃষকরা বাধ্য হয়ে পুকুর ও বদ্ধ জলাশয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে পাটের রঙ কালচে হয়ে যায়, গুণগত মান নষ্ট হয়। ফলে বাজারে এই পাটের দামও পড়ে যায়।

চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের পাটচাষি হুমায়ূন কবির (৬৫) বলেন, প্রতি বছর নদীর পানি বাড়লে জমির ধারে আমরা পাট জাগ দিতাম। সেই পানিতে পাটের আঁশ সোনালি হতো। এবার নদীতে পানি নাই, মাঠ শুকনা। পুকুরের পানিতে জাগ দিলে আঁশ কালা হয়ে যায়। দামও কম পাই।

হাইমচরের চরভৈরবী এলাকার কৃষাণী আশুরা বেগম জানালেন, আমি এক একর জমির পাট কাটছি। এখনো জাগ দিতে পারিনি। পুকুরে জাগ দিলে পাটের মান নষ্ট হইবো, বাজারে কেউ ভালো দামে নিবো না। চলমান পানির প্রবাহে পাট জাগ দিলে আঁশ হয় উজ্জ্বল ও মসৃণ। কিন্তু স্থির বা বদ্ধ পানিতে জাগ দিলে আঁশ হয় কালচে ও মোটা, যা বাজারে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এতে কৃষকের ক্ষতি দ্বিগুণ হয়।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, এ বছর চাঁদপুর জেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে প্রকৃত বর্ষার পানি এখনো মাঠে আসেনি। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন বিকল্প পদ্ধতি শেখাচ্ছি, যেন তারা অন্তত পাটের ক্ষতি কমাতে পারেন।

সমাধান কী হতে পারে?

* খাল ও বিলে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা

* পাট জাগ দেওয়ার জন্যে কৃত্রিম জলাধার তৈরি

* উন্নত পাট জাগ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ ও প্রচার

* কৃষকদের প্রণোদনা ও বাজার সহায়তা দেওয়া

এই পদক্ষেপগুলো দ্রুত নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি কমবে বলে তিনি মনে করেন।

আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষা যেখানে কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর কথা, সেখানে এখন সেই বর্ষাই হয়ে দাঁড়িয়েছে দুশ্চিন্তার কারণ। পাট বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য। তাই পাটচাষিদের সুরক্ষা এবং পাটের গুণগত মান বজায় রাখতে কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপ সময়ের দাবি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়