শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:১০

চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনের উপায়

আব্দুর রাজ্জাক
চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনের উপায়

চাঁদপুর শহরের অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ এতটাই বেড়ে গেছে যে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। বিশেষত তালতলা থেকে কালীবাড়ি মোড়, ছায়াবাণী, চিত্রলেখা সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকা হয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরো পথটি যেন নিয়মহীন চলাচলের এক নৈরাজ্যিক চিত্র।

যানজটের প্রতিদিনের চিত্র

তালতলা এলাকা চাঁদপুর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এখানে ব্যাপক যানজট দেখা যায়। এই সড়কটি সরু, অথচ একই পথে চলাচল করে রিকশা, অটোরিকশা, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি। তার ওপর নির্ধারিত কোনো পার্কিং নেই, নেই একমুখী চলাচলের নির্দেশনা। ফলে সামান্য একটি ঘটনার জেরেই সৃষ্ট হয় দীর্ঘ যানজট।

কালীবাড়ি মোড়ের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এখান থেকে ছায়াবাণী ও চিত্রলেখা এলাকার দিকে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটের পাশে অবৈধ দোকান, হকার, ঠেলাগাড়িÑসব মিলিয়ে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। চিত্রলেখা থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তাটি তুলনামূলক প্রশস্ত হলেও, বাস থামানো, যাত্রী ওঠানামা এবং রিকশা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট এখানেও স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে।

সমস্যার গভীরতর কারণ

চাঁদপুর শহরের যানজট সমস্যার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতমÑ

দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা : প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ না থাকা, বিভিন্ন মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশদের নিষ্ক্রিয়তা এবং আধুনিক সিগনাল ব্যবস্থার অভাব যানজট বাড়িয়ে তুলছে।

অবৈধ পার্কিং ও দখলদারি : প্রায় সব মোড়েই রাস্তার পাশে রিকশা, সিএনজি দাঁড় করানো হয়। ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করেন হকাররা। এতে পথচারীদের বাধ্য হয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয়।

রাস্তার দৈন্যদশা ও সংকীর্ণতা : অধিকাংশ রাস্তা ভাঙাচোরা ও অসমান। কোথাও কোথাও ড্রেনের কাজ চলমান। রাস্তা পুনঃনির্মাণ বা সম্প্রসারণ না হওয়ায় যানজট স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনসচেতনতার অভাব : চালকদের নিয়ম না মানা, পথচারীদের যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়া, এবং হর্ণ বাজিয়ে আগাতে চাওয়ার মতো মানসিকতা শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে।

করণীয় ও সুপারিশ

যানজট নিরসনের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেÑ

একমুখী ট্রাফিক চালু : বিশেষ কিছু রাস্তায় যেমন তালতলা থেকে কালীবাড়ি পর্যন্ত একমুখী ট্রাফিক চালু করে গতি বাড়ানো সম্ভব। বিকল্প পথে ফিরতি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন : মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বৃদ্ধি, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও ডিজিটাল সিগনাল ব্যবস্থার প্রয়োগ জরুরি।

হকার উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন : অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে নির্দিষ্ট হকার জোন তৈরি করে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। এতে একদিকে যেমন যানজট কমবে, অন্যদিকে হকারদের জীবিকার নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

বাস ও রিকশা স্টপেজ নির্ধারণ : যাত্রী ওঠানামার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করলে রাস্তায় অপ্রয়োজনীয় দাঁড়ানো বন্ধ হবে। এতে যান চলাচলের গতি বাড়বে।

জনসচেতনতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা : স্কুল-কলেজ, সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

নাগরিকদের অংশগ্রহণ

যানজট সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা যদি নিজেদের করণীয়গুলো ঠিকভাবে পালন করিÑযেমন রাস্তায় নিয়ম মেনে চলা, নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্ক করা, হকাররা নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবসা করাÑতাহলেই শহর হয়ে উঠবে সচল ও স্বস্তিদায়ক।

চাঁদপুর শহর তার নদীমাতৃক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। এই সম্ভাবনার শহরের বিকাশে যদি যানজট সমস্যার সমাধান করা যায়, তবে চাঁদপুর হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম পরিকল্পিত শহর।

চাঁদপুর শহরের যানজট একটি সমাধানযোগ্য সংকট। প্রগতিশীল প্রশাসনিক পরিকল্পনা, দায়িত্ববান নাগরিক আচরণ এবং সম্মিলিত সচেতনতার মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। সময় এসেছেÑআমরা সকলে মিলে এই শহরকে আবারও ফিরে দিই তার প্রাণচঞ্চল গতি ও সৌন্দর্য।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়