মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫

জাতীয়করণই পারে শিক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ করতে

মো. সিদ্দিকুর রহমান
জাতীয়করণই পারে শিক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ করতে

আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য মোটামুটি ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে তারা সন্তানদের শিক্ষা সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেন। যারা নিম্নবিত্ত, তথা দরিদ্র পরিবারের সন্তান, তাদের অভিভাবকেরা লেখাপড়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়। স্বাধীনতার পর বেশিরভাগ সরকারই গরীব মানুষের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে ভাবনাহীন।

মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, নীতিনির্ধারকদের মাঝে নিজেদের সন্তানদের শিক্ষা তথা উন্নয়ন নিয়ে ভাবনা বিদ্যমান। এর ফলে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আমাদের দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। সর্বস্তরে শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে না পারলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষার উন্নয়ন না হলে জনগণ তথা রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। রাষ্ট্র এ বোধগম্যতা আন্তরিকতার সাথে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি।

এ প্রেক্ষাপটে একটা উদাহরণের অবতারণা করছি : বিশাল বিলাসবহুল অট্টালিকার চারপাশে যদি বস্তি, অশিক্ষিত, নেশাগ্রস্ত লোকজন বসবাস করে, তখন সে অট্টালিকার সমস্ত সৌন্দর্য নোংরা পরিবেশের মাঝে ম্লান হয়ে যায়। তেমনি তৃণমূলের সকলের শিক্ষা ছাড়া গুটিকতকের শিক্ষা তেমন কোন কাজে আসেনা। আমাদের দেশের অনেক গরীর মানুষ তাদের সন্তানের শিক্ষার জন্য সকল সহায় সম্পদ বিক্রি করে দেয়। তাদের শিক্ষা নিয়ে যথার্থ ভাবনা রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের সরকারগুলো মাঝে এ ভাবনা দৃশ্যমান নয় ।

তারা সামান্য কিছু করলে, বাদ্য বাজায় অনেক বেশি। ইদানিং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ১৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া দিতে সরকারের জান-প্রাণ বাহির হওয়ার পালা। শিক্ষকদের আন্দোলনের চরম অবস্থায় যেতে হয়েছিল। ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া দেওয়ার পর সে কী আনন্দ। যেখানে দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করে বলার কথা, পুলিশের লাঞ্ছনা ও সরকারি সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মচারীদের মতো ৪৫ শতাংশ দিতে না পারায় সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার কথা। সেখানে এ বোধটুকু উদয় হয়নি। শিক্ষকেরা কী সন্ত্রাসী? তাদের এভাবে মারধর কেন করতে হলো? এ বিষয়ে সরকারের তথা শিক্ষা মন্ত্রণানালয়ের কোন অনুশোচনা দৃশ্যমান নয়।

বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদে উচ্চ পর্যায়ের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকরা শিক্ষকরা রয়েছেন। অথচ শিক্ষা তথা শিক্ষকদের নিয়ে ইতিবাচক কাজ কর্ম দৃশ্যমান নহে। উপদেষ্টা হয়ে, শিক্ষকের পদমর্যাদা যে সর্বশীর্ষে, এ সত্যটা হয়তো তাদের মাঝ থেকে অনেকটা হারিয়ে গেছে। শিক্ষক লাঞ্ছনায় আশা করেছিলাম, কমপক্ষে পুরো উপদেষ্টাদের মনে নাড়া দেবে। ব্যথিত মনে বলতে হচ্ছে, যারা সিংহাসনে থাকে, তারা কেন যে, অতীত মনে রাখেনা। রাষ্ট্রকে উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়াতে হলে, তৃণমূলের দরিদ্র মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর সমান বেতন দিতে হবে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নত পাঠদান হয়ে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা উচ্চ শিক্ষিত ও শিশু শিক্ষায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তারা শিশুর বয়স, রুচি ও সামর্থ্য অনুযায়ী মনোবিজ্ঞান সম্মত পাঠদান করে থাকেন। এর ফলে তাদের শারীরিক, মানসিক ও মেধার বিকাশ হয়ে থাকে। কিন্ডারগার্টেন, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ বিদালয়ের প্রাথমিক শাখায় শিশু শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। সেহেতু তারা শিশুর চাহিদা অনুযায়ী মনোবিজ্ঞান সম্মত পাঠদান করতে সক্ষম হয়না। তাদের শিক্ষা পরীক্ষা নির্ভর। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা জ্ঞান অর্জনমুখী।

শিশু শিক্ষায় উন্নত পাঠদানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এগিয়ে। মানসম্মত জ্ঞাননির্ভর পাঠদানের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। অনতিবিলম্বে আধুনিক নির্মিত সুসজ্জিত ৫০০ অধিক ভবনের প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা সমৃদ্ধ করে, সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের দাবি রইলো। সাথে সাথে শিক্ষক নিয়োগসহ বিদ্যালয়গুলোকে জুনিয়র উচ্চ বিদালয়ের মর্যাদা দিয়ে প্রধান শিক্ষকদের নবম, সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদান করা হোক। শিক্ষকদের পাশাপাশি সকল পর্যায়ে জবাবদিহিতা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়