প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৭
প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাক্ষাৎকার : মো. আব্দুল মান্নান
শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষায় গড়ে তুলতে চাই

মো. আব্দুল মান্নান বাজাপ্তী রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি এ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে গণ্ডামারা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে হাইমচরের শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
|আরো খবর
মো. আব্দুল মান্নান প্রায় ৩২ বছর শিক্ষকতা করছেন। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা চারবার উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। ২০১৮ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। শিক্ষকনেতা হিসেবেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ২০১৪ থেকে অদ্যাবধি তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া হাইমচর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থায় ১১ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলা স্কাউটের কোষাধ্যক্ষ।
মো. আব্দুল মান্নান ১২ অক্টোবর ২০২৫ দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘শিক্ষাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলআমিন হোসাইন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
মো. আব্দুল মান্নান : আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষকতা পেশায় কীভাবে এলেন?
মো. আব্দুল মান্নান : ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার প্রবল আগ্রহ ছিল। ১৯৯৪ সালে গণ্ডামারা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করি। সেখানে ১৭ বছর শিক্ষকতা করেছি। ২০০৭ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাই। ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর বাজাপ্তী রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ছাত্রজীবন থেকেই পড়ানো শুরু করেছি। আমার অনেক শিক্ষার্থী দেশ ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিন কেমন কেটেছে?
মো. আব্দুল মান্নান : শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিনটি বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। তখন আমি নিজেই মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। আমি ইংরেজির শিক্ষক, কিন্তু প্রথম দিন যখন ক্লাসে যাই আমাকে তখন গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে প্রথমে স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছিল। পরে শিক্ষকতা উপভোগ করতে শুরু করি এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করি। ১৯৯৪ সালে আমিই প্রথম গণ্ডামারা স্কুলে কুচকাওয়াজ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক কে? কেন প্রিয়?
মো. আব্দুল মান্নান : চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের খলিলুর রহমান স্যার আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষক। তাঁর জ্ঞান ও ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি আমার কাছে আদর্শ শিক্ষক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলুন।
মো. আব্দুল মান্নান : বাজাপ্তী রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। দেশবরেণ্য অনেক শিক্ষার্থী এখানে পড়েছেন। মেঘনার ভাঙ্গনের শিকার হলেও বিদ্যালয়টি গৌরবের সঙ্গে টিকে আছে। ২০১৬ ও ২০২৩ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আমরা সবসময় শিক্ষার মান ও সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করি। বিদ্যালয়ের পরিবেশ যেনো শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে সে চেষ্টা করি। আমাদের সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে, যেখানে ১৭টি ল্যাপটপ আছে। এতে শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞানার্জন করতে পারে। এছাড়া এখানে উপজেলার আইসিটিভিত্তিক শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. আব্দুল মান্নান : শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে চাই। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে এখানে পড়ুকÑএটাই আমাদের লক্ষ্য। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। আমাদের নতুন একটি ভবনের প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ৭টি শিক্ষক পদ শূন্য। এর মধ্যে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক; সহকারী শিক্ষক ভৌত বিজ্ঞান, ইসলাম শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা। এছাড়া তিনটি অতিরিক্ত শাখার অনুকূলে তিনজন সহকারী শিক্ষক প্রয়োজন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন।
মো. আব্দুল মান্নান : ২০২৪ সালে শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ক্রিকেটে উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আমাদের প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা ফুটবল, কাবাডি, সাঁতার, ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন খেলায় শিক্ষার্থীরা কৃতিত্ব দেখিয়েছে। শিক্ষার্থীরা পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। সেখানে তারা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নসহ নানা কৃতিত্ব অর্জন করেছে। ২০২৫ সালে গ্রাফিতি প্রতিযোগিতায় উপজেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে আমাদের শিক্ষার্থীরা। আমাদের সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বই পড়ে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসর সময়ে কী করেন?
মো. আব্দুল মান্নান : বই পড়ি, দাবা খেলি এবং ঘুরতে পছন্দ করি।
উল্লেখ্য, মো. আব্দুল মান্নানের স্ত্রী শাহিনা আক্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ছেলে মুকিত আল মাশরাফি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। মেয়ে রুবাইয়া শিকদার দশম শ্রেণিতে পড়ছে। ২০২৩ সালে রুবাইয়া চট্টগ্রাম বিভাগে বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে এবং জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে।
মো. আব্দুল মান্নান ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা হাইমচরে। এসএসসি দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, এইচএসসি ফরিদগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, স্নাতক চাঁদপুর সরকারি কলেজ এবং স্নাতকোত্তর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন।