মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৯

দরিদ্র মেধাবীদের রক্ষা করুন

এস. এম. হাসানুজ্জামান
দরিদ্র মেধাবীদের রক্ষা করুন

দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে সেই মানুষদের হাত ধরে, যারা মেধাবী, সততাবান এবং দেশপ্রেমিক। কিন্তু মেধা যদি দরিদ্রতার বাঁধনে আটকে থাকে, তাহলে জাতির সম্ভাবনা চরমভাবে সীমিত হয়। আমাদের সমাজে অসংখ্য তরুণ মেধাবী রয়েছে, যারা শুধু নিজস্ব উন্নতির জন্য নয়, দেশের কল্যাণের জন্যও আগ্রহী। তারা চায় দেশের সমস্যাগুলি সমাধান করতে, দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে এবং সমাজের জন্য নতুন দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি করতে। কিন্তু তাদের সম্ভাবনা প্রকাশের জন্য প্রয়োজন সুযোগ, অর্থনৈতিক সহায়তা এবং নৈতিক সমর্থন। আজকের বাস্তবতা দুঃখজনক।

দেশের একটি অংশের মানুষ, যারা ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করছে, তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহার করছে। তাদের মধ্যে এমনও রয়েছে যাদের শিক্ষার জন্য দেশের জনগণ অর্জিত অর্থই ব্যয় করা হয়, কিন্তু তারা দেশে ফিরে এসে অবদান রাখে না। একজন নেতার ছেলে, উদাহরণস্বরূপ, অবৈধ অর্থের সাহায্যে বিদেশে পড়াশোনা করছে, কিন্তু দেশে ফিরে আসে না। এটি কেবল ব্যক্তিগত লোভ নয়; এটি জাতির প্রতি একটি সরাসরি বেঈমানি।

দেশের মানুষ তাদের আস্থা দিয়ে শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে, কিন্তু সেই আস্থা ব্যর্থ হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। দরিদ্র মেধাবীদের রক্ষা করা শুধু ন্যায়ের দাবি নয়, এটি জাতির স্থায়ী অগ্রগতির একান্ত প্রয়োজন। আমাদের উচিত এই মেধাবীদের জন্য বৃত্তি, অনুদান এবং শিক্ষামূলক সহায়তার ব্যবস্থা করা, যাতে তারা নিজস্ব মেধা এবং শ্রম দিয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পারে। মেধাবী তরুণরা যদি সুযোগ পায়, তারা শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, সমাজসেবা প্রত্যেক ক্ষেত্রে দেশের মানোন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম। কিন্তু যদি তারা উপেক্ষিত থাকে, দেশের সম্ভাবনা হারিয়ে যায়।

নৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্ব এখানে অপরিসীম। একজন নেতার পরিবারের সদস্যরা যদি স্বার্থপর হয়ে দেশের সুযোগ-সুবিধা দখল করে, তখন তা সমাজে উদ্দীপনা এবং আস্থা ধ্বংস করে। নেতৃত্ব মানে শুধু ক্ষমতা নয়; নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব, সততা এবং দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি। একজন নেতার দৃষ্টান্তই পুরো সমাজে নৈতিক মান স্থির করে। যখন নেতা নিজের পরিবারের মধ্যেও নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, তখন সমাজের যুবকরা দেখবে শুধু ধনলিপ্সা এবং সুবিধাবাদী মনোভাব। এটি দেশকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দরিদ্র মেধাবীদের রক্ষা করা মানে শুধু তাদের অর্থনৈতিক সাহায্য করা নয়; মানে তাদের আত্মবিশ্বাস, চেতনাশক্তি এবং প্রেরণা বৃদ্ধি করা। মেধাবী এই তরুণরা যদি সমাজের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে, তারা দেশের জন্য এক নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি করবে। তারা উদ্ভাবন ঘটাবে, নতুন প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি করবে, সমাজের জন্য নৈতিক ও বাস্তব সমাধান নিয়ে আসবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করার জন্য যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে দেশের সম্পদ অপচয় করছে, তারা শুধুই দেশের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষা হলো জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু এটি যদি নিরপেক্ষভাবে বিতরণ না হয়, তবে মেধার সম্ভাবনা অপচয় হয়। দরিদ্র মেধাবীদের জন্য শিক্ষামূলক সুযোগ নিশ্চিত করা মানে দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।

জাতির নেতৃত্ব, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সবক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি হয়। এদের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগ, বৃত্তি, শিক্ষামূলক অনুদান, এবং সমর্থন প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। এদিকে, যারা ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের উচিত নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। একজন নেতার সন্তান যদি দেশের সম্পদ দিয়ে বিদেশে যায়, কিন্তু দেশে ফিরেই অবদান না রাখে, তা জাতির প্রতি বিশ্বাসকে দুর্বল করে। এই ধরনের প্রক্রিয়ায় দেশের মেধাবী এবং সৎ যুবকরা হতাশ হয়।

সমাজে অসাম্য ও অনিয়মের সংস্কৃতি তৈরি হয়, যা দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। নৈতিক নেতৃত্বের অভাব মানে দেশের স্বপ্নের ধ্বংস। আমরা লক্ষ্য করি, দরিদ্র মেধাবীদের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। তারা সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে চায়। তারা উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, সমাজসেবা, শিক্ষা, এবং শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের মানোন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু তারা যদি সুযোগ না পায়, তবে দেশের সম্ভাবনা অপচয় হয়।

অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমর্থন না পেলে, এদের প্রতিভা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং দেশের অগ্রগতি স্থগিত হয়। দেশের উন্নয়নের জন্য দরিদ্র মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানো অপরিহার্য। এটি শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি দেশের স্থায়ী অগ্রগতির প্রয়োজন। তাদের শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো, আর্থিক সাহায্য প্রদান, নৈতিক এবং মানসিক সমর্থন নিশ্চিত করাÑএগুলি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের মাধ্যমে দেশের নেতৃত্ব, নতুন উদ্ভাবন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, শিল্প, সাহিত্য এবং সমাজসেবার মান বৃদ্ধি পায়। একজন দেশের নাগরিক হিসেবে, আমাদের অবশ্যই দরিদ্র মেধাবীদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করতে হবে। সমাজে সঠিক নীতি ও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। একজন নেতা ও প্রভাবশালীর উচিত দেশের সম্পদ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ব্যবহার না করে, দেশের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

মেধাবী যুবকরা যদি সুযোগ পায়, তারা দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে। তারা সমাজের নৈতিক মান বৃদ্ধি করবে এবং দেশের উন্নয়নের অগ্রদূত হবে। দরিদ্র মেধাবীদের রক্ষা করা মানে জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণ করা। তাদের প্রতিভা ও শ্রম দেশের কল্যাণে কাজে লাগানো আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। দেশপ্রেমিক, সততার সঙ্গে কাজ করা তরুণরা একদিন দেশের গর্ব, জাতির অহংকার এবং সমাজের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠবে। আজকের শিক্ষার সঠিক দিকনির্দেশনা আগামী দিনের শক্তিশালী জাতির ভিত্তি স্থাপন করবে। তাই দরিদ্র মেধাবীদের পাশে দাঁড়ান, তাদের উৎসাহিত করুন, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিন।

দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো শুধু নিজেদের স্বার্থ নয়, দেশের ভবিষ্যতের কথা ভাবা। যে জাতি তার মেধাবী তরুণদের মান্যতা দেয়, সেই জাতিই ইতিহাসে সাফল্য বঞ্চিত হয়নি। দরিদ্র মেধাবীরা যদি সুযোগ পায়, তারা দেশকে প্রযুক্তি, শিল্প, সাহিত্য, এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। কিন্তু যারা ক্ষমতার শীর্ষে থেকে দুর্নীতি ও লোভে মত্ত, তারা জাতির সম্পদ নিঃশেষ করছে। একজন নেতার দৃষ্টান্তই পুরো সমাজের নৈতিক মান নির্ধারণ করে। যদি নেতা এবং তাদের পরিবার দেশের সম্পদকে ব্যয়বহুল স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত থাকে, তবে যুব সমাজের মানসিক দিক থেকে ক্ষতি হয়। মেধাবী তরুণরা যখন হতাশ হয়, তখন দেশের ভবিষ্যৎও সংকটে পড়ে।

শিক্ষা, নৈতিক নেতৃত্ব, আর্থিক সহায়তাÑএই তিনটি উপাদান দরিদ্র মেধাবীদের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। মেধাবী এই তরুণরা সুযোগ পেলে, তারা দেশের জন্য নেতৃত্ব, উদ্ভাবন, এবং সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। আমাদের উচিত তাদের জন্য শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যবস্থা করা। দেশের উন্নয়নের ভিত্তি হলো মেধা। মেধা যদি সমাজে সমানভাবে বণ্টিত হয়, তবে দেশ অগ্রগতিতে অনন্য স্থান দখল করতে সক্ষম। কিন্তু যদি সমাজের অনৈতিক প্রভাব, ধনলিপ্সা, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ মেধাবীদের পথ বন্ধ করে, তখন দেশের সম্ভাবনা হারিয়ে যায়। একজন দেশের নাগরিক হিসেবে, আমাদের উচিত দেশের মেধাবী তরুণদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের সুযোগ দেওয়া, তাদের প্রতিভাকে মর্যাদা দেওয়া এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করা। এই তরুণরা একদিন দেশের গর্ব, জাতির অহংকার এবং সমাজের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠবে। তাই দরিদ্র মেধাবীদের রক্ষা করা মানে শুধু ন্যায় নয়, এটি দেশের স্থায়ী অগ্রগতির একান্ত প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়