মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৮

ঠিকানাহীনের ঠিকানায় ফেরা

আবদুল হামিদ
ঠিকানাহীনের ঠিকানায় ফেরা

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। এক দশকের পথ চলায় কিভাবে ঠিকানাহীন থেকে নিজেকে ঠিকানায় পরিণত করা যায় তার বাস্তব উদাহরণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান সমিতি। মানুষ তার স্বপ্নের কাছাকাছি। স্বপ্ন দেখতে হয় বুক ভরা সাহস নিয়ে। এগিয়ে যেতে হয় সৎ ও নির্ভীকভাবে। তবেই সে স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ধরা দেয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের কিছু গুণীজন শিক্ষক এবং বিভাগ অন্তপ্রাণ প্রাক্তন শিক্ষার্থী এক দশক আগে স্বপ্নচারী হয়েই গড়ে তুলেছিল তাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান হিসাব বিজ্ঞান সমিতি। মানুষ স্বপ্নচারী হয়েছিল বলেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন থেকে উড়োজাহাজ বানিয়েছিল। তেমনি ভাবে প্রথমে লালখান বাজারস্থ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের থেকে ঠিকানাহীন ভাবে শুরু করে পাঁচলাইশস্থ টেকনাফ সমিতির অফিস হয়ে আজ চট্টগ্রাম ঢাকার প্রাইম লোকেশনে গর্বের সাথে দাঁড় করিয়েছে দু দুটি অফিস ও রেস্ট হাউস।

কিন্তু এ চলার পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। লোবান বাতি যেমন নিজে পুড়ে তবেই তার চারিদিকে সৌরভ ছড়ায়। তেমনি সমিতি অনন্ত প্রাণ কিছু প্রাক্তনের দিনের পর দিনের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সময় সমিতির জন্য ব্যয় করে , নিঃস্বার্থভাবে শ্রম দিয়ে এবং কখনো কখনো অর্থ ব্যয় করে আজকের এ অবস্থানে আসতে হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে নিজেদেরকে সমিতির জন্য মেলে ধরে কোন লজ্জা বা সংকোচের ধার না ধরে কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা কখনো লজ্জায় ফেলে বিন্দু বিন্দু আয় সংগ্রহ করেই আজকের এ মহিরুহকে দাঁড় করিয়েছে । তাই আজ এ সমিতি সে সব দানবীর মানবিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ ও দায়বদ্ধ।

একটা দীর্ঘ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অন্যতম আবদার করার জায়গার নাম ছিলÑচট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যা সে সময় একটা গর্বের বিষয় ছিল। এটি গর্বের বিষয় এ জন্য Ñসমিতির সূচনা লগ্নে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থ ও হিসাব এবং অডিট বিভাগের একদম সর্বশেষ ধাপের কর্মচারী জুনিয়র একাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে বিভাগের প্রতিটি ধাপের জুনিয়ার সিনিয়ার কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রধান বা চীফ ফাইনান্স, মেম্বার ফাইনান্স এমনকি চেয়ারম্যান পর্যন্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। সঙ্গত কারণে যে শিক্ষকেরা তার ছাত্রদের লিখিয়ে পড়িয়ে বড় করেছেন তাদের কাছেই তারা সে দিনগুলোতে ছুটে গিয়েছিলেন। তখন বলা হতো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাব এবং অডিট বিভাগ যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের চট্টগ্রাম শহরের ক্যাম্পাসের মতই মনে হত। সে সময় অর্থ ও হিসাব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অর্থাৎ চীফ ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন জনাব হারুন মিয়া। পাশাপাশি আমি ছিলাম ক্যাশ এন্ড ব্যাংকিং শাখার দায়িত্বে ,স্যার পেশাদারিত্বের খোলস ছেড়ে আমাকে বলতেন সবার থেকে এডভার্টাইজমেন্ট কালেকশন করতে হবে হামিদ। যেই কথা সেই কাজ। যে কোন পার্টি চেক নিতে আসলেই সেকশান ইনচার্জ একাউন্টেন্ট তাকে সাথে করে নিয়ে আসতেন আমার চেম্বারে। বাকিটুকু আর নাইবা বলি। আমার মনে পড়ে স্যার তার চেম্বারে এবং সমিতির মিটিংয়ে শুধু একটি রড কোম্পানির এডভারটাইজমেন্টের স্লোগানকে সমিতির আগামী দিনের গন্তব্য হিসেবে বলতেনÑ“শেখড় থেকে শিখরে।” সত্যিই তার জীবদ্দশায় তিনি তা দেখলেন।

সেদিনের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ পদসহ একাউন্টস ও অডিট বিভাগে কর্মরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন ছাত্রদের প্রায় সবাই আজ অবসর জীবনযাপনে আছেন। কিন্তু যখন দেখি বিগত এক দশকে চট্টগ্রাম ঢাকায় ঠিকানাহীন হয়ে যাত্রা করা একাউন্টিং সমিতি আজ নিজেই দু জায়গায়ই দুটি ফ্লাট নিয়ে আমাদের অনেকের ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন কৃতজ্ঞতায় বুক ভরে যায়Ñপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি, প্রিয় বিভাগের প্রতি, প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি, প্রিয় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতি এবং সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা জানাই সেসব গুণী মহতপ্রাণদের প্রতি যাদের আর্থিক সহযোগিতায় আমাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল। এ দীর্ঘ যাত্রায় সমিতির স্বপ্নচারী সভাপতি সুলতান স্যারের যোগ্য নির্দেশনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমিতির অগ্রযাত্রাকে সফল করেছেন তাদের সবার প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একাউন্টিং সমিতির পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। সবশেষে সমিতিতে ইতিপূর্বে এবং এখনো সার্বক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট আমার অগ্রজ এবং অনুজদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

আবদুল হামিদ : হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ১৮তম ব্যাচ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়