প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪৭
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অভাবনীয় সাফল্য!
প্রথমবারের মতো বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন ২ জন
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচ হিসেবে আমার কাছে অনেক গৌরবের এবং সম্মানের এই ফলাফল'-------ডা. মুহাম্মদ তাসনিমুল হাসান

৪৮তম বিশেষ বিসিএস ক্যাডার (স্বাস্থ্য)-এ চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ২ জন। তাঁরা দুজনই ২০১৮-১৯ সেশনের চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মে ২০২৪-এ ফাইনাল পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। সুপারিশপ্রাপ্তরা হলেন ডা. মুহাম্মদ তাসনিমুল হাসান এবং ডা. মো. শাহরিয়ার হক মজুমদার। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরুর প্রথম ব্যাচেই এমন সাফল্যকে 'অভাবনীয় সাফল্য' হিসেবে দেখছেন কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী এবং শিক্ষার্থীরা।
|আরো খবর
ডা. মুহাম্মদ তাসনিমুল হাসানের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়ায়। পিতা আনোয়ারা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ রিদওয়ানুল হক এবং মাতা আনোয়ারা সরস্বতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল আয়েশা। তাসনিমুল হাসান ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৮ সালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৮-১৯ সেশনে তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ১ম ব্যাচে ভর্তি হন।
৪৮তম বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য)-এ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ডা. মুহাম্মদ তাসনিমুল হাসান অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ২৯ মে, ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় ৪৮তম বিসিএস (বিশেষ)-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ২৭০০ জন সহকারী সার্জন এবং ৩০০ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে নিয়োগের ঘোষণা করা হয়। পরীক্ষা জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থাৎ দেড় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার একটা ধারণা দেয়া হয়। ইতঃপূর্বে বিসিএসের পড়াশোনা কিছুটা করলেও টার্গেট নিয়ে করা হয় নি। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্য মেডিকেলের সিনিয়রদের সাথে পরামর্শ করে প্ল্যান করি। একটা অনলাইন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই এবং নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা দেয়া শুরু করি।
দীর্ঘদিন বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক পড়াশোনা, সাথে মেডিকেলের প্রথম বর্ষের পড়াশোনাগুলো অনুশীলন ছিলো না বলে আয়ত্ত করতে সমস্যা হতো। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলও পেতাম না। কিন্তু আশাহত হতাম না। নিজের সাথে নিজে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতাম। এক একটা দিনে ছোটো ছোটো টার্গেটে পড়াশোনা করতাম। পাশাপাশি আমার ইন্টার্নও চলছিলো বলে ডিউটির পাশাপাশি পড়াশোনা কষ্টসাধ্য হতো। তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য চাইতাম।
তিনি আরো জানান, ১৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে লিখিত পরীক্ষার সময় চলে আসে। এরই মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ্ এই বিশাল সিলেবাস শেষ করতে পারি। পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়। ২০ তারিখ রাতে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আল্লাহর রহমত, আমার আম্মু-আব্বুর দোয়াতে নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট আমার মৌখিক পরীক্ষা ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। গত পরশু অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে সহকারী সার্জন পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।
“আমি আমার এই সাফল্যে আল্লাহ রহমত আর সবার দোয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাই না। পড়াশোনা সবাই করেছে, কিন্তু সবাইকে তো আল্লাহ রিজিক নির্ধারণ করেন নাই। তাই সকল প্রশংসা আল্লাহর।”
তিনি আরও বলেন, “চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচ হিসেবে আমার কাছে অনেক গৌরবের এবং সম্মানের এই ফলাফল। আমি বিশ্বাস করি আমাদের মেডিকেলে আমার ব্যাচমেটসহ অনুজরা যে পরিমাণ যোগ্য ওরা বিসিএস, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনসহ আরও অনেক সম্মানজনক কৃতিত্ব দেখাবে।”
ডা. মো. শাহরিয়ার হক মজুমদারের সাফল্যের গল্প
অন্যদিকে ডা. মো. শাহরিয়ার হক মজুমদারের বেড়ে ওঠা ফেনী জেলার ফলেশ্বর মজুমদার বাড়িতে। তিনি মো. সায়েদুল হক মজুমদার এবং বিলকিছ বানুর ৩য় সন্তান। শিক্ষাজীবনে শুরুতে লক্ষ্মীপুর পিটিআইতে শুরু হলেও পরবর্তীতে বাবার চাকরিসূত্রে ফেনীতে চলে যান। ২০১৬ সালে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি এবং ২০১৮ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৮-১৯ সেশনে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ১ম ব্যাচে ভর্তি হন।
ডা. মো. শাহরিয়ার হক মজুমদার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ৪টি প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তীতে ইন্টার্নশিপ শুরু হয় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রথমদিকে বিসিএস নিয়ে তেমন একটা না ভাবলেও পরবর্তীতে ৪৭তম বিসিএসের সার্কুলার দেবার পর প্রস্তুতি শুরু করি। পরে মে মাসের দিকে হঠাৎ ৪৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেখে সেই সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশোনা শুরু করি।
“খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশাল একটি সিলেবাস কাভার করার প্রয়োজন হয় বিধায় প্রথমে একটু হতাশ লাগলেও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রেখে ডিউটির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাই। সবশেষ গত ১১ তারিখ সেই বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেখানে নিজের নাম দেখতে পারাটা আসলে আল্লাহর অশেষ কৃপা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমার বাবা-মায়ের আর শিক্ষকদের দোয়া, আমার বড়ো ভাইয়ের এবং স্ত্রীর সাপোর্টই ছিলো মূল ভিত্তি। আমার মেডিকেলের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে আমি এবং আমার প্রাক্তন রুমমেট ডা. মুহাম্মদ তাসনিমুল হাসান দুজনই চান্স পাওয়াটা বিস্ময়করই বটে! আশা করি ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে আমার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।”
এ ব্যাপারে সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী।
ডিসিকে/এমজেডএইচ