প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৩১
লক্ষ্মীপুরে মহাসড়কে একই পরিবারের ৭ জনের মৃত্যু : থামছে না স্বজনদের আহাজারি, চালককে গ্রেফতার দাবি, প্রশাসনের আর্থিক সহযোগিতা

লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে বাড়ির কাছাকাছি এসে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে একই পরিবারের সাত জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পলাতক চালককে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে ফেরা নিহতদের স্বজনরা এ দাবি জানান।
|আরো খবর
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট ২০২৫) বিকেলে সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় নিহতদের বাড়িতে গেলে ওমান প্রবাসী বাহারসহ স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। লিপি আক্তার নামে একজনকে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে আদরের ছোট বোন ও ভাগ্নিকে ডাকাডাকি করতে দেখা যায়। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না স্বজনদের আহাজারি।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে (৭ আগস্ট ২০২৫) নিহতদের উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজ খবর নেন সদর ইউএনও জামশেদ আলম রানা। সাথে ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও নিহতদের কবর জেয়ারত করা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্ল্যা ভূইয়া ইউএনওর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে প্রবাসী বাহারকে সমবেদনা জানিয়েছেন ও সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রবাসী ছেলে বাহারকে আনতে বিমানবন্দরে যাওয়া আব্দুর রহিম বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রী, শাশুড়ি, তিন নাতনি ও দুই পুত্রবধূ পানিতে ডুবে মারা গেছে। চালক ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সে আমাদের পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়। আমরা কয়েকজন বের হতে পেরেছি। চেষ্টা করেও অন্যদের বের করতে পারিনি। চালককে এখনও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুই ছেলে বিদেশ থেকে আজ আসবে। তারা এলে এ ঘটনায় মামলা করবো। কোনোভাবেই চালককে ছাড় দেওয়া হবে না।’ দ্রুত তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
বেঁচে ফেরা আব্দুর রহিম ও ইস্কান্দার মির্জা জানায়, আড়াই বছর পর ওমান থেকে দেশে আসেন প্রবাসী বাহার উদ্দিন। তাকে আনতে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট ২০২৫) রাতে পরিবারের ১১ সদস্য মাইক্রোবাসে রাজধানীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে বাহারকে নিয়ে ফেরার পথে বুধবার (৬ আগস্ট ২০২৫) ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের অদূরে গ্রামের কাছাকাছি আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিক গাড়িটি ডুবে যায়নি। নৌকার মতো ভেসে ছিলো। ধীরে ধীরে গাড়িটি ডুবে যায়। এ সময় গাড়ির লক খুলে দিতে বললেও চালক রাসেল তা করেনি। সে নিজে গাড়ির দরজার কাচ নামিয়ে বের হয়ে গেছে। গাড়িতে আটকে থাকা কাউকেই উদ্ধারের চেষ্টা না করে সে পালিয়ে গেছে। এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে প্রবাসী বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা, ভাবী সুইটি আক্তার ও শ্যালক রিয়াজ হোসেন বের হয়ে আসেন।
নিহত হয়েছেন : প্রবাসী বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া ইসলাম (৮), মা মোরশেদা বেগম (৫০), নানী ফয়জুন নেছা (৭০) ও ভাবী লাবণী আক্তার (২৫)। এরা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় কাশারি বাড়ির বাসিন্দা।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ওসি দেওয়ান লিটন জানান, এখনও থানায় মামলা করতে প্রবাসীর পরিবারের কেউ আসেননি।
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। এজন্যে আমরা তা আর করিনি। পরিবার মামলা না করলে আমরা করবো। ঘটনার পর থেকেই চালক পলাতক। তাকে আটকের জন্যে চেষ্টা চলছে।’
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেলে (৬ আগস্ট) একসঙ্গে জানাজার নামাজ শেষে নিহতদের মধ্যে ৬ জনকে চৌপল্লী কাশারি বাড়ির কবরস্থানে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধা ফয়জুন নেছার মরদেহ তার বাড়ি হাজিরপাড়া গ্রামে নিয়ে কবর দেওয়া হয়েছে।