প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:১২
নিজস্ব ভবন নেই ২২টি ইউনিয়ন পরিষদে : বৃষ্টির পানিতে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, দুর্ভোগ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে তিনটিসহ জেলায় ৫৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২২টিরই নিজস্ব ভবন নেই। ঘর ভাড়া নিয়ে কোনোরকমে চলছে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। এতে একদিকে পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্ভোগে পড়ছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণার পরেও গত ৩০ বছর ধরে রায়পুরে তিনটি ইউপি পরিষদ ভবনে কাজ করা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় পানি চুইয়ে পড়ে ভবনের ভেতরে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। ভেঙ্গে পড়ছে পলেস্তারা। যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়বে ভবনের ছাদ।
|আরো খবর
নতুন করে রায়পুরের তিনটিসহ জেলায় মোট ২২টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের জন্যে বারবার আবেদন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলছেন, জায়গা নির্ধারণ হলে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (১৮ আগস্ট ২০২৫) সরেজমিন দেখা যায়, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বাসাবাড়ী বাজার এলাকায় সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়। খুবই জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। খসে পড়ছে পলেস্তারা। বৃষ্টির সময় পানি চুইয়ে পড়ে ভেতরে। একঘন্টার বেশি জনপ্রতিনিধিসহ কোনো ব্যক্তিই অবস্থান করতে পারেন না। এতে গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ ব্যাহত হচ্ছে দাফতরিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজ। ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা কোনো রকমে চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম।
একই অবস্থায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন রায়পুরের উত্তর চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিগণ ও কর্মকর্তারা।
সদর ও রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ১০০ গজ দূরে দালাল বাজার এলাকায় একটি ভাড়া দোকান ঘরে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। নিজস্ব ভবন না থাকায় কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা দোকান ঘরে। গ্রাম আদালত পরিচালনা সহ ব্যাহত হচ্ছে দাফতরিক ও প্রশাসনিক নানা কাজ। ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা কোনোরকমে চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম।
জানা যায়, একইভাবে ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, সাহেবের হাট, পাটোয়ারীর হাট, চরকালকিনি ও সদর রসুলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদসহ জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।
জেলার ৫টি উপজেলায় ৫৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২২টিরই নেই নিজস্ব ভবন। অথচ ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনার জন্যে নিবিড়ভাবে জড়িত পরিষদ ভবন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদগুলোর স্থায়ী ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে ভাড়াকৃত দোকানে কিংবা বাসাবাড়িতে গোডাউনসহ দাফতরিক ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ ইউনিয়ন পরিষদের দাফতরিক ও প্রশাসনিক কাজ। এতে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা লোকজনও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
এদিকে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা কোনোরকমে ছোট কক্ষ নিয়ে চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। এতে জন্ম ও মৃত্যুসনদ, নাগরিকত্ব সনদ ও ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও সদস্যদের পৃথক কক্ষে বসে অফিস করার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও সবাই একটি কক্ষে বসে চালিয়ে যাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। আবার এসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদল হলে বদলে যায় পরিষদের ঠিকানাও। নির্দিষ্ট ভবন না থাকায় চেয়ারম্যানরা নিজেদের বাসা অথবা পছন্দমতো স্থানে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ যেমন হারানোর ভয় থাকে, তেমনি সেবাপ্রত্যাশীরাও শিকার হন চরম দুর্ভোগের। পরিষদের ওইসব অস্থায়ী কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার মতো জায়গাও থাকে না সেবাপ্রত্যাশীদের।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, ইউপি ভবনের জন্যে মন্ত্রণালয়ে বাজেট চাওয়া হয়েছে। চারটি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ইউপি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ইফতেখার সাকিব বলেন, ডিজিটাল সেন্টারের কক্ষটি একেবারে ছোট হওয়ায় সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একই ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) মাহবুবুর রহমান বলেন, এখানে আমার নিজের একটা অফিস রুম নেই, চেয়ারম্যান সাহেবের আলাদা কোনো রুম নেই, ডিজিটাল সেন্টারের জন্যও আলাদা কোনো কক্ষ নেই। মহা সমস্যায় আছি আমরা।
রায়পুরের সোনাপুর ইউপির সচিব মামুনুর রশীদ ও উত্তর চরবংশী ইউপি সচিব মো. ইউসুফ বলেন, এই দুই ইউনিয়নে প্রায় ৯৫ হাজার মানুষের বাস। দুটি ইউনিয়নে স্থায়ী ইউপি ভবন না থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে ইউনিয়নবাসী। এমন বাস্তবতায় স্থায়ীভাবে ইউপি পরিষদ ভবন নির্মাণের জন্যে ৫০ বার লিখিত আবেদন দেয়া হলেও লাভ হচ্ছে না।