বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ যৌথ বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ৯০ যানবাহনে তল্লাশি।। ১২ মামলায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ গাড়ি জব্দ
  •   হরিণা থেকে দু মাদক ব্যবসায়ী আটক
  •   কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৩৯ জনের তথ্য চেয়েছে দুদক

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৭

ধনাগোদা নদীতে শিশু-কিশোরদের ফুটবল-ভলিবল ম্যাচ!

মাহবুব আলম লাভলু
ধনাগোদা নদীতে শিশু-কিশোরদের ফুটবল-ভলিবল ম্যাচ!

মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ধনাগোদা নদী এখন কচুরিপানায় ঠাসা। অথচ এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়নি কেউ। তাই শিশু-কিশোররা ফুটবল-ভলিবল ম্যাচের আয়োজনের মাধ্যমে যেন অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সরেজমিনে ধনাগোদা নদী ঘুরে দেখা যায়, যেখানে নদীর বুক ভরে ওঠার কথা স্রোতের পানিতে, সেখানে এখন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘন কচুরিপানার আস্তরণ। দূর থেকে তাকালে মনে হয়, নদী নয়, বরং বিস্তৃত সবুজ জমি। ফলে নদীর সঙ্গে জড়িত হাজারো মানুষের জীবিকা এবং পুরো এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত ভেঙ্গে পড়েছে। ধনাগোদা নদীতে অবৈধ জাগ স্থাপন ও মতলব শ্রী রায়েরচর ব্রিজের অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে জোয়ার-ভাটার সময় কচুরিপানা সরতে না পেরে জমে নদীকে প্রায় সবুজ জমিতে পরিণত করেছে।

স্থানীয়রা জানান, এই নদীতে লঞ্চ, মালবাহী জাহাজ, নৌকা চলতো অবাধে। নদীতে ধরা পড়তো ইলিশ, বোয়ালসহ নানা দেশীয় মাছ। ধনাগোদা শুধু নদী ছিলো না, এটি ছিলো মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই নদী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে মানুষের হাতেই। দু তীর জুড়ে গড়ে উঠেছে ইটভাটা ও বসতবাড়ি। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বেলতলী থেকে কালিরবাজার হয়ে শ্রীরায়েরচর এলাকাজুড়ে কচুরিপানার স্তূপ। কচুরিপানায় ঠাসা হওয়ায় নদীর বুকে এখন নৌযান চলতে পারছে না। এটি এখন মনে হচ্ছে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মাঠ। নদীটিকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনার জন্যে প্রতিবাদস্বরূপ শিশু-কিশোররা আয়োজন করছে ফুটবল-ভলিবল খেলার ম্যাচ।

এ নদীতে লঞ্চ যোগাযোগের মাধ্যমে একসময় স্থানীয় অনেক শিক্ষার্থী নৌযানের মাধ্যমে উপজেলা সদরের কলেজ ও স্কুলগুলোতে লেখাপড়া করতে আসা-যাওয়া করতো। ব্যবসায়ীরাও এ নদী ব্যবহার করে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে এবং ব্যবসায়ীরা সড়ক পথে মালামাল আনতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচের মুখে পড়ছেন। দীর্ঘ আট মাস কচুরিপানার স্তূপে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকানপাট ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

স্থানীয়রা জানান, কচুরিপানা নদীর বুক ঢেকে ফেলেছে, যোগাযোগব্যবস্থা অচল। নদী যদি না বাঁচে, এই অঞ্চলের জীবনও বাঁচবে না। ধনাগোদা শুধু নদী নয়, এটি এক সময়ের ঐতিহ্য। নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করতে হলে ধনাগোদা নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। নদীটির খনন ও কচুরিপানা অপসারণের জন্যে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বেলতলী গ্রামের ইব্রাহিম বলেন, নদীটি যদি দ্রুত খননের ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই নদীকে কেবল গল্পে শুনবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহাজাহান বলেন, ধনাগোদা নদী কচুরিপানা উত্তোলন ও খনন প্রয়োজন। সঠিকভাবে খনন করা হলে পুরো নদী নৌযান চলাচলের জন্যে উপযোগী হয়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ধনাগোদা নদীর শ্রীরায়েরচর ব্রিজের নিচে কচুরিপানায় আবদ্ধ হওয়ায় যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কচুরিপানা অপসারণ, অবৈধ জাগ উচ্ছেদসহ আর কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধনাগোদা নদীর শ্রী রায়েরচর ব্রিজের নিচে কচুরিপানায় ঠাসা স্থানে স্থানীয় যুবকরা ফুটবল খেলছে—এমন দৃশ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। পরিদর্শনে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়