রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩৫

মতলব উত্তরে তিন হাজার একর কৃষিজমি রক্ষায় এলাকাবাসীর প্রতিবাদ সভা

মাহবুব আলম লাভলু।।
মতলব উত্তরে তিন হাজার একর কৃষিজমি রক্ষায় এলাকাবাসীর প্রতিবাদ সভা
মতলব উত্তরের বাহেরচরে জমি রক্ষায় প্রতিবাদ সভায় স্থানীয় কৃষক ও রাজনৈতিক নেতারা।

মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ও এখলাছপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সাতটি মৌজার প্রায় ৩ হাজার ৩৭.৮৭ একর কৃষিজমিকে বেআইনিভাবে ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে তা 'চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল-১' নামে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেওয়ার সরকারি উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।এর প্রতিবাদে শনিবার (১২ জুলাই২০২৫) মতলব উত্তরের বাহেরচর আশ্রয়ণ প্রকল্প মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এক প্রতিবাদ সভা।

মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিমুস সালাম, জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহীন, স্থানীয় ইউপি সদস্যবৃন্দ, কৃষক প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

বাহেরচর, চরওয়েবস্টার, নাছিরাকান্দি, দিয়ারা বোরচর, নাপিত মারা, উত্তর বাহেরচর এবং এখলাছপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বোরচর—এই সাতটি মৌজার জমি বহু বছর ধরে স্থানীয় কৃষকেরা আবাদ করে আসছেন। এসব জমিতে বছরে চারটি ফসল উৎপাদন হয়। রয়েছে কবরস্থান, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, বাজার ও হাজার হাজার মানুষের বসতি। প্রায় ২০-২২ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সরাসরি এই জমির ওপর নির্ভরশীল। অথচ এসব জমি নিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থা (Status-quo) আদেশ বলবৎ থাকা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন সেই আদেশ উপেক্ষা করে জমিগুলো খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে লিজ প্রদানের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়ার প্রত্যক্ষ মদদে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভুয়া জরিপের মাধ্যমে ৯৯৪ নম্বর একটি তঞ্চকতাপূর্ণ রেজিস্টার্ড দলিল তৈরি করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমিগুলো জোরপূর্বক খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিমুস সালাম বলেন, সরকার প্রভাব খাটিয়ে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে সাধারণ কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা শুধুমাত্র জমির লুট নয়, এটা গণমানুষের জীবিকা, বসতি, ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র। আমরা এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাজপথে নেমেছি এবং প্রয়োজনে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেবো। প্রশাসন যদি আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে একপক্ষীয়ভাবে লিজ কার্যক্রম চালায়, তবে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করবো।

জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহীন বলেন, উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা আদেশ অমান্য করে এই ভূমি লিজ দেওয়া আইন লঙ্ঘনের সামিল। প্রশাসনের এই কর্মকাণ্ড সরাসরি সংবিধান ও বিচার বিভাগের অবমাননা। আমরা এর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। একই সাথে মাঠের রাজনীতিতেও আমরা সক্রিয় থাকবো। প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি ও অনশন করবো। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, এই জমি আমাদের বাপ-দাদার। এখানে আমাদের ভিটেমাটি, সন্তানের স্কুল, কবরস্থান। আদালতের আদেশ অমান্য করে যদি প্রশাসন লিজ প্রক্রিয়া চালায়, তাহলে তা হবে সরাসরি সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ। প্রয়োজনে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করবো।

এ সময় সমবেত জনগণ শপথ নিয়ে বলেন, “জীবন দেব, তবুও এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছেড়ে দেব না।"

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়