সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০০:৪৪

বাংলা ছোটগল্পের বরপুত্র হাসান আজিজুল হক

এস ডি সুব্রত
বাংলা ছোটগল্পের বরপুত্র হাসান আজিজুল হক

রাজশাহীর নিজ বাসা ‘উজান’ থেকে ৮২ বছর ৯ মাস ১৩ দিন বয়সে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর চিরদিনের জন্যে বিদায় নিলেন বাংলা ছোটগল্পের বরপুত্র হাসান আজিজুল হক। কিন্তু রেখে গেছেন অমূল্য সম্পদ। দু হাতে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন অসংখ্য মননশীল ছোটগল্প । ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের যবগ্রামে ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই কথা সাহিত্যিক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন নিজ গ্রাম যবগ্রামে। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারাণী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী রচনা লিখেছেন এই গুণী লেখক।

হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে : আত্মজা ও একটি করবী গাছ, জীবন ঘষে আগুন, পাতালে হাসপাতালে, নামহীন গোত্রহীন, চলচ্চিত্রের খুঁটিনাটি, মা-মেয়ের সংসার, বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প, সক্রেটিস, বৃত্তায়ন, শিউলি, আগুনপাখি, ফিরে যাই ফিরে আসি, উঁকি দিয়ে দিগন্ত প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ : সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য কিংবা উপন্যাস আগুনপাখি তঁাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের মধ্যে রয়েছে : একাত্তর : করতলে ছিন্নমাথা, লাল ঘোড়া আমি, ফুটবল থেকে সাবধান ইত্যাদি। সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে : গোবিন্দচন্দ্র দেব রচনাবলি, একুশে ফেব্রুয়ারি গল্প সংকলন, জন্ম যদি তব বঙ্গে ইত্যাদি।

যৌবনের শুরুতেই প্রগতিশীল রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন হাসান আজিজুল হক। রাজনীতি করার কারণে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়তে হয় তঁাকে। খুব সক্রিয় ছিলেন নানা ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও। রাজশাহীতে বিভিন্ন ইস্যুতে বা জাতীয় কোনো সংকটে তঁাকে মাঠে দেখা যেতো হরহামেশাই। তঁাকে পাশে পেয়ে কর্মীদের সাহস বেড়ে যেতো অনেকটাই। আবার শিক্ষকতার কাজ তো ছিলোই। তঁার ক্লাস করার জন্যে অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরাও উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করতো বলে শোনা যায়। ‘ছোটগল্পের বরপুত্র’ হিসেবে ডাকা হয় তঁাকে। অথচ ১৯৬০ সাল থেকে শুরু করে পরের ৬০ বছরের সাহিত্যজীবনে হাসান আজিজুল হক ছোটগল্প লিখেছেন একশোর মতো। সময়ের তুলনায় সংখ্যাটি খুব বেশি নয়, কিন্তু সম্পদ হিসেবে অমূল্য। কয়েকটি সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে সেসব গল্প। তঁার উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে মাত্র দুটি : ‘আগুনপাখি’ ও ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’। ‘শিউলী’ নামে একটা বড়ো লেখা আছে, যেটিকে তিনি উপন্যাসিকা বলতেন।

কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হাসান আজিজুল হক পেয়েছেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার। ১৯৯৯ সালে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন । ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্যে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান।

দীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে বিশ্ববিদালয় হাউজিং সোসাইটিতে নিজ বাড়ি ‘উজান’-এ লেখালেখি নিয়ে মগ্ন থাকতেন হাসান আজিজুল হক। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ ছিলো। চিরদিনের মত চলে গেলেন, কিন্তু রেখে গেলেন তঁার অমূল্য লেখা আমাদের জন্যে । বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে ছোট গল্পের ইতিহাসে তঁার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বহুদিন পর্যন্ত ।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, নিলয়, ১৭৪/৩ নতুন পাড়া, সুনামগঞ্জ। ০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ংফংঁনৎধঃধ২০২২@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়