বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ০৯:২৬

ডাব ও তালের শাঁস বিক্রি

হারিয়ে যাচ্ছে নারকেল ও পাকা তালের ঐতিহ্য

কবির হোসেন মিজি
হারিয়ে যাচ্ছে নারকেল ও পাকা তালের ঐতিহ্য

ডাব ও তালের শাঁস বিক্রির হিড়িক দেখা যায় সর্বত্র। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঝুনো নারকেল ও পাকা তালের ঐতিহ্য। একই কারণে নারকেল এবং পাকা তালের সংকটও দেখা দিয়েছে। চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

একটা সময় ছিলো, হাটে বাজারে এবং বিভিন্ন মুদি দোকানে ঝুনো নারকেল পাওয়া যেতো। প্রতি জোড়া নারকেল বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। কিন্তু ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি ডাব বিক্রি করার কারণে এখন আর দোকানে, বাজারে তেমন ঝুনো নারকেলের দেখা মিলে না। গাছে থাকা কচি ডাব নারকেলে পরিণত হওয়ার সুযোগ দেয় না ব্যবসায়ী ও গৃহস্থরা। তার আগেই গাছ থেকে কচি ডাব বিক্রি করে দেয়।

স্বাভাবিক সময়ে নারকেলের তেমন প্রয়োজন না হলেও ঈদ এবং শীত মৌসুমে বিভিন্ন পিঠাপুলি তৈরিতে নারকেলের খুব প্রয়োজন হয়। ১০/১২ বছর আগেও যেখানে বিভিন্ন মুদি দোকান এবং হাটে বাজারে ঝুনো নারকেল পাওয়া যেতো, ডাবের চাহিদায় এখন তা চরম আকারে সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বেশ ক’বছর ধরে দেখা যায়, চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন, পালবাজার, বাসস্ট্যান্ড, পুরাণবাজার, কালীবাড়ি মোড়, চৌধুরীঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় সারাদিনই ডাব বিক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। ভ্যানে করে কিংবা খোলা ট্রলিতে করে এনে এসব ডাব বিক্রি করা হচ্ছে আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে।

স্থানীয় অনেক গৃহস্থ বলেন, একেকটি ডাব ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ায় সময়ের আগেই গাছ থেকে কেটে বিক্রি করাটা অনেক লাভজনক মনে করেন তারা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট এলাকার গৃহস্থ আজিজুল হক বলেন, আগে গাছের ডাব রেখে নারকেল বানিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন ডাবের দাম অনেক বেশি। একটা নারকেল ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারি না। কিন্তু কচি ডাব গাছে থাকতেই ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত পাই। খুচরা ব্যবসায়ীরা সেই ডাব বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে।

এদিকে অবাধে ডাব বিক্রির কারণে বিভিন্ন উৎসবে নারকেলের চরম সংকট দেখা দেয়। যার কারণে আগে যেখানে একজোড়া নারকেল বিক্রি হতো ৫০/৬০ টাকা অথবা ৮০ থেকে ১শ’ টাকায়, এখন সেই একজোড়া নারকেল কিনতে হয় দেড় শ’ থেকে ২শ’ টাকা দামে।

তালগাছের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। অনেক গৃহস্থ এখন তাল পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ থেকে কেটে ফেলছেন শুধুমাত্র শাঁস বিক্রির উদ্দেশ্যে। এতে করে বাজারে পাকা তাল আসার সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ গ্রামীণ খাদ্য-ঐতিহ্য যেমন তালের পিঠা, তালের বড়া কিংবা তাল মিশ্রিত মিষ্টান্ন এসব হারিয়ে যাওয়ার পথে।

স্থানীয় হাটবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ঝুনো নারকেল একেবারেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া এবং বড় স্টেশনের এক ডাব বিক্রেতা বলেন, গরম পড়তেই ডাবের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। মানুষ এখন নারকেল কম চায়। কারণ এটা খেতে সময় লাগে। বিশেষ করে গরমে ডাবের চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়াও অনেকে বিভিন্ন রোগের জন্যে স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে ডাবের পানি খেয়ে থাকেন। নারিকেল পাই না, তাই বিক্রিও হয় না।

নারকেলের অভাবে শুধু ঘরোয়া রান্নাবান্নার ক্ষেত্রেই নয়, বেকারি ও মিষ্টির দোকানগুলোরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

চাঁদপুর শহরের একটি নামকরা মিষ্টির দোকানের মালিক জানান, নারকেল দিয়ে বানানো খাবারগুলোতে আগের মতো স্বাদ আনতে পারছি না। এখন যেসব নারকেল পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগই অর্ধপাকা বা আঠালো।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, শুধু সচেতনতাই নয়, সরকারিভাবে বিকল্প বাজার সুবিধা, প্রশিক্ষণ ও কৃষকদের জন্যে সহায়তামূলক প্রণোদনা কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার। তবেই গৃহস্থরা কাঁচা অবস্থায় ফলন তুলে না নিয়ে পরিপক্ক করে বাজারজাত করার প্রতি আগ্রহী হবেন।

বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণে ডাব ও শাঁস বিক্রি লাভজনক হলেও দীর্ঘমেয়াদে নারকেল ও পাকা তালের ঘাটতি আমাদের খাদ্যাভ্যাস, কৃষি উৎপাদন ও ঐতিহ্যে বড়ো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়