সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৫, ২২:২৯

ফরিদগঞ্জে ৬৩ লাখ টাকার খাল খনন প্রকল্প ৬ লাখ টাকায় শেষ!

এমরান হোসেন লিটন।।
ফরিদগঞ্জে ৬৩ লাখ টাকার খাল খনন প্রকল্প ৬ লাখ টাকায় শেষ!

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের ৩টি খাল পুনঃখনন ও ১টি ড্রেন মেরামত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আইচারবাগ খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি., মনতলা চালিয়াপাড়া খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. ও চৌধুরী মিজি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক অনিয়ম, অর্থ লুটপাট, স্বজনপ্রীতি ও কৃষিজমি ক্ষতিসাধনের ব্যাপক অভিযোগ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা এই কাজের অর্থ বরাদ্দের কথা শুনে সবাই চমকে যান। কারণ, অর্থ বরাদ্দের সাথে কাজের কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ কাজে ৬৩ লাখ টাকা প্রকল্প খরচ ধরা হলেও বাস্তবে ৬ লাখ টাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ হয়! বাস্তবায়নে ছিলো ফরিদগঞ্জ এলজিইডি অফিস।

এলজিইডি ফরিদগঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৪-২৫ অর্থবছরে ৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের ৩টি খালে মোট ২৮০০ শত মিটার খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে। আর এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে ইউনিয়নের আইচারবাগ খালে ১৩০০ মিটার খননে ২৭ লাখ টাকা। তেলিশাইর খালে ৯০০ মিটার খননে ১৯ লাখ টাকা। এছাড়া দিগদাইর-মনতলা খালে ৬০০ মিটার খননে ১৩ লাখ টাকা এবং একটি পুরনো ড্রেন সংস্কার করতে চার লক্ষ টাকা প্রকল্প বাজেট ধরা হয়। আর যে সমিতিগুলোর নামে উল্লেখিত ৬৩ লাখ টাকা লেনদেন হয় সেগুলো হলো আইচারবাগ খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি., মনতলা চালিয়াপাড়া খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. ও চৌধুরী মিজি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড।

এই সমিতিগুলোর সন্ধান পেতে ৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের আনাচে-কানাচে, বিভিন্ন বাজার ও মিনি মার্কেটে খবর নিলেও সমিতিগুলোর কোনো হদিস না পাওয়ায় সমিতির কোনো সদস্য এবং কমিটির কোনো লোকের সাথে কথা বলা যায় না। তবে এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ভেক্যু দিয়ে খাল খনন করা হয়েছে ঠিক। তবে তারা বলেন, তিনটি খাল মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে ভেক্যু চলেছে ২৮ থেকে ৩০ দিন হবে। এতে করে হয়তো ভেক্যু ভাড়া প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা করে দিলে মোট সাড়ে পাঁচ লাখ বা ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে তারা জানান।

এলাকাবাসী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের তথ্য অনুযায়ী এই কাজে ৬৩ লাখ টাকা বাজেট হলে ৫/৬ লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সমবায় অফিস ও এলজিইডি লুটপাট করেছে।

আইচারবাগ খালপাড়ের একাধিক কৃষকের সাথে (নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম দেয়া হলো না, ভিডিও ফুটেজ আছে) কথা হলে তারা বলেন, এই খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নাম করে খালের মাটি অযত্ন অবহেলা করে ধানের ভরা মৌসুমে ধানের ওপর মাটি ফেলেছে। পরে আর ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ চলে যায়। এছাড়া এই খালে ১৩০০ মিটার খাল খনন করার কথা থাকলেও সে পরিমাণ করে না। তারা বলেন, এই খালে গড়ে প্রতিদিন ৯/১০ ঘণ্টা করে ১৩/১৪ দিন কাজ করে ভেক্যু চলে যায়।

এছাড়া দিগদাইর ও মনতলা খালপাড়ের একাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী বলেন,

(নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম দেয়া হলো না, ভিডিও ফুটেজ আছে) এই খালেও গড়ে প্রতিদিন ৯-১০ ঘণ্টা করে ১৪-১৫ দিন ভেক্যু চলেছে এবং কাজ শেষ না করে ভেক্যু চলে যায়।

অন্যদিকে তেলিশাইর খালপাড়ের একাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী বলেন, (নিরাপত্তা জনিত কারণে নাম দেয়া হলো না, ভিডিও ফুটেজ আছে) তাদের এলাকার এই খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তাদের খাল খননের কথা ৯০০ শ' মিটার। কিন্তু তা না করেই মাত্র একদিন বিকেলে কয়েক ঘন্টা এবং পরেরদিন সকালে কয়েক ঘণ্টা ভেক্যু চালিয়ে তারা ভেক্যু নিয়ে চলে যায় এবং মানুষের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও পরে আর তারা কোনো যোগাযোগই করে না বলে জানান।

এলাকার একাধিক কৃষক ও সুধী মহলের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কৃষকদের জন্যে সমিতি থাকলেও আমরা এর কিছুই জানি না। স্থানীয় দুলাল মেম্বার ও তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে এই সমিতি করা হয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যেই শুনি এলাকার কৃষকদের উপকারের জন্যে সমিতির নামে লাখ লাখ টাকা আসে এবং কোনো কোনো বছর কোটি টাকার উপরেও আসে। কিন্তু আমরা কোনো মান-সম্মত কাজ দেখি না। যে সমিতির নামে টাকা আসে সেই সমিতির অফিস কোথায় সেগুলোও আমরা জানি না। শুনেছি এ বছরও নাকি ড্রেন এবং খাল খননের জন্যে ৬৩ লাখ টাকা এসেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম এই এলাকার তিন জায়গায় গড়ে ২৭-২৮ দিন ভেক্যু চলেছে। কিন্তু ড্রেন কোথায় করেছে তা আমরা বলতে পারবো না।

পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ও কাজ পরিচালনাকারী দুলাল মেম্বারের সাথে একাধিকবার দেখা করার চেষ্টা করলেও তিনি সাংবাদিকদের কথা শুনলে বাড়ি থেকে অথবা এলাকা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। অন্যদিকে আরেক সমিতির সভাপতি সৈয়দের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যেটুকু সম্ভব কাজ করিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু নামেই আছি, যা কিছু করার সব এলজিইডি অফিস থেকেই করা হয়।

একাধিক ভেক্যুর মালিকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, একটা ভেক্যু ভাড়া দিলে দিন এবং রাত মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা নেয়া হয়। তাহলে উপরোক্ত খাল খননে ৩০ দিন গেলে ভেক্যু ভাড়া সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা যেতে পারে বলে তারা জানান।

উপরোক্ত বিষয় নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দুলাল মেম্বার প্রতিবছর খাল খননের নামে সরকারি অর্থ এনে হরিলুট করছেন এবং খাল খননের নামে তিনি সাগর চুরি করছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কাজ এখনও চলমান রয়েছে। কিন্তু কাজের তত্ত্বাবধানকারীরা বলছেন, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়