বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ২১:৪৬

গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের সভাপতির দায়িত্বে জেলা প্রশাসক

উচ্চ আদালতের আদেশে লায়ন হারুনুর রশিদের সভাপতি পদ স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার।।
উচ্চ আদালতের আদেশে লায়ন  হারুনুর রশিদের সভাপতি পদ স্থগিত

ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মার্চ। এরই মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষের পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাগজপত্র পেয়ে কোনো ধরনের সমাধান না দিয়ে নতুন করে ২৪ এপ্রিল শুধুমাত্র লায়ন মো. হারুনুর রশিদকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে অধ্যক্ষকে চিঠি দেয়। এতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরী রাণী সাহা সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে রীট দায়ের করলে হারুনুর রশিদের সভাপতি পদ স্থগিত হয়। এরপর উচ্চ আদালতের আদেশে কলেজটির এডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান জেলা প্রশাসক। তবে এসব প্রকৃত তথ্য বিকৃত করে কলেজ কমিটি নিয়ে অপপ্রচার অব্যাহত রয়েছে।

এডহক কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে চিঠি প্রেরণসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এই কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন ডা. আনোয়ারা হক। তিনি ৬ মাসের জন্যে মনোনীত হন। আর এর মেয়াদ শেষ হয় ৩১ মার্চ। তিনি সভাপতি থাকাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ১৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করেন। প্রস্তাবিত কমিটির বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ নিয়মে নিষ্পত্তি না করে ২৪ দিন পর সভাপতি ডা. আনোয়ারা হকের মনোনয়ন পরিবর্তন পূর্বক তদস্থলে লায়ন মো. হারুনুর রশিদকে মনোনয়ন প্রদান করেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোনীত সভাপতিকে কোনো ধরনের আমন্ত্রণ কিংবা টেলিফোনে সভাপতি হিসেবে চিঠি পেয়েছেন এমন তথ্য নিশ্চিত করেননি। যে কারণে সভাপতি হারুনুর রশিদ নিজেই গত বুধবার (৭ মে ২০২৫) কলেজে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের সাথে বৈঠকে বসেন। ওই সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন না। এই বৈঠকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বৈঠকের পর সভাপতি তাঁর দায়িত্বভার আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নেয়ার কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরী রাণী সাহাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেন পরিসংখ্যান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেনকে।

নতুন করে নিয়োগ পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসরণ করে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে কি-না তা আমি জানি না। সভাপতি নিয়োগ প্রদান করায় আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছি। এখানে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ হয়েছে কি-না সে বিষয়ে সভাপতি সাহেব বলতে পারবেন। দেলোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ৭ মে সভাপতি হিসেবে কলেজে এসে কোনো ধরনের নোটিস ছাড়া মিটিং করে কীভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাকে কোনো নোটিস দেয়া হয়নি। তিনি (সভাপতি) ৭ তারিখে এসে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ পরিবর্তন হবে। পরদিন ৮ তারিখ ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। অধ্যক্ষের কক্ষ বন্ধ থাকায় নতুন করে রেজুলেশন বুক নিয়ে তিনি (সভাপতি) সভার রেজুলেশন তৈরি করে নিয়েছেন।

এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মো. হারুনুর রশিদকে সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব না পাঠানোর কারণে কলেজের সামনে মানববন্ধন, কলেজ ক্যাম্পাস ও অধ্যক্ষের কক্ষ ভাংচুর, শিক্ষককে লাঞ্ছিত এবং শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পুরো ঘটনায় জড়িত সকলেই লায়ন মো. হারুনুর রশিদের অনুসারী বলে ওয়াকিবহাল মহল দাবি করেন। এ বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ হয় স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফরিদগঞ্জ থানায় আবেদন করেন।

উপজেলার স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারীদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন কলেজটির অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্টের জন্যে দায়ী ব্যক্তি মনে করে মো. হারুনুর রশিদকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটির নতুন সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন করায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরী রাণী সাহা সংক্ষুব্ধ হয়ে ২৮ এপ্রিল উচ্চ আদালতে একটি রীট করেন। উচ্চ আদালত এই রিটের বিষয়ে ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এবং ৪ মে শুনানি শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত সভাপতির ওই চিঠির কার্যকারিতা ৩ মাসের জন্যে স্থগিত করেন। একই সাথে এ বিষয়ে জবাব দিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক বরাবর রুল জারি করেন। পাশাপাশি এই তিন মাস কলেজ শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান ও কলেজের প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক স্বাক্ষরের জন্যে জেলা প্রশাসক চাঁদপুরকে নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরী রাণী সাহা বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের কপি জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করা হয়েছে এবং বিষয়টি আমি নিজেও মৌখিকভাবে জানিয়েছি। 'সভাপতির আগমনের খবরে আপনি কলেজ থেকে পালিয়েছেন মর্মে যে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে' এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ওইদিন আমি যথাসময়ে কলেজে উপস্থিত ছিলাম। পরে কলেজের কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)-এর কার্যালয়ে গিয়েছি। পরদিন ৮ মে আমি যথাসময়ে কলেজে উপস্থিত হই এবং কলেজের পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে চলে আসি। ফলে সভাপতির আগমনে আমার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য মো. হারুনুর রশিদকে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে এক গণমাধ্যমকর্মীর পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য প্রয়োজন তাও উল্লেখ করা হয় খুদে বার্তায়। তিনি কোনো ধরনের জবাব না দেয়ায় প্রতিবেদনে বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে উচ্চ আদালতের আদেশ সংক্রান্ত একটি কপি জেলা প্রশাসক পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়