প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিস্তার বিলুপ্তির পথে
ঐতিহ্যবাহী সব গ্রামীণ খেলাধুলা

বর্তমানে মতলবের গ্রামীণ জনপদ থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে ইচিং-বিচিং, হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, কানামাছি, ডাংগুলি, বৌচি, ঘুড়ি, এক্কাদোক্কা, চড়ুইভাতি, মোরগ লড়াই, ওপেন-টু-বায়োস্কোপ, দোকানপাট, দড়িলাফ, পুতুলখেলা, চোর-পুলিশ, কুতকুত, লাটিম, মার্বেল, দারিয়াবান্ধা, এলাটিং-বেলাটিং, রংমাল চুরি, লাঠিখেলা, লুকোচুরি ও পাতা খেলা। একসময় যে খেলাগুলো গ্রামের শিশুদের আনন্দ দিতো, এখন সেগুলো কেবলই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ৯০ ভাগ শিশুই জানে না এসব খেলা সম্পর্কে। দু পায়ের ওপরে চার স্তরে পাখির মতো দু ডানা (হাত) খুব সাবধানে লাফ দিয়ে একপাশ থেকে অপরপাশে পাড়ি দিতে হবে। হাতের সঙ্গে পা বদলেই শেষ। হেরে যাবে উড়ন্ত পাখি এমন চিত্র এখন চোখে পড়া দায়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিস্তার গ্রামীণ শিশুদের খেলাধুলায় মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছে। টেলিভিশন ও ভিডিও গেমসের মতো আধুনিক বিনোদনমূলক উপকরণের প্রতি শিশুদের আগ্রহ বেশি, যা তাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও গ্রামের খোলা মাঠ, বিল ও ঝিলের অভাবও খেলাধুলার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের মধ্যে গ্রামীণ খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে।
শৈশব শব্দটি শুনলেই কেমন যেন একটা কল্পনার জগৎ চলে আসে চোখের পাতায়। আমাদের গ্রাম বাংলার শৈশব যেন দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার নিত্যদিনের খেলাধুলাগুলো। এখন সেসব খেলার কথা মনে হলে মনে পড়ে যায় খেলার সঙ্গীদের কথা। মনে পড়ে যায় শৈশবের হারিয়ে যাওয়া খেলা আর স্মৃতির কথা।
শিশু মানেই দৌড়ঝাঁপ, কোলাহল আর চঞ্চলতা। তারা অবসরে গ্রামের খোলা মাঠে দল বেঁধে খেলতো গ্রামীণ নানান খেলা। আর খেলাধুলার মাধ্যমে শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো শিশু-কিশোরেরা। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের প্রতিটি বেড়ে ওঠা সোনালি শৈশব যেন কতোদিন আগেই হারিয়ে গেছে। শুধু চর্চার অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলাগুলো। গ্রামীণ কৃষ্টি ও লোকজ ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় এ খেলাগুলো পুনরুদ্ধারে নেই কোনো উদ্যোগ।
গ্রামীণ জনপদে মাঠ কিংবা ফসল কাটা শেষে ফাঁকা জমিতে শিশু-কিশোররা এসব খেলাধুলায় মেতে উঠতো। এসব খেলাধুলা আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া এসব খেলাধুলা এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। গ্রামে খেলার মাঠ কমে যাওয়ায় এসব খেলা এখন শুধুই স্মৃতি। এই খেলাগুলোর নামও জানে না নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ শিশু-কিশোর।
যেটা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে এসব খেলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এসব খেলাগুলো শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর টিভির সিরিয়ালের দিকে শিশুরা ঝুঁকে পড়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা।
মতলব পৌর শহরে অবস্থিত ডিউড্রপস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক সাইয়্যেদুল আরেফিন শ্যামল জানান, প্রতি সপ্তাহে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রামীণ খেলাধুলার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
ক্রীড়া সংগঠক ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান সদস্য মোজাহিদুল ইসলাম কিরণ বলেন, প্রাচীন হলেও শিশু-কিশোরদের কাছে এসব খেলা অনেকটাই নতুন। গ্রাম বাংলার খেলাধুলা রক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। এ জন্যে নিয়মিত গ্রামীণ খেলাগুলোর আয়োজন করতে হবে।
শিশু সংগঠক ও মতলব সূর্যমুখী কচি-কাঁচা মেলার পরিচালক মাকসুদুল হক বাবলু বলেন, এক সময় গ্রামবাংলার শিশু-কিশোরেরা নানারকম গ্রাম্য খেলায় অংশ নিতো। এই সমস্ত খেলা শুধু তাদের জন্যেই বিনোদন সৃষ্টি করতো না, বরং গ্রামবাসীও এই খেলাধুলায় আনন্দ উপভোগ করতো। বর্তমান সময়ে এই সমস্ত খেলা প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। গ্রামীণ এই খেলাগুলো রক্ষার্থে ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরাও চিন্তা-ভাবনা করছি, আগামীতে মতলবে এ সকল প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য দেশীয় খেলাধুলার আয়োজন করবো।