প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৪
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত আব্দুল কাদির মানিকের মায়ের আর্তনাদ
এখনো মনে হয়, আমার মানিক আমাকে 'মা মা' বলে ডাকছে

এখনো মনে হয়, আমার মানিক আমাকে মা মা বলে ডাকছে, প্রতিদিন আমার ফোনে কতোবার যে কল করতো। বলতো, মা তুমি কী কর, তোমার বউ কী করে, নাতি-নাতনিরা কী করে, তুমি ভাত খাইছো নি, ঔষধ খাইছো নি'?
|আরো খবর
যেই ছেলে আমার সংসারের সকল হর্তাকর্তা! তার কথা কী বলছে! দৌড়ে গিয়ে মানিকের বউকে বলি, তুমি ফোন দেওতো, আমার ফোনের টাকা শেষ, ওরা মানিকের কথা কী বলছে! আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমার মানিক আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
কেমন আছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানতে গেলে একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন মানিকের মা।
জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ের দিন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আব্দুল কাদির মানিক।তিনি বলেন, মানিক ছোটবেলা থেকেই ১৯৭১ সালের যুদ্ধের গল্প শুনতো। জুলাই মাসের শেষ দিকে সে প্রায়ই বলতো, মা যুদ্ধ দেখলে ঢাকায় আসো। আমি বলতাম, বাবারে, আমি যুদ্ধ দেখেছি, তোর সেখানে যাওয়ার দরকার নেই, আমার ভয় করে।
সর্বশেষ মৃত্যুর আগের দিন সে সকলকে পানি খাওয়াতে গিয়েছিলো। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। আমি আর যুদ্ধ চাই না, আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। আর যেনো কোনোদিন জুলাই ফিরে না আসে — দেশের সকলের কাছে এটাই আমার দাবি।
সবই আছে, কিন্তু আমার মানিক বাড়ির পাশেই কবরে শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার মানিক আমায় ডাকছে।
মানিকের বিধবা স্ত্রী রাহিমা বেগম জানান, সুখের সংসারে তিন সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলেন। তাঁর স্বামী ঢাকার উত্তরায় রড সিমেন্টের দোকানে সেলসম্যান ছিলেন। কিন্তু একটি গুলি আমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিলো।
সেদিন সকালে ফোনে বিদ্যুৎ বিল ও ঔষধ কেনার জন্যে ২ হাজার টাকা পাঠান। পরে চাল কেনার টাকাও চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, এখন হাতে টাকা নেই। কিন্তু সে আর চাল কিনে দিয়ে যেতে পারেননি। সেদিন থেকেই মন খারাপ লাগছিলো।
আমার স্বামী রাজনীতি করতেন কিনা আমি জানি না। তিনি আন্দোলনে শুধু পানি খাওয়াতে গিয়েছিলেন। আজ আমার একটাই চাওয়া, স্বামী হত্যার বিচার হোক। আর যেনো কোনো স্ত্রী বিধবা না হয়, সন্তান পিতাহারা না হয়।
সরকারিভাবে ছাড়াও কয়েকটি রাজনৈতিক দল আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
প্রথমদিকে অনেকে খোঁজ নিয়েছে, এখন কেউই তেমন আসে না।
আমি চিন্তিত সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে।স্বামী হারিয়েছি, বেঁচে আছি শুধু স্মৃতি আর সন্তানদের নিয়ে। কবরের পাশে গাছ লাগাতে ইউএনও স্যারসহ অনেকে এসেছিলেন। আর কোনো রাহিমারা যেনো রাজনৈতিক কারণে বিধবা না হয় — এইটাই দাবি।
আব্দুল কাদির মানিক মানিকরাজ গ্রামের নূর মোহাম্মদ ও ফাতেমা বেগম দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে।
তাঁর বড়ো মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে ২য় শ্রেণিতে পড়ে, একমাত্র ছেলে ৫ বছরের মোস্তাকিম।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।ডিসিকে/এমজেডএইচ