|আরো খবর
শেষের শুরু: হাসিনার কান্না আর দুর্নীতিবাজদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সেই কারাগার
যেখানে এক সময় বন্দি হওয়ার কথা ছিল তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া— ঠিক সেই কারাগারেই এখন সাজানো হচ্ছে সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত নেতাদের থাকার জন্য। ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত এই 'বিশেষ কারাগার'টি চালু হচ্ছে ২০২৫ সালের ১৫ মে থেকে। তবে এটি এখন আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতীক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় শুদ্ধি অভিযানের বাস্তব প্রতিফলন।
যা ছিল খালেদা জিয়ার জন্য, এখন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের জন্য
কারাগারের পরিকল্পনা হয়েছিল ২০১৮ সালে, উদ্দেশ্য ছিল— দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এখানেই রাখা হবে। সেই প্রেক্ষাপটেই শুরু হয় আধুনিক, নিরাপত্তাবেষ্টিত, সীমিত বন্দিসংখ্যার এক বিশেষ কারাগার নির্মাণ।
করোনা পরিস্থিতির কারণে খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ায় তা আর প্রয়োজন হয়নি।
কিন্তু ভাগ্যচক্রে সেই কারাগারেই এখন জায়গা পাচ্ছেন আওয়ামী আমলের সেইসব দুর্নীতিবাজ ‘অপ্রতিরোধ্য’ নেতারা, যাদের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার,
গুম-খুনের নির্দেশনা ও প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যবহারসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
কারাগারের ভেতরে ক্যাম্পাস— ভেতরে কী আছে?
জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ভবনের ভেতরে তৈরি এই বিশেষ কারাগারটি একটি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট। পুরো ভবনটি আধুনিক ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রযুক্তিতে আচ্ছাদিত।
সিসিটিভি, মোবাইল জ্যামার, ইনফ্রারেড স্ক্যানার, ও ভিআইপি বন্দিদের জন্য পৃথক বারান্দা, আধা-ডোমিটরি সেল এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থাও রয়েছে।প্রথম দফায় অন্তত ২০০ জন ভিআইপি বন্দি এখানে থাকবেন, যাদের অনেকেই প্রাক্তন মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা ও ব্যবসায়ী।
সম্পূর্ণ ভবনটিতে বিশেষ সাদা পোশাকধারী কারারক্ষী মোতায়েন করা হবে, যারা নিরাপত্তার পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহেও প্রশিক্ষিত।কে কে থাকছেন প্রথম ব্যাচে?
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এই বিশেষ কারাগারে স্থান পাচ্ছেন—
- শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ অর্থ উপদেষ্টা ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান
- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
- সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী শাজাহান খান
- সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার
- সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান
- সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক
- সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়
- প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আমলারা
- কয়েকজন বিতর্কিত উপাচার্য ও সরকারি প্রকল্প পরিচালক
এছাড়াও থাকছেন আওয়ামী লীগপন্থী কিছু মিডিয়া হাউজের মালিক ও প্রধান নির্বাহীরা, যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে অবৈধ প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে।
শুধু কারাগার নয়— এটি একটি ‘শুদ্ধি ঘাঁটি’
“দশকজুড়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারহীনতা আর দুর্নীতির নায়করা যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরণ করেছে, তাদের এখন আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। এই কারাগার শুধু জেল নয়, এটি হবে নৈতিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রীয় শুদ্ধির এক মডেল।”— বর্তমান সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
কারা দেখভাল করছেন এই কারাগার?
এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ ও সৎ কর্মকর্তাদের। সিনিয়র জেল সুপার হিসেবে আছেন মোহাম্মদ তাইফুদ্দিন, জেলার হিসেবে শাখাওয়াত হোসেন, ডেপুটি জেলার, ফার্মাসিস্ট, ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিয়োগ কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে।
বিশেষ বন্দিদের সেবার জন্য রাখা হয়েছে আলাদা মেডিকেল টিম, যেখানে রয়েছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও মনোবিদ।
ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আরও কঠোর ব্যবস্থা
এই কারাগারে বন্দিদের শুধু শাস্তি নয়, রাষ্ট্রের প্রতি জবাবদিহি তৈরি করতে ‘মরাল রিহ্যাব’ সেশন চালু করা হবে।
প্রতিমাসে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি বন্দিদের অভিযোগ শুনবে এবং বন্দিরা চাইলে নিজেদের অনুশোচনা লিখিত আকারে জমা দিতে পারবেন।
১৫ মে থেকে যখন কেরানীগঞ্জের সেই আধুনিক কারাগারের গেট খুলবে, তখন আর প্রবেশ করবে না কোন নিরপরাধ রাজনৈতিক নেত্রী, বরং প্রবেশ করবেন— ক্ষমতা ও অপব্যবহারে গা-ভাসানো সেইসব মুখরা নেতারা, যারা ভেবেছিলেন— রাষ্ট্র তাদের নয়, তারা-ই রাষ্ট্র।
ডিসিকে/ এমজেডএইচ