সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০

মতান্তর বনাম মনান্তর

বিমল কান্তি দাশ
মতান্তর বনাম মনান্তর

এ যুগের মানব সমাজের আকৃতি-প্রকৃতির অধঃগতি থেকে অনিবার্যই জন্মেছে মতান্তর-মনান্তর-অবস্থান্তর। যার ফলে ব্যক্তিত্ব-মনুষ্যত্ব-মহত্ত্ব শুধুই এখন আভিধানিক মাত্র। এর বাস্তব প্রতিফলন পাশব বললেও অত্যুক্তি হয়ে যাবে। কারণ বন্য পশু পোষ মানানো যায়। নরপশু সর্বস্তরেই ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায়। কারণ পশুর সমাজে পশু ঘুরে বেড়াতে নেই কোনোই অন্তরায়। বন্য পশুরও এক পর্যায়ে তৃপ্তি ঘটে। কিন্তু অতৃপ্ত নরপশু মহাশূন্যও গিলে ফেলতে চায়।

মানুষের উৎপত্তির পূর্বে প্রাণী জগতের বিবর্তন ঘটেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে। হোমোসেপিয়েন্স পর্বের আদি মানব সভ্যতার সন্ধানে নিয়ত ব্যস্ত ছিল। তাইতো তারা প্রস্তর যুগ থেকে দ্রুত আগুনের আবিষ্কার করে প্রাক ঐতিহাসিক যুগ থেকে সভ্যতার সূচনা করে ফেললো। আদিম যুগের লক্ষ এবং উদ্দেশ্য ছিল একটা আর এ যুগে মানুষের মধ্যে রয়েছে অনন্ত অতৃপ্তি। এ কুৎসিত অতৃপ্তির পিপাসা থেকেই মানুষের জন্মেছে মতান্তর-মনান্তর এবং অবস্থান্তর।

মতান্তর হলো সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি কটাক্ষ মাত্র। বিকশিত মন সৃষ্টির পালন কর্তা। এর বিপরীতটা হলো সৃষ্টির ধ্বংসের উদ্যোক্তা। মনের প্রতিবেশী হলো বুদ্ধি এবং অহঙ্কার। সু-বুুদ্ধি মানুষকে যুগিয়েছে সমাজবদ্ধ জীবের প্রেরণা, যা বর্তমান মানব সমাজ থেকে বিলুপ্তির পথে। আর কুণ্ডবুদ্ধিটা মানবিক সত্তাকে গভীর নিদ্রাভিভূত করে পাশব সত্তাকে জাগ্রত করে দেয়। পাশব সত্তায় জাগ্রত শুধুই মানবিক অবয়বিক নরপশুগুলো প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরেই সজারু তুল্য কন্টক নিয়ে নিজেদের আর্থিক অবস্থান্তর ঘটানোর নিমিত্ত বসে আছে এবং পরোক্ষভাবে ব্যাপক অভাবনীয় সফলতা পেয়ে যাচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। তাদের বক্তব্যগুলো আবর্তিত শুধুই অফিস খরচণ্ডতল্লাশি, খরচণ্ডবকশিশ এ জাতীয় বুলিগুলোতেই। কেননা এসব বুলি তারা কেবল আওড়াতে থাকে। এতে মানুষ অশেষ হয়রানির শিকার।

মানুষের অদৃশ্য ইন্দ্রিয় 'মন'। যেটি পৃথিবীর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিবর্তনের কাঙ্গাল। কেউবা কর্মস্থলের বৈগুন্যে আর্থিকভাবে জিরো থেকে হিরো হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় নিমগ্ন। আবার কেউবা মানসিক তৃপ্তির জন্যে বহুল প্রচলিত 'মহাপরিচালক' শব্দটির সমার্থক শব্দ 'মুহতামিম' ব্যবহার করতে পারলেই তৃপ্ত।

মতান্তর এবং মনান্তর সর্বযুগে ছিলো, আছে এবং থাকবেই। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান দৃশ্যমান অনেক বৈষম্যের নির্মম শিকার। যেমন একদিকে হতে থাকে, অন্যদিকে প্রতিবাদের সুপ্ত আণবিক শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। ১৯৭১ সালে সেই আণবিক শক্তির বিগ-ব্যাংকের বিস্ফোরণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুঃসাহসিক সৈনিকদেরকেও আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল। যাতে আমাদের চির অম্লান সোনার বাংলাকে ফিরে পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে অভূতপূর্ব বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয়েছে তার সুফল জাতি আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো-এর ফলে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হারিয়ে গিয়ে প্রশাসনের সর্বস্তরে প্রতিযোগিতামূলক দুর্নীতি জন্ম নিয়েছে। এ যেন এক অজানা পরিণতির অশনি সংকেত।

বাংলার বীরত্বগাথা অতীত কাহিনীগুলো আজ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির অপেক্ষায় দিন গুণছে। বাংলা মায়ের বীর সন্তান সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে ব্রিটিশ অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, বিনয়-বাদল-দীনেশদের নেতৃত্বে ব্রিটিশ প্রশাসনিক ভবন রাইটার্স বিল্ডিং তছনছ করা এবং বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছুদের দুঃসাহসিক অভিযানে শুধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি ঘৃণিত মন্তব্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানকে কঠিন প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করে হত্যা করা হয়েছিল। এই বাংলার মাটি এতোটাই দুর্জয় ঘাঁটি যে ইতিহাসের হুবহু পুনরাবৃত্তি যথাসময়ে অনিবার্যভাবে ঘটায়ে দিবেই। সুতরাং সংশ্লিষ্ট সাধুভাইরা সাবধান। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করেই দেশপ্রেমিক হয়ে যাওয়া শ্রেয়তর। পীড়িত দেশটাকে করানো হোক আরোগ্য স্নান। স্বাধীন দেশটা অচিরেই পেয়ে যাবে উন্নত দেশের মান।

মানুষে মানুষে মতান্তর আর মনান্তরের অবসান ঘটালেই দেশটার হবেই অভাবনীয় অবস্থান্তর। কুণ্ডমতলবের বাতাবরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মতাবলম্বী বক্তাগণ যেসব উত্তেজক বক্তব্য প্রদান করেন তাতে বিজ্ঞান সমৃদ্ধ সভ্য পৃথিবী থেকে বাংলাদেশকে প্রাচীন অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের দিকে ধাবিত করার অপপ্রয়াস থেকে বিরত থাকাটাই দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে। এ দেশের মানুষ সর্বযুগে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ধার্মিক ছিল-আছে-থাকবেই। যদি না কোনো উস্কানিমূলক ইন্ধন পায়। ন্যাকামি পরিহার করে আন্তরিকভাবে মানব ধর্ম পালনে ব্রতী হওয়াই সর্বোৎকৃষ্ট মানবিক বৈশিষ্ট্য।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়