রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩০

আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্যে কি এনজিও দায়ী নয়?

অনলাইন ডেস্ক
আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্যে কি এনজিও দায়ী নয়?

গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠে ‘ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ফরিদগঞ্জে দুজনের আত্মহনন’ শিরোনামে সংবাদটি দেখে পাঠকমাত্রই থমকে দঁাড়িয়েছে। এক পলকে কিংবা এক নিঃশ্বাসে পুরোপুরি পড়ে নেবার চেষ্টা করেছেন। সংবাদটিতে প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ফরিদগঞ্জে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের শফিউল্লা মোল্লার ছেলে বিটু মোল্লা (৪০) ও রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দেরগঁাও গ্রামের বাবুল বেপারীর স্ত্রী সেলিনা বেগম (৫০) গলায় ফঁাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে বিটু মোল্লার লাশ ঘরের ভেতরের আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ও সেলিনা বেগমের লাশ বাড়ির পাশের কঁাঠাল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে নিজেদের বসতবাড়িতে উভয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিটু মোল্লার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তার স্বামী বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তির কাছে থেকে ঋণ সংগ্রহ করতো। নির্দিষ্ট কোনো কাজ না করায় ঋণের কিস্তি দিতে সমস্যা হতো। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) রাতে হঠাৎ করেই তার স্বামী তাকে মারতে আসে, পরে সে ভয়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে আসলে তিনি ঘরের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে তার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলে তাকে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এদিকে সেলিনা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহিম মৃধা বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ করে তার এক ছেলেকে প্রবাসে পাঠানো হয়েছে। এখনো ঋণ পরিশোধ হয়নি। এর মাঝে ছেলে বিদেশ থেকে চলে আসতে চায়। এ খবরে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়েছে তার পরিবারে। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) রাতে পরিবারের সদস্যদের রাতের খাবার খাইয়ে সেলিনা বেগম ঘুমিয়ে পড়লেও শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর ২০২৫) ভোরে বসতঘরের পাশে একটি কঁাঠাল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পায় স্বজনরা। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। এদিকে সেলিনা বেগমের পরিবার এনজিও থেকে ঋণ নেয়ার কথা স্বীকারের পাশাপাশি জানান, সেলিনা বেগম মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়না তদন্তের জন্যে জেলা সদরস্থ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো কাউকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার যেসব বিষয় বিশেষ করে জামানতের বিষয়টি প্রধান বিবেচনায় রাখে, সেটা এনজিওগুলোর অধিকাংশই করে না। ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় না হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াশেষে জামানতের নিলামে যায়। এনজিও সেটাতে যায় না। তারা তাগিদ দিয়ে ঋণের কিস্তি আদায়ে কঠিন হয়ে যায়। যার ফলে ঋণগ্রহীতা চরম মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন এবং কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নেন। এজন্যে নির্দিষ্ট এনজিও আত্মহননে প্ররোচনার দায়ে দায়ী না হয়ে পারে না। কিন্তু তাদেরকে আইনিভাবে দায়ী করার কাজটি আত্মহননকারীর আত্মীয়স্বজনরা সাধারণত করতে যান না। কেউ যদি একদিন সেটা করেন এবং আদালত সেটা আমলে নেয়, তাহলে নড়ে উঠবে অনেকেই, আর নড়ে যাবে অনেক কিছুই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়