প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৭
গ্রিনকার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া পুনঃতদন্ত করা হবে
বৈধ ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করতে চান প্রেসিডেন্ট

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার সকালে তার সোশাল মিডিয়ায় লিখলেন, তিনি চান দরিদ্র দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মিলিয়ন মিলিয়ন বৈধ ইমিগ্রান্টদের স্ট্যাটাস বাতিল করে ডিপোর্ট করতে। প্রেসিডেন্ট লেখেন ‘REVERSE MIGRATION’। প্রেসিডেন্টের উক্ত মন্তব্যের বরাত দিয়ে শুক্রবার সকাল ৮টার পর খবরটি দেয় এসোসিয়েটেড প্রেস।
খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট মনে করেন ইমিগ্রান্টদের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে ক্রাইম বেড়ে গেছে এবং আবাসন সমস্যা প্রকট হয়েছে। তিনি এটাকে আমেরিকার ‘সোশাল ডিসফাংশন’ বলে উল্লেখ করেন। এসোসিয়েটেড প্রেস এটাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গত জানুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর সবচেয়ে ‘ভয়াবহ’ সোশাল মিডিয়া পোস্ট বলে উল্লেখ করেছে। গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের কাছাকাছি টহলরত দুজন ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করার ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন। পরদিন বৃহস্পতিবার গুলিবিদ্ধ একজন ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মারা যান। আর এই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহে একজন আফগান ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রহমানউল্লাহ লাখানওয়াল নামে ২৯ বছর বয়সী ব্যক্তি আফগান যুদ্ধে সিআইএ-তে কাজ করতো।
এসোসিয়েটেড প্রেস বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মন্তব্য আমেরিকার জন্যে বড়ো আঘাত। কারণ এই দেশটি দীর্ঘকাল যাবত ইমিগ্রান্টদের স্বাগত জানানোর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। যেহেতু সন্দেহভাজন বন্দুকধারী গ্রিনকার্ডধারী, তাই এ ঘটনার পরপরই হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্প প্রশাসন লক্ষ লক্ষ গ্রিনকার্ডধারীর ব্যাকগ্রাউন্ড চেকসহ পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়ার প্রক্রিয়া পুনঃতদন্ত করার কথা জানায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যে লক্ষ লক্ষ বৈধ ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছে, আমেরিকার সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ তারা। প্রেসিডেন্ট থ্যাংকসগিভিং ডে-তে তার সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘Only REVERSE MIGRATION can fully cure this situation’. প্রেসিডেন্ট তার ট্রুথ সোশালে লেখেন, ‘এছাড়া সকলকে হ্যাপি থ্যাংকসগিভিং, কেবলমাত্র তারা বাদ যারা ঘৃণা ছড়ায়, চুরি করে, হত্যা করে এবং ধ্বংস করে। সবকিছু যার জন্য আমেরিকা গর্ব করে। তোমরা এখানে বেশিদিন থাকতে পারবে না।’ প্রেসিডেন্ট লেখেন, বেশির ভাগ অন্য দেশে জন্ম নেয়া ইউএস রেসিডেন্টরা ওয়েলফেয়ারের ওপর নির্ভর করে। তারা এসেছে ব্যর্থ রাষ্ট্র, অথবা জেল বা মেন্টাল ইন্সটিটিউশন থেকে, তারা হয় গ্যাং সদস্য বা ড্রাগ সম্পর্কিত অপরাধ থেকে।
এসোসিয়েটেড প্রেস বলছে, আমেরিকায় প্রায় ৫ কোটি নাগরিকের জন্ম অন্য দেশে। বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষণে দেখা গেছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের তুলনায় অন্যদেশে জন্মগ্রহণকারীরা ক্রাইম কম করে।
আগের খবরে বলা হয়েছে, সিএনএন : যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিবাসন নীতিতে নতুন সতর্কতার সূচনা করেছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করার ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৯টি দেশের গ্রিন কার্ডধারীদের নথি পুনরায় ও কঠোরভাবে পরীক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে এই মূল্যায়ন ইতোমধ্যেই শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)।
২৮ নভেম্বর (শুক্রবার) সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইউএসসিআইএসের পরিচালক জো এডলো এক্স প্ল্যাটফর্মে জানান যে, প্রতিটি দেশের গ্রিন কার্ডধারী বিদেশিদের পরিচয়, নথি ও যোগ্যতা নতুন করে যাচাই করা হচ্ছে।
এই তালিকায় জুন মাসে প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত ১৯টি দেশের মধ্যে রয়েছে—আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা। নিরাপত্তা ঝুঁকি, ভিসা ওভারস্টে এবং সন্ত্রাসবাদ—সম্পর্কিত উদ্বেগকে তালিকা তৈরির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে হোয়াইট হাউস।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি রহমানউল্লাহ লাখানওয়ালকে আফগান নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি ২০২১ সালে ‘অপারেশন অ্যালাইস ওয়েলকাম’ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও সিআইএ-এর সঙ্গে কাজ করেছেন বলে জানায় ইউএসসিআইএস। লাখানওয়াল ২০২৪ সালে গ্রিনকার্ডের আবেদন করেন, যা ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে অনুমোদন করা হয়।
এই ঘটনার পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানায়, আফগান নাগরিকদের সব অভিবাসন আবেদন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বাইডেন প্রশাসনের সময় অনুমোদিত সব এসাইলাম মামলাও পুনরায় পরীক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ।স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি আফগান পুনর্বাসিত হয়েছে আমেরিকায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বড়ো নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাঁর দাবি, বাইডেন প্রশাসন ২০ মিলিয়ন ‘পর্যাপ্তভাবে যাচাই না করা’ বিদেশিকে দেশে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান থেকে আগত প্রত্যেক ব্যক্তিকে নতুন করে পরীক্ষা করা উচিত এবং দেশের জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ যাদের পাওয়া যাবে তাদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।




