শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ যৌথ বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ৯০ যানবাহনে তল্লাশি।। ১২ মামলায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ গাড়ি জব্দ
  •   হরিণা থেকে দু মাদক ব্যবসায়ী আটক
  •   কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৩৯ জনের তথ্য চেয়েছে দুদক

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৩

সামাজিক জীবনে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শের প্রভাব

মাও. মো. মোশাররফ হোসাইন
সামাজিক জীবনে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শের প্রভাব

সমগ্র আরবের সামাজিক অবস্থা ছিলো যখন অত্যন্ত শোচনীয়। গোত্র-কলহ, যুদ্ধ বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানি, প্রভৃতি নৈরাজ্যপূর্ণ অবস্থার মধ্যে নিপতিত ছিলো গোটা সমাজ। সামাজিক সাম্য, শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ, নারীর মর্যাদা বা মানব মর্যাদার কোনো বালাই ছিলো না। দাসত্ব প্রথা, সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ, লুণ্ঠন, ব্যভিচার, অন্যায়-অনাচারে সমাজ কাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়েছিলো। এমনি এক দুর্যোগপূর্ণ যুগ সন্ধিক্ষণে মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব। মহানবী (সা.) ঐ সকল যাবতীয় অরাজকতার মুলোৎপাটন করে সামাজিক ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে একটি সুন্দর শান্তিময় আদর্শ সমাজ গড়ে তোলেন, তা সত্যি বি¯¦য়ের। পৃথিবীর বড়ো বড়ো মনীষীগণ মহানবী (সা.) প্রবর্তিত সামাজিক সংস্কারসমূহকে এক অতীব স্মরণীয় বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন দ্বিধাহীন চিত্তে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) নির্দিষ্ট কোনো কালের, কোনো দেশের জন্য আসেন নি। তিনি এসেছেন সকল কালের, সকল দেশের, সকল জাতির, সকল মানুষের জন্য মুক্তির সনদ নিয়ে। তাঁর প্রতি নাযিল হয়েছে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী, ন্যায়-অন্যায়, হক ও বাতিলের বিভেদকারী, মহাগ্রন্থ আল কুরআন অত্যন্ত সফলভাবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে তিনি আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) প্রতিষ্ঠিত সমাজে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, শ্রেণি ও গোত্রগত বৈষম্য বিলুপ্ত হয়। মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান আল কুরআনের নির্দেশিত পথ তাওহীদে বিশ্বাস করে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে হয়েছে আবদ্ধ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে, দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করে শোষণ ও যুলমমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাই ছিলো তার একমাত্র কাজ। তিনি দাসপ্রথার উচ্ছেদ করেন এবং অবহেলিত নারী জাতিকে তিনি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেন। মীরাস, যাকাত ও সাদাকার প্রবর্তন করে মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আনয়ন করেন। তাঁর প্রবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় পরমতে অসহিষ্ণু হয়নি। অমুসলিমেরও ছিলো রক্ষাকবজ। এ জন্যই পাশ্চাত্য চিন্তাবিদ বানার্ড শ’ বলেছিলেন, ‘আজকের এ ধর্ম, বর্ণ ও মতবাদ-ক্লিষ্ট দুনিয়ায় মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মতো একজনের একনায়কত্বেই সম্ভব স্থায়ী শান্তি ও সুখের প্রতিষ্ঠা। এ পৃথিবীতে একই সাথে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে, এসব মানুষকে একই সাথে যিনি পথ প্রদর্শন করেন, যাঁর আদর্শ সকলের জন্য সমভাবে উপযোগী, সকল যুগের দাবি পূরণ করতে সক্ষম, বাস্তব অগ্নি-পরীক্ষায় যে আদর্শের পরিপূর্ণতা এবং যৌক্তিকতা শতবার প্রমাণিত হয়েছে, সে আদর্শই পেশ করেছেন রাসূল (সা.), যাঁর মহান দরবারে সাদা-কালোর কোনো ভেদাভেদ নেই। কৃষ্ণাঙ্গ হযরত বিলাল (রা.) এবং শ্বেতাঙ্গ হযরত উমার (রা.)-এর মর্যাদায় যে দরবারে কোনো পার্থক্য নেই, সাম্য মৈত্রী, মমত্ববোধ এবং বিশ্ববোধ যে দরবারের বৈশিষ্ট্য, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বংশ এবং ভাষা নির্বিশেষে সকলেই সমমর্যাদা লাভ করে যাঁর দরবারে, যাঁর আদর্শে পূর্ণ পরিণতি, সর্বযুগোপযোগী, সর্বজনীন, চিরন্তন, মহান, যিনি মানবতার উৎকর্ষ সাধনের, বিশ্বমানবের কল্যাণ অর্জনের নির্ভুল নীল নকশা। সামাজিক জীবনে সে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শের প্রভাব আমার এ প্রবন্ধে তুলে ধরবো ইনশাল্লাহ। নেতাকে অনুসারীদের দায়িত্ব নিতে হবে রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, আল ইমামু দামিনুন ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার। এটা শুধু সালাতের ইমামতির ক্ষেত্রে নয় বরং যিনি যে ক্ষেত্রে ইমাম বা নেতা তাকে সে ক্ষেত্রের দায়িত্ব নিতে হবে। রাসূলে কারীম (সা.) আরো বলেন, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং মহানবী (সা.) ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে সফলভাবে দু’টি ১. ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম ও ২. যুলম-নির্যাতনের অবসানে কাজ যেমনভাবে করেছেন ঠিক তেমনভাবে আমাদের জন্য মডেল রেখে গেছেন। মানবাধিকারের রক্ষাকবচ মদিনা সনদ প্রদান করে মহানবী (সা.) মদিনায় বসবাসরত বহুমাত্রিক ধর্মাবলম্বী ইয়াহুদী, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক এবং মুসলিমদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মদিনা সনদ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মদিনায় বসবাসের অধিকার দিয়েছিলো। এমনকি তাদের একটি অংশ বিশ্বাসঘাতকতা করা সত্ত্বেও বাকি অংশের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়নি। মদিনা সনদ একজন অমুসলিম শ্রমিককে একজন মুসলিম শ্রমিকের মতোই সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলো। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, সতর্ক থাকো সে ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি অমুসলিমদের ওপর যুলম করে অথবা তাদের হক নষ্ট করে অথবা তাদের সামর্থ্যরে চেয়ে বেশি কাজের বোঝা চাপাতে চেষ্টা করে অথবা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের থেকে কিছু জোরপূর্বক নেয়, আমি কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়বো। যুলম ও নির্যাতনের অবসান সামাজিক ও অর্থনৈতিক কোনো ব্যাপারে কেউ কারো ওপর যুলম বা অত্যাচার করতে পারে না। ইসলামী সমাজ তাই ন্যায় বিচারের পতাকাবাহী। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলামী সমাজ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আরশের নিচে ছায়া ও জান্নাত লাভকারী হবেন সাত ব্যক্তি, তার মাঝে অন্যতম হলেন ন্যায় বিচারক শাসক। মহানবী (সা.) বলেন, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বর্ণনা করেছেন, সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়ার নিচে ছায়া দিবেন। যেদিন তা ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায় বিচারক বাদশাহ বা সরকার ২. আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন যুবক ৩. ঐ ব্যক্তি যার অন্তর একবার মাসজিদ থেকে বের হয়ে আসার পর আবার মাসজিদে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে ৪. যে দু’জন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় ৫. ঐ ব্যক্তি যে নীরবে একাকী আল্লাহর স্মরণে অশ্রু প্রবাহিত করে ৬.যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় পরমা সুন্দরী নারী একান্তে মিলিত হওয়ার আহ্বানের উত্তরে বলে, আমি শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করি এবং ৭. ঐ ব্যক্তি যে এমনভাবে দান করে যে তার বাম হাত জানে না যে তার ডান হাত কি দান করেছে। যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে সহযোগীদের দায়িত্ব প্রদান হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) কাউকে তার যোগ্যতার বাইরে কোনো দায়িত্ব অর্পণ করেন নাই। কারণ আল কুরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ্যরে অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না; সে (ভালো) যা অর্জন করেছে তা (প্রতিফল) তারই এবং সে (মন্দ) যা অর্জন করেছে তাও (প্রতিফল) তার ওপর বর্তাবে; (রাসূল ও মু’মিনগণ প্রার্থনা করে বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুল করে বসি সেজন্য আপনি আমাদের পাকড়াও করবেন না; হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিবেন না যেভাবে আপনি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন; হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিবেন না; আর আমাদের পাপমোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ বা রহম করুন; আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের মুকাবিলায় বিজয়ের জন্য আপনি আমাদের সাহায্য করুন। আল্লাহ তা’য়ালা কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। অপরদিকে যাকে যে ক্ষেত্রে দায়িত্ব দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট ফিল্ডের যোগ্যতা অর্জন করা তার জন্য অতীব প্রয়োজন। সহযোগীদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা রাসূলে কারীম (সা.) তার অনুসারীদেরকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতেন। খন্দক যুদ্ধে পরিখা খনন করার সময় তাঁরা যখন এক পাথর খণ্ড ভাঙ্গতে পারছিলো না তখন তিনি নিজে এগিয়ে আসেন এবং পাথর ভাঙ্গতে সহযোগিতা করেছেন। পস্পরের প্রতি রহমদিল অনুসারীদের প্রতি রহমদিল থাকতে হবে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আমার ঘরে আল্লাহর রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবী কারীম (সা.) এভাবে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তিকে আমার উম্মতের কোনো বিষয়ের কর্তৃত্ব দান করা হয়, অতঃপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি মেহেরবানী করে, তুমিও তার ওপর মেহেরবানী করো। অপর হাদীসে এসেছে, হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ নরম আচরণকারী এবং যাবতীয় কার্যক্রমে তিনি নরম আচরণই পছন্দ করেন। রাসূলে কারীম (সা.) হযরত আবূ বকরের গুণের কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দয়াশীল হলো আবূ বকর। ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল হওয়া রাসূলে কারীম (সা.)-এর ভাষায়, যে নেতা ভিন্নমত পোষণকারীদের সহ্য করতে পারে না সে আমার দলভুক্ত নয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, সাহাবারা সরাসরি প্রশ্ন করতেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ এটা কি অহীর আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত না এতে কোনো মত দেয়ার সুযোগ আছে। অহীর আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত না হলে আল্লাহর রাসূলের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেও সাহাবারা মত দেয়ার অনেক নযির রয়েছে। প্রতারণা না করা মুসায়িব (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) নবুওয়্যাত পূর্ববর্তী সময়ে যখন তার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন কখনও প্রতারণা করেননি বা তাকে ঠকাননি। মহানবী (সা.)-এর বলেছেন, যে প্রতারাণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়। নিজের জন্য যা পছন্দ অন্যদের জন্য তা পছন্দ করা সে প্রকৃত মু’মিন, যে নিজের জন্য যা পছন্দ করে সে তার অপর ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে। রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, হযরত আবূ হামযাহ আনাস ইবন মালিক (রা.) রাসূলুল্লাহ্ (সা.) খাদেম থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। কারো শরীরে বা মনে আঘাত না দেয়া তিনিই প্রকৃত মু’মিন যার জবান ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। রাসূলে কারীম (সা.) কখনও কাউকে শরীরে বা মনে আঘাত দেন নাই। উপরন্ত রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, হযরত আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে? তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে। কারো প্রতি সন্দেহ পোষণ না করা আল্লাহ তা’য়ালা সন্দেহ পোষণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। কুরআনুল কারীমে এসেছে, এ ধরনের কাজ সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, হে মু’মিনগণ! তোমরা ধারণা থেকে বেশি বেশি বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গুনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেনো কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশতো খেতে পছন্দ করে? বস্তুত তোমরা একে ঘৃণাই করো। কাজেই, প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে কারো সম্পর্কে কারো মনে নেতিবাচক কিছু থাকলে তা পরিস্কার করে ঘুমানো উচিত। স্বৈরাচারী আচরণ না করা সমাজের প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, যারা স্বৈরাচারী আচরণ করে তারা যেনো ইসলাম থেকে পথচ্যুত। মহানবী (সা.) স্বৈরশাসককে যালিম বা অত্যাচারী শাসক এবং নিকৃষ্টতম শাসক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত আয়েজ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে এ কথা বলতে শুনেছি, দায়িত্বশীল বা শাসকের মধ্যে নিকৃষ্টতম শাসক হলো সে ব্যক্তি যে অত্যাচারী। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হযরত হুযাইফা (রা.)কে মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার পথে আটকানো হয় এবং এ প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছাড়া হয় যে, মদিনায় গেলে জিহাদে শরীক হবে না। যদিও তার মদিনায় যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিলো জিহাদে শরীক হওয়া। রাসূলে কারীম (সা.) এ কথা শোনার পর তাকে জিহাদে যেতে বারণ করেন এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বলেন। আল্লাহ তা’য়ালার ভালোবাসা প্রাপ্তির অন্যতম শর্ত হচ্ছে ওয়াদা পালন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন : আর যে ব্যক্তি তার ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবে এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে, সে আল্লাহ তা’য়ালার প্রিয়ভাজন হবে। আর নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তা’য়ালা মুত্তাকীদের ভালোবাসেন। ওয়াদা ভঙ্গকারীর কঠিন খারাপ পরিণতির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন, আর যারা আল্লাহ্র সাথে করা অঙ্গীকার ও নিজের শপথ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দেয়, তাদের জন্য আখিরাতে কোনো অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’য়ালা তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পাক পবিত্রও করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। গোপনীয়তা রক্ষা করা ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের জন্য কিছু একান্ত সময় প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন : ওহে যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে খাবার প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে খাবার গ্রহণের জন্য নবীর ঘরে প্রবেশ করো না; তবে তোমাদের আহ্বান করলে তোমরা প্রবেশ করো এবং খাবার গ্রহণ শেষে তোমরা চলে যাও এবং তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। নিশ্চয়ই তোমাদের এ আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়, কিন্তু সে তোমাদের উঠিয়ে দিতে সংকোচবোধ করেন; তবে আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না; তোমরা তার স্ত্রীদের নিকট থেকে কিছু চাইলে হিজাব বা পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র; তোমাদের কারো পক্ষে আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সমীচীন নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদের বিয়ে করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়; নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে এসব কাজ গুরুতর অপরাধ। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি ও উদারতা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রাসূল (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আল কুরআনে বলেন, আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি রহমাতুল্লিল আলামিন বা বিশ্ব জগতের জন্য রহমত হিসাবে। আল্লাহর রাসূল ছিলেন ক্ষমাশীল। কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিতেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, একদা জনৈক ইয়াহুদী মহিলা আল্লাহর রাসূলকে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা.) তাকে কিছুই করেন নি। তায়েফে আল্লাহর রাসূলকে রক্তে রঞ্ছিত করা হয়। হযরত জিবরাইল (আ.) এসে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে অনুমতি চান দু’পাহাড়ের মাঝখানে রেখে তাদেরকে পিষিয়ে মারতে। কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দরদভরা ভাষায় দোয়া করেন, হে আল্লাহ! আমার কাওমকে ক্ষমা করে দিন এবং হিদায়াত দান করুন। তারা আমার প্রতি যা করেছে তা তারা বুঝেনি। আত্মঅহঙ্কার প্রদর্শন না করা নেতৃত্বের চরিত্রে আত্মঅহঙ্কারের কোনো স্থান নেই। একবার রাসূলে কারীম (সা.) একদল সাহাবাসহ ভ্রমণ করাকালীন পথিমধ্যে যাত্রাবিরতি করার সময় তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন রাতের খাবারের জন্য একটি ছাগল জাবেহ করবেন। সাহাবারা একেকজন একেক কাজ ভাগ করে নিলেন। কাঠ সংগ্রহ করে আনার দায়িত্ব কেউ নেয়নি। তখন রাসূলে কারীম (সা.) বললেন, ঠিক আছে আমি কাঠ সংগ্রহ করে আনবো। তখন অন্যরা বলেন, আপনি আল্লাহর রাসূল। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য যে আপনার খিদমত করা। তখন রাসূলে কারীম (সা.) বললেন, আল্লাহ তার এমন কোনো বান্দাহকে পছন্দ করে না যে নিজেকে অন্যদের থেকে পার্থক্য করে। এভাবেই তিনি ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করেন। এবং আত্ম অহঙ্কার থেকে বেঁচে থাকেন। মহানবী (সা.) আত্মঅহঙ্কারী ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন বেশ বিনয়ী। রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে জনৈক ব্যক্তি ভীত সন্ত্রস হয়ে পড়লে অভয় দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, আমি তো বাদশাহ নই, আমি একজন কুরাইশী মহিলার সন্তান, যিনি শুকনা গোশতো খেতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি আরো বলেছেন, আমি একজন গোলামের ন্যায় পানাহার করি এবং একজন গোলামের ন্যায় মাটির উপর উপবেশন করি। মহানবী (সা.) যেমন বীরত্ব প্রকাশ করতেন তেমন বিনয়ী ভাবও প্রকাশ করতেন। হাদীসে মহানবী (সা.) বলেছেন, আমি সংগ্রামের নবী, আমি রহমতের নবী। উপরোক্ত আলোচনায় ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আদর্শের প্রভাব যথাযথভাবে উপস্থাপিত হলো। মহান আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টি মানুষ সামাজিক জীব। আমাদের রাসূল (সা.) ও ছিলেন সমাজের একজন সদস্য। এজন্য আর দশ জনের মতো তাঁর ছিলো নানা সামাজিক দায়বদ্ধতা। নবুওয়্যাত লাভের আগে বা পরে সব সময়ই সমাজে তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছেন তাঁর সে আদর্শ দৃষ্টান্তমূলক। সমাজ সংস্কার, আর্তের সেবা, মানবতার কল্যাণের জন্য যৌবনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হিলফুল ফুযুল। নবুওয়্যাত লাভের পরে মক্কা ও মদিনার জীবনের আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করে তিনি দেখিয়েছিলেন সৌহার্দ্যপূর্ণ, বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ সমাজ কাকে বলে। মক্কা বিজয়ের পরে এবং মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরে সে সমাজে অমুসলিমরাও ছিলো। কিন্তু তারা বাস করতো শান্তিতে পূর্ণ নিরাপত্তার ভেতরে। আমরা বাস করছি অস্থির, স্বার্থপর এবং জটিল সামাজিক কাঠামোর ভেতর। এ সমাজ আমাদের কারণেই এমনি রূপ পেয়েছে। যদি রাসূলে আকরাম (সা.)-এর নির্দেশিত সমাজ গড়ে তোলা যায় তবেই আমরা এ থেকে মুক্তি পাবো। রাসূল (সা.)-এর আদর্শে গঠিত সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে। রাসূল (সা.)-এর আদর্শ হলো প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক এবং খোঁজ-খবর রাখা। তিনি বলেন, যদি কোনো মুসলমান রাত্রে আহার করে ঘুমায় এবং তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে তবে ঐ ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়। আল কুরআনের বহু স্থানে সমাজ, প্রতিবেশী, পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। রাসূল (সা.)-এর জীবনে সেসব আদর্শ হিসাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। আজকের এ যুগে আমাদের সমাজে একটা রেনেসাঁ দরকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজের জন্য। ইসলাম এক অসম্প্রদায়িক ধর্ম। রাসূল (সা.)-এর আদর্শ ছিলো অসম্প্রদায়িকতার পক্ষে। তিনি বলেন, অমুসলিমদের রক্ত আমাদের নিজেদের রক্তের মতো নিরাপত্তার দাবিদার, আর তাদের ধন সম্পদ আমাদের নিজেদের ধন-সম্পদের মতো সংরক্ষণযোগ্য। সুতরাং বলাই বাহুল্য, একজন মুসলিমের কাছে সব মানুষই নিরাপদ, যদি সে রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসারে চলে। সমাজ যদি এ আদর্শের প্রতি একতাবদ্ধ থাকে তবে সাম্প্রদায়িক বিভেদ, দাঙ্গা, অমুসলিমদের হেয় করা কিছুই ঘটা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ মানুষে মানুষে বিভেদ নিষেধ করেছেন। পৃথিবীর সব সুযোগ-সুবিধা সবার জন্য সমানভাবে উম্মুক্ত রেখেছেন। মহান আল্লাহ আল কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা হচ্ছে একমাত্র কিতাব, যার মধ্যে কোনো সন্দেহ ও সংশয় নেই। আর এটাই আল্লাহ্ভীরুদের জন্য হিদায়াত বা জীবনযাপন পদ্ধতি ও পথ নির্দেশিকা। অন্যদিকে জোর করে মানুষের ওপরে নিজের মত চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এমনকি ইসলামের নামেও না। জোর করে ইসলামে দীক্ষিত করার তো কোনো প্রশ্নই নেই। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, আপনার রব ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে সবাই ঈমান আনতো, তবে কি আপনি মু’মিন হবার জন্য মানুষের ওপরে জোর জবরদস্তি করবেন!। মহানবী (সা.) তার জীবনে আল কুরআনের বাণী পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছিলেন। যারা মুসলিম তারা হবেন পুরো মানবিক সমব্যথী এক আদর্শবান মানুষ। রাসূল (সা.)-এর এহেন আদর্শে আমরা উজ্জীবিত কি না সেটি বিচার করে দেখার আবশ্যকতা রয়েছে। যথাযথ যোগাযোগ মহান আল্লাহ তা’য়ালা প্রত্যেক যুগে নবী রাসূল পাঠিয়েছেন প্রত্যেকের আপন জাতির ভাষায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি যাতে সে তাদের জন্য অবতীর্ণ কিতাব পরিস্কারভাবে বর্ণনা করতে পারে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন, আর তিনি মহাপ্রতাবশালী ও মহাপ্রজ্ঞাবাদ। যেনো তাঁরা অদের ভাষা বুঝতে পারেন এবং তাদের রুচি, জ্ঞান, কৃষ্টি, কালচার ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রেখেই পদের কাছে দাওয়াতি কাজ করতে পারেন। কোনো আন্দোলন যদি সমাজের মানুষদের ভাব ও ভাষা বুঝতে অপারগ হয় আহলে উক্ত আন্দোলন সফলতা লাভ করতে পারে না। অতএব দুর করার জন্য নেতৃত্বকেই কৌশলী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মানুষের জীবনযাত্রা যেমনিভাবে এক নয় তেমনিভাবে গ্রাম ও শহরের মানুষের চিন্তা, চেতনা ও সামাজিক প্রয়োজন এক ও অভিন্ন নয়। গরীব ও অসহায়দের খোঁজ-খবর রাখা রাসুলে কারীম (সা.) বলেন, আমার মৃত্যুর পর আমি যা কিছু রেখে যাই তা থেকে আমার স্ত্রী ও চাকরদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে বাকি সব যেনো গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হয়। আমার উত্তরাধিকারীদের মাঝে যেনো বণ্টন করা না হয়। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ছিলো মহানবী (সা.)-এর অন্যতম কাজ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারের নিকট পৌঁছে দিও। আর তোমরা যখন মামুনের মধ্যে বিচার ফয়সালা পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে সুবিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কতোই না উৎকৃষ্ট; আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। আদন তথা ন্যায় বিচার মদীনাতে রাসূলে কারীম (সা.) একজনকে চুরির ঘটনায় হাত কাটার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে কিছু দূর্বলচেতা সহাবা মনে করেছিলো উক্ত ব্যক্তিকে হয়তোবা শাস্তি দেয়া হবে না। কেননা তিনি ছিলেন রাসূল (সা.) দূর সম্পর্কিত আত্মীয়। মক্কা বিজয়ের পর প্রভাবশালী মখযুম গোত্রের জনৈক মহিলা চুরি করে ধরা পড়ে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী হাত কাটা হলে মেয়েটি সম্ভ্রান্ত বংশের হওয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হবে বিবেচনা করে শাস্তি মুকুফ করার জন্য সাহাবায়ে কিরামগণ পরামর্শ করে হযরত উসমান ইবন যায়িদকে রাসূল (সা.)-এর নিকট সুপারিশসহ পাঠান। এ কথা আল্লাহর রাসূলের কানে গেলে তিনি এ সুপারিশ শুনে অত্যন্ত রেগে গিয়ে বলেন, তুমি কি আল্লাহর হদ্দসমূহের মধ্যকার একটি হদ্দ সম্পর্কে সুপারিশ করছো? অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ভাষণ দিয়ে বললেন, হে মানব সমাজ! তোমাদের পূর্বেকার লোকদের নীতি এ ছিলো যে, কোনো সম্ভান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিতো এবং অসহায় দূর্বল চুরি করলে তার উপর হদ্দ কার্যকর করতো। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমাও চুরি করতো তাহলে মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই তার হাত কেটে দিতো। তিনি তখন সকলকে স্মরণ করিয়ে বললেন, আগেকার জাতিসমূহ ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে, তাদের ধনীদের জন্য আইন সহজ করে প্রয়োগ হয়েছে আর গরীবদের জন্য প্রয়োগ হয়েছে কঠোরভাবে। একদা জনৈক ইয়াতীম আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে আবূ জাহল কর্তৃক তার সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ করলে রাসূল (সা.) তাকে নিয়ে আবূ জাহলের কাছে যান। আবূ জাহল আল্লাহর রাসূলকে দেখে ভয় পেয়ে যান এবং উক্ত ইয়াতীমের সম্পদ ফেরত দেন। তাই একথা দ্বিধাহীন চিত্তে আমরা বলতে পারি যে, মানবাধিকার, সাম্য, ন্যায় বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিশ্বে আগমন করেছিলেন। সাম্য ও ভ্রাতৃত্বই ছিলো যাদের যুদ্ধের মূলনীতি; যখন গোত্রীয় মর্যাদা সমুন্নত রাখার মূলমন্ত্রের হীন চেতনায় প্ররোচিত হয়ে বছরের পর বছর অবলীলায় যুদ্ধ সংঘাত চলছিলো পরস্পরের মাঝে। স্বজনপ্রীতি মানুষের চিরন্তন স্বভাব, যার পরিণতি অত্যন্ত অশুভ। সামাজিক জীবনে পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব সংঘাত, অশান্তি প্রভৃতি স্বজনপ্রীতির পুঁতিগন্ধময় বিষফল। কিন্তু জাতি, বংশ, বর্ণ, ভাষা দেশ ও পেশার কারণে মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য নেই; বরং মানুষ হিসেবে সকলে একই সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হবে এবং সকলের জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। সাম্য ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মূলনীতি। ইসলাম জন্মগতভাবে কেউ উৎকৃষ্ট ও কেউ নিকৃষ্ট এ ধারণাকে অস্বীকার করে এবং সমগ্র মানব জাতির সমান মর্যাদা ও ঐক্যের সূত্র উপস্থাপন করে। উপরন্ত, তা আজকের বর্ণবাদ, কৌলিন্যবাদ এবং আশরাফ ও আতরাফের মূলে চরম কুঠারাঘাত হানে। ইসলামের আলোকে জাতি, বর্ণ, ভাষা ও অঞ্চলগত বিভক্তি কোনো ভেদাভেদ বা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করা হয়নি; বরং মানুষের পারস্পরিক পরিচয়ের সুবিধার জন্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ও বৈষম্য যখন সমগ্র দুনিয়ায় চরম অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে যাচ্ছিল, তখনি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ভেদাভেদ ও বৈষম্যের যাবতীয় প্রাচীর ধ্বসিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সাম্যের সুমহান নীতি। আরবের কুরাইশরা বংশ মর্যাদার অহঙ্কার করতো, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন ঘোষণা করেন, হে কুরাইশগণ! আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের জাহিলী যুগের অহঙ্কার এবং গোত্রীয় অহমিকা নিশ্চিন্ন করে দিয়েছেন, এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, তোমরা সকলে আদম (আ.)-এর সন্তান। আর আদম (আ.) কে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদায় হজ্জের শেষ ভাষণে রাসূল (সা.) এ ঘোষণার দিগন্তকে বিশ্বব্যাপ্ত করে জগৎবাসীকে শুনিয়ে দেন, ওহে লোকসকল! নিশ্চয়ই তোমাদের রব এক (আল্লাহ)। তোমাদের পিতা (আদম আ.) এক। তোমরা সকলে আদম থেকে, আর আদম মাটি থেকে তৈরি। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত তিনি, যিনি তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াবান। আরবি লোকের অনারবি লোকের ওপর মর্যাদা নেই, শুধুমাত্র তাকওয়া ছাড়া। সকল শ্রেণি বৈষম্য ও নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে সাম্য-মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, স্মú্রীতি, সংহতি, ন্যায় ও সাম্প্রদায়িক স্মú্রীতির সৌধের ওপর ইসলামী আদর্শ সমাজ সংগঠক হয়ে আবির্ভূত হন গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক, ইসলামী সমাজ বিপ্লবের অবিসংবাদিত স্থপতি, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সিপাহসালার হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁর জীবনে সংকীর্ণ সাস্প্রদায়িকতার লেশমাত্রও ছিলো না। তাঁর জীবন পর্যালোচনা করলে হৃদয়াঙ্গম করা যায় তিনি উদার ও একনিষ্ঠতার দ্বারা দ্বন্দ্ব-কলহ হতে চিরশান্তির সোপানে মানবগোষ্ঠীকে আরোহণ করিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের সুধী গ্রন্থকার স্যার টমাস কার্লাইল বলেন : অন্ধকার হতে আলোর পথের দিশারী ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.)। ইসলাম দ্বারাই সর্বপ্রথম বিশ্ব আবার সঞ্ছীবিত হয়ে ওঠে। সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সার্বজনীন মানবাধিকারের বিশ্বায়নের এ যুগে পররাষ্ট্রনীতি, রাষ্ট্রনীতি, প্রশাসনিকনীতি সবক্ষেত্রেই রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের অপরিহার্যতা প্রকট হয়ে ওঠেছে। কারণ জীবনের, সমাজের, রাষ্ট্রের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে রাসূল (সা.)-এর আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নেই। মানব-ঐক্য, বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসূল (সা.) ছিলেন সকল চিন্তা-চেতনার অগ্রদূত। জীবনের বিভিন্ন কর্মে এবং সবশেষে বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি দাস দাসী, বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের ন্যায্য অধিকার, রক্তের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মানবাধিকারের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আজকের পৃথিবীতে যুদ্ধবন্দীদের বেলায় জেনেভা কনভেনশনের উল্লেখ করা যায়। রাসূল (সা.) যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণে ও তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার সংরক্ষণে, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তি স§úাদন ও তা প্রতিপালনে, যুদ্ধকালে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও নিরীহ মানুষ, এমন কি ফল, শস্য, বৃক্ষ ও সম্পদের ক্ষতি না করার যে উন্নত মানবিক নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন, তাকে কোনো কালের তত্ত্ব বা ধ্যান-ধারণা আজও আদর্শ হিসাবে অতিক্রম করতে পারেনি। মানবতার ভিত্তিতে সমাজ গঠন সামাজিক সাম্য, অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ব এবং মানবতার ভিত্তিতে তিনি যে উন্নত আদর্শ সমাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোনো নযীর নেই। তিনি অন্ধ আভিজাত্যের গৌরব ও বংশ মর্যাদার মূলে কুঠারাঘাত করেন। মানুষে মানুষে সকল প্রকার অসাম্য ও ভেদাভেদ দূরীভূত করে মানবতার আদর্শে সমাজকে ঢেলে সাজান। কেন্দ্রীয় শাসন প্রবর্তন প্রাক ইসলামী যুগে আরবে কোনো কেন্দ্রীয় শাসন ছিলো না। গোত্রে বিভিন্ন প্রকৃতির শাসন চলতো। গোত্র প্রধানই ছিলো দন্ড মুন্ডের মালিক। তাই সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ছিলো না। মহানবী (সা.) এ গোত্র তান্ত্রিক ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে কেন্দ্রীয় শাসন এবং মদিনাতে একটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করেন।-এর মাধ্যমে শতধা বিভক্ত ও বিবদমান গোত্রগুলোকে ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে সংহতি ও শান্তি স্থাপন করেন। ইসলামী সং¯ৃ‹তির বিকাশ ইসলামী জীবনদর্শনের আলোকে মানুষের ব্যবহারিক জীবন ও পরিবেশে যে সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে তাই ইসলামী সংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতিতে ইসলামী আকীদাহ বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও আচরণিক কার্যাবলি সবই ইসলামী শরীয়তের অনুকূল থাকে। শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য শিল্প ইত্যাদি ইসলামী ভাবধারায় গড়ে ওঠে। এক কথায়, জীবনের বিভিন্ন স্তরে ইসলামী মৌল বিশ্বাসের ভিত্তিতে যেসব নিয়মাবলি, বিধিবিধান পালনীয়-এর সব কিছুই ইসলামী সংস্কৃতির অঙ্গ। ইসলামী জীবনবোধের বিপরীতে কোনো আচার আচরণ ও কৃষ্টি কোনো মুসলিম গ্রহণ করলে তা ইসলামী সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয় না বরং বিজাতীয় অনুকরণ, কুসংস্কার, বিদয়াত ও ক্ষেত্র বিশেষে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত হয়। যাকে জাহেলিয়াত বলা হয়। ড. সালেহ হিন্দি ইসলামী সংস্কৃতির সংজ্ঞায় বলেন, এটা হলো এমন এক জীবন পদ্ধতি, মুসলিমগণ প্রতিনিয়ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শনের আলোকে অবলম্বন করছে। চাই তা সামাজিক জীবনের বৈষয়িক ক্ষেত্রে হোক কিংবা সভ্যতা নামে পরিচিত আত্মিক চিন্তার ক্ষেত্রে হোক। অতএব, ইসলামী সংস্কৃতি হলো ইসলামের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে মানুষ তার আচার আচরণ, চালচলন, ব্যবহার, দেহ, মন ও আত্মাকে যেভাবে সংস্কার ও সংশোধন করে, তাই ইসলামী সংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতির স্বরূপ ও বিষয়বস্তু প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। যেমন ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দু জাতির হিন্দু সংস্কৃতি, খ্রিস্টান জাতির খ্রিস্টান সংস্কৃতি, ইয়াহুদী জাতির ইয়াহুদী সংস্কৃতি ইত্যাদি। আবার ভাষার ভিত্তিতে যেসব জাতি পরিচিত তাদেরও কিছু সংস্কৃতি থাকে। যেমন, বাঙ্গালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি, ইংরেজ জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি। ইসলামে জাতিবোধ শাশ্বত জীবন বিধান ইসলামের ভিত্তিতে। তাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মুসলিমদের রয়েছে ইসলামী সংস্কৃতি।-এর স্বরূপ এবং বিষয়বস্তু হলো : ক. এটা সর্বোত্তম সংস্কৃতি, খ. কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক, গ. মার্জিত ও রুচিশীল, ঘ. আখিরাত কেন্দ্রিক এবং ঙ. কলুষমুক্ত ইত্যাদি ইসলামী সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক ক. সাক্ষাতে সৌজন্যমূলক আলাপ খ. আনন্দ উদযাপন গ. দুঃখে ধৈর্য ধারণ ঘ. পোশাক পরিচ্ছদে শালীনতা ঙ. শিক্ষা ও সাহিত্যে ইসলামী ভাবধারা চ. সঙ্গীতে ইসলামী ভাবধারা ছ. ক্যালিওগ্রাফি আর্ট ডিজাইনে ইসলামী চিন্তা জ. সিনেমা বা চলচিত্র নির্মাণে ইসলামী অনুশাসনের অনুসরণ ইত্যাদি। সমাজ পরিবর্তনের জন্য আগে নিজেকে শুদ্ধ করা দরকার। যার জন্য প্রয়োজন একটি আদর্শ। আর পৃথিবীর সকলের মধ্যে রাসূল (সা.)-এর জীবন শ্রেষ্ঠ আদর্শ। তার কথা, কাজ, উপদেশ মেনে চলা ও তাঁর দৈনন্দিন জীবন অনুসরণ, অনুকরণের মাঝেই আত্মশুদ্ধি নিহিত। কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ মানা থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে, যাদের জন্য তরুণ প্রজন্ম আজ দীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিশোর ও তরুণরা উদ্ভট বিদেশি সংস্কৃতির আদলে কল্পনা-আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে মূলধারার ইসলামী সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক ধরনের বিভ্রমের পথে হাঁটছে। তথাকথিত সেলিব্রিটি, যারা মুসলিম হয়েও মিউজিক, নাটক-সিনেমা, যিনা-ব্যভিচার, ফ্রিমিক্সিং, হারাম রিলেশন ইত্যাদির মতো হারাম কাজগুলোর প্রমোট করে যাচ্ছে সমাজে, ফলশ্রুতিতে বাড়ছে কিশোর অপরাধ, যেমন : ধর্ষণ, ইভটিজিং ইত্যাদি। তরুণরা আজ রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ ভুলে গিয়ে, সে তথাকথিত সেলিব্রেটিদের লাইফ স্টাইল ফলো করছে। আল কুরআনে এসেছে, যে রাসূলের আনুগত্য করলো, সে আসলে আল্লাহর আনুগত্য করলো। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করলো আমি আপনাকে তাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। আমরা যাকে আদর্শ হিসেবে ধারণ করবো তার সাথেই আমাদের হাশর হবে। তাই তথাকথিত সেলিব্রেটি যারা প্রতিনিয়ত রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখছে তাদের বয়কট করতে হবে। ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন সমস্যা ও পরিস্থিতি মোকাবেলায় জীবনের সর্বাবস্থায় ও রাসূল (সা.)-এর আদর্শকে আঁকড়ে ধরতে হবে। যেমন কবি মতিউর রহমান মল্লিক কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন, রাসূল আমার ভালোবাসা, রসূল আমার আলো আশা। রসূল আমার প্রেম বিরহের মূল আলোচনা, রসূল আমার কাজে কর্মে অনুপ্রেরণা। মানবতার নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিপূর্ণ জীবন ছিলো মানুষের জন্য গ্রহণীয় আদর্শ। তিনি একজন মানুষ হয়েই মানবতার আদর্শরূপে প্রেরিত হয়েছেন। তাই আল -কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহর সব চাইতে বড়ো অনুগ্রহ তোমাদের প্রতি এই যে, তোমাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে আল্লাহর আয়াত শিক্ষা দিয়েছেন, পবিত্র, বিশুদ্ধ, সুসভ্য ও সংস্কৃতিবান করেছেন। আল্লাহর কিতাব তোমাদেরকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন আর তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন বিজ্ঞান ও কৌশল যদিও-এর আগে তোমরা ছিলে স্পষ্ট গোমরাহিতে। ইসলাম ও জাহেলিয়াতের সংস্কৃতির স্বরূপ আশরাফুল মাখলুকাতের মধ্যে একমাত্র মানুষ হচ্ছে সংস্কৃতি তৈরি কারক প্রাণী। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রত্যেকের নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু জাহেলিয়াতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে এ আধুনিক যুগে সুস্থ, নির্মল এবং ইসলামী সংস্কৃতি বিলুপ্তি হওয়ার পথে। আধুনিক সংস্কৃতি জাহেলিয়াতের আগ্রাসনের মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মানুষের পুরো জীবনটাই একটি সংস্কৃতি। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, সংস্কৃতি মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বলা হয়ে থাকে যে, তথাকথিত আধুনিক সংস্কৃতির কুফল আরবি কবির ভাষায় মাতৃক্রোড়ই হচ্ছে সন্তান-সন্ততির জন্য অনবদ্য শিক্ষালয়। পারিবারিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার নিয়ামক শক্তি। সন্তান-সন্ততির মাঝে রুচি, মননশীলতা ও মূল্যবোধ তৈরি করে। পারিবারিক ঐক্য ও বন্ধন বৃহত্তর ঐক্যের শিক্ষা দেয়। পরিবারের একজন সদস্যের ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমালোচনা শুনা ও সহ্য করার দীক্ষা পাওয়া যায়। পারিবারিক শাস্তি প্রতিষ্ঠার প্রজ্ঞা বৃহত্তর অঙ্গনে স্থিতিশীলতা সৃষ্টিলব্ধ জ্ঞান। যৌথ পরিবার আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হলেও পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাবে আজ সেটি ক্ষীয়মাণ। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত দার্শনিক অধ্যাপক সরোকিন বর্তমান পারিবারিক ব্যবস্থার ব্যাপারে বলেন, ‘পূর্বে মানুষ আনন্দ লাভ ও চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে ফিরে যেত পরিবারের নিভৃত আশ্রয়ে, কিন্তু বর্তমানে মানুষ তার জন্য চলে যায় সিনেমা-থিয়েটার নাচের আসর ও ক্লাবঘরের গীতমুখর বেষ্টনীতে। পূর্বে পরিবার ছিলো আগ্রহ-ঔৎসুক্য ও আনন্দ-উৎফুল্লাতার কেন্দ্রস্থল। পারিবারিক জীবনেই আমরা সন্ধান করতাম শান্তি, স্বস্তি, তৃপ্তি আনন্দের নির্মলতা। কিন্তু এখন পরিবারের লোকজন হয়ে গেছে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত।’ আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পারস্পরিক প্রীতি, মাধুর্য, অকৃত্রিমতা আন্তরিকতা ও পবিত্রতা পার্থিব স্বার্থের মোহ, জীবনমান উন্নত করার প্রতিযোগিতা ও প্রবণতা আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত ঐতিহ্যকে চূর্ণ করে দিচ্ছে। কেউ কারোর ধার ধরে না, পরোয়া করে না। আপন সন্তান সন্ততির পার্থিব ও ক্যারিয়ার গঠনে মা-বাবা যেনো আজ নির্ঘুম ক্লান্তিহীন কারিগর। সামাজিক মর্যাদা পালন করতে গিয়ে অনেকের সন্তানসন্তুতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রহণ করছে। সবার মাঝে অজানা অদৃশ্য কিছু অর্জনের চরম ও পরম আকাক্সক্ষা। পারিবারিক ও সামাজিক মিলবন্ধন আজ হারিয়ে যাচ্ছে। বিবাহের ক্ষেত্রে-এর সংস্কৃতি প্রায় লুপ্ত।-এর ফলে পারিবারিক বন্ধন সংস্কৃতি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। একদিকে অপরিণত বয়সে বিবাহের সংখ্যা ও যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি ব্যাপক হারে বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটছে। ২৭ আগস্ট ২০১৮ দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতি ঘন্টায় একটি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যেখানে ২০০৬ সালে পুরো বাংলাদেশ প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল ০.৬ জন, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১.১ জন। এক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষিতদের হার ১.৭ জন। আর অশিক্ষিতদের হার ০.৫ জন। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ২৫-২৯ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আবেদন করছে। এক্ষেত্রে নৈতিকষ্ফলন, পরস্পর সন্দেহ প্রবণতা ও পরকীয়া বিচ্ছেদের মুখ্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। মুক্তির জন্য করণীয় মননশীল সংস্কৃতি বিকাশে প্রতিশ্রুতিশীল থাকতে হবে। ইসলামী সংস্কৃতি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য ধারণ করলো সে তাদেরই দলভুক্ত হলো। সংস্কৃতির নামে কিছু অপসংস্কৃতি দেদারছে চলছে। যার কুফল তরুণ বয়স থেকে শুরু করে মধ্য বয়সী সকলের ওপর পড়ছে। অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে। আর এগুলো সম্ভব একমাত্র ইসলামী জীবনব্যবস্থার মাধ্যমে। আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে, সকল সমস্যার সমাধান একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। মহানবীর প্রতিষ্ঠিত সমাজে সামাজিক সুবিচার যেসব মহান বুনিয়াদী নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে ইসলামের সমুদয় শিক্ষা রচিত হয়েছে, তার অন্যতম অংশ হচ্ছে সামাজিক ন্যায়বিচার বা সামাজিক সুবিচার। অনেকে মনে করেন সামাজিক সুবিচারের ধারণা একটি সমকালীন পাশ্চাত্য উপলব্ধি। এধারণা সঠিক নয় বরং সম্পূর্ণ ভুল। পাশ্চাত্যে সামাজিক সুবিচারের ধারণা বিকাশিত হওয়ার বহু আগেই ইসলাম কেবল সামাজিক সুবিচারের ধারণাই দেয়নি বরং বাস্তবে তা প্রতিষ্ঠা করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। ইসলামের মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে আদল বা সুবিচার প্রতিষ্ঠা। ইসলামে সামাজিক সুবিচার হচ্ছে একটি ব্যাপক ও সমন্বিত কর্মসূচি। ইসলাম হচ্ছে মানব জাতির জন্য সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নির্ধারিত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সামাজিক জীবনে এ বিধানের লক্ষ্য হচ্ছে সুবিচার ভিত্তিক একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও ন্যায়ের মানদণ্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। ইসলাম সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক জীবনে সমতার ভিত্তিতে মানুষের অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারণ করে। সুবিচারের কুরআনিক পরিভাষা হচ্ছে আদল। ইংরেজীতে দু’টি স্বতন্ত্র সত্যের সমন্বয়ে আদল গঠিত। ১. মানুষের অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও সাদৃশ্য প্রতিষ্ঠা করা। ২. প্রত্যেককে যথাযথভাবে তার অধিকার প্রদান করা। কোনো পক্ষপাতিত্ব না করে যার যা প্রাপ্য তাকে তা দেয়ার নাম আদল। সাধারণত আদল অর্থ করা হয় ইনসাফ। কিন্তু অনেক সময় ইনসাফ শব্দটি ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করে। ইনসাফ শব্দ থেকে এ ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, দু’ব্যক্তির মধ্যে তাদের অধিকার বণ্টিত হতে হবে অর্ধেক অর্ধেক বা সমান সমান ভিত্তিতে। এ ধারণা থেকে আদল মানে ধরে নেয়া হয় সমবণ্টন। অথচ সমবণ্টন ব্যবস্থা স্বাভাবিকতার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রকৃতপক্ষে আদলের দাবি হচ্ছে ভারসাম্য ও সামঞ্ছস্য, সমান সমান নয়। কোনো কোনো দিক থেকে আদল সমাজের মানুষের মধ্যে অবশ্যই সমতা দাবি করে, যেমন নাগরিক অধিকার। কিন্তু আবার কোনো কোনো দিক থেকে সমতার আদলের সম্পূর্ণ বিপরীত, যেমন : পিতামাতা ও সন্তানের মাঝে সামাজিক ও নৈতিক সম্পর্ক এবং উন্নত ধরনের সেবা প্রদানকারী নিম্ন মানের সেবা প্রদানকারীকে সমান সমান বেতন দেয়া। এজন্যই আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে সমতা বিধান করা নয় বরং ভারসাম্য ও সামঞ্ছস্য রক্ষা করা। আদলের দাবি হলো, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নৈতিক, সম্পর্কগত, অর্থনৈতিক, আইনগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারপূর্ণ ঈমানদারির সাথে যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। আল কুরআনে আদল ১৪ বার এবং ক্রিয়ার বিভিন্ন পদে ১৪ বার ব্যবহৃত হয়েছে। আদল ও কিসত সমর্থজ্ঞাপক পদবাক্য। কুরআনে কিসত ১৫ বার এবং ক্রিয়ার বিভিন্ন পদে ১০ বার ব্যবহৃত হয়েছে। সামাজিক সুবিচার বলতে সমাজের প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক চাহিদাসমূহ পাওয়ার সমান অধিকারকে বুঝায়। অর্থাৎ সামাজিক সুবিচার হলো সমাজে ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী ও জাতির প্রত্যেকেরই নিজ ন্যায়সঙ্গত চাহিদা পুরণের অধিকার ও স্বাধীনতা থাকবে। তা করতে গিয়ে ব্যক্তি যেনো অন্যের বা গোটা সমাজের অধিকার ক্ষুণ্ন না করে সে জন্য ব্যক্তির ওপর সমাজের বিভিন্ন সংস্থার কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। যেকোনো ধর্ম, বর্ণ বা গোষ্ঠীর সদস্য হোক না কেনো সমাজের প্রতিটি মানুষের জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তা লাভ, শিক্ষা ও কর্মলাভের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মতামত প্রকাশ ও ধর্ম পালনসহ যাবতীয় ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্র সমান হবে। আইনের চোখে প্রতিটি মানুষ হবে সমান। সকলেরই সুবিচার লাভের সমান অধিকার থাকবে। সামাজিক সুবিচারের এ সংজ্ঞা ও তাত্ত্বিক ধারণা হতে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, ১. সামাজিক সুবিচার লাভ ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক অধিকার। ২. সামাজিক সুবিচার লাভের জন্য সুবিচারভিত্তিক আইন অপরিহার্য। ৩. সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক অসমতা বা অবিচারের উৎস ও উপাদানগুলো সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। ৪. সামাজিক সুবিচার কেবল একটি ধারণা অথবা পরামর্শ বা উপদেশমূলক কর্মকাণ্ড নয় বরং প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রদানের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম ব্যক্তি ও সমাজের সুসমন্বয় ইসলামের অন্যতম অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে ইসলাম ব্যক্তিস্বার্থ ও সমষ্টিগত স্বার্থ উভয়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভারসাম্য স্থাপন করেছে। ইসলাম ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের ওপর সমান গুরুত্ব আরোপ করে উভয়ের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের ব্যবস্থা করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজ পরিবর্তনের পূর্বশর্ত ব্যক্তি পরিবর্তন। ব্যক্তি পরিবর্তন ছাড়া সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন কল্পনায় থেকে যায়। নবী কারীম (সা.) ব্যক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমেই সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন এনেছিলেন। ইসলাম শিখায় কি করে ব্যক্তি জীবন গড়ে তুলতে হবে, কি করে পরিবারে ও সমাজে অপর দশজনের সাথে করতে হবে ব্যবহার, কি করে নিজের জীবন ও স্বার্থকে অন্যের জীবন ও স্বার্থের সাথে মিশিয়ে ফেলতে হয়, ইসলামে রয়েছে এসবের বিস্তারিত নির্দেশিকা। সমাজের প্রম ও আদি ধাপ ব্যক্তি। কাজেই ব্যক্তি! যদি সৎ কর্মশীল না হয় সমাজ কখনও সৎ ও মহৎ হতে পারে না। কারণ ব্যক্তির সুসমন্বয়েই গঠিত হয় সমাজ। তাই ব্যক্তির জীবন ও সমাজের সমষ্টিগত স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ দু’য়ের সমন্বয় এবং পারস্পরিক সহযোগীতার ওপর মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি নির্ভর করে। রাসূল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক অন্যায়-অত্যাচার, খুন-খারাবি, যুলম-অবিচারের যাঁতাকলে পিষ্ট এক সমাজে আগমন ঘটে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। যিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ঘুণেধরা সে সমাজকে ভেঙ্গে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাই তিনি ছিলেন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক।-আমিন। চলবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়