প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৫
এআইকে ভয় নয়, নিজের কাজে লাগান

প্রযুক্তির এই দ্রুতগতির যুগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়, বরং এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আগে যেখানে অনেক কাজ করতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগতো, এখন সেগুলো মুহূর্তেই করা যায় এআই-এর সহায়তায়। অফিস, ব্যবসা, শিক্ষা বা ব্যক্তিগত উন্নয়ন সব জায়গাতেই এআই-কে কাজে লাগিয়ে সময় বাঁচানো ও কাজের মান বাড়ানো সম্ভব। সবচেয়ে বড়ো কথা, আধুনিক প্রযুক্তির এ সময়ে এআই-কে ভয় না পেয়ে বরং নিজ নিজ কাজে কীভাবে লাগিয়ে কাজকে দ্রুত ও আরো সহজ করা যায় সে বিষয়েই মনোযোগ দিতে হবে।
কেন এআই ব্যবহার করবেন?
আমরা প্রায়ই দেখি, একই ধরনের কাজ বারবার করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়। যেমন রিপোর্ট লেখা, ইমেইল লেখা, প্রেজেন্টেশন বানানো কিংবা কোনো তথ্য খোঁজা। এসব কাজ এখন এআই টুলস সহজ করে দিয়েছে। এআই শুধু তথ্য দেয় না, এটি বিশ্লেষণ করে, সাজিয়ে দেয়, এমনকি নতুন আইডিয়াও প্রস্তাব করে। বাংলাদেশে এখন অনেক তরুণ কর্মজীবী, শিক্ষার্থী এবং উদ্যোক্তা এআই ব্যবহার করে নিজেদের কাজ আরও দক্ষ করে তুলছেন। কেউ কনটেন্ট তৈরি করছেন, কেউ ডিজাইন করছেন, কেউ ব্যবসার মার্কেটিং উন্নত করছেন--সবই এআই-এর সহায়তায়।
কয়েকটি কার্যকর এআই টুলস
প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কাজের জন্যে এআই টুলস তৈরি হচ্ছে। কাজ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন এসব টুলস নানা ধরনের কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রোডাক্টিভিটি বা কাজের গতি বাড়ানো সম্ভব। সবচেয়ে জরুরি যার যে ধরনের কাজ সে কাজে উপযোগী টুলস খোঁজা। এতে করে নিজের কাজে এআই-কে কাজে লাগানো সহজ হবে। তবে এর মধ্যেও প্রতিনিয়ত বেশির ভাগ মানুষের যে ধরনের এআই টুলস সহায়তা করতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু টুলসের মধ্যে রয়েছে—
* চ্যাটজিপিটি : লেখালেখি, আইডিয়া জেনারেশন, ইমেইল লেখা বা প্রেজেন্টেশনের স্ক্রিপ্ট তৈরিতে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় টুলের মধ্যে অন্যতম ওপেন এআই-এর মালিকানাধীন চ্যাটজিপিটি। শুধু বিষয় লিখে দিন, সম্পূর্ণ লেখা সাজিয়ে দেবে। সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র—সবাই এতে উপকৃত হতে পারেন। তবে সবার আগে চ্যাটজিপিটিকে কীভাবে নিজের কাজে লাগানো যায় সে বিষয়টি শেখাটা জরুরি। ঠিকানা : https://chatgpt.com।
* ক্যানভা ম্যাজিক স্টুডিও : ডিজাইন তৈরি নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের জন্যে অসাধারণ একটি টুল হচ্ছে ক্যানভা ম্যাজিক স্টুডিও। পোস্টার, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যানার বা প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি কয়েক মিনিটে বানানো যায় ক্যানভার সাহায্যে। এখন ক্যানভাতেও এআই যুক্ত হয়েছে, যা নিজেই ডিজাইন সাজিয়ে দেয় বা লেখার সঙ্গে মানিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিক করে। ঠিকানা: https://www.canva.com/p/canvastudio।
* গুগল ইন্টারভিউ ওয়ার্মআপ : চাকরি প্রার্থীদের জন্যে একটি দারুণ এআই টুল। এটি ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন করে, আপনার উত্তর শুনে বিশ্লেষণ করে এবং বলে দেয় কোন্ জায়গায় উন্নতি করা দরকার। ইংরেজি চর্চা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতেও এটি সাহায্য করে। যারা চাকরিপ্রার্থী বা নিজেকে ইন্টারভিউতে সফল করে তুলতে চান তাদের জন্যে দারুণ একটা টুলস্ যা বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। ঠিকানা : https://grow.google/certificates/interview-warmup।
* নোশন এআই : নোট নেওয়া, টাস্ক সাজানো বা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে নোশন বেশ কার্যকর। আপনি যা লিখতে চান, শুধু ধারণাটা বলুন, নোশন এআই বাকিটা সাজিয়ে দেবে। অফিস বা পড়াশোনার কাজ গুছিয়ে রাখতে এটি চমৎকার সহায়ক। ঠিকানা : https://www.notion.com/product/ai।
* ইলিভেনল্যাবস : ভয়েস তৈরির এআই টুল হিসেবে জনপ্রিয় বেশ কিছু টুলসের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইলিভেনল্যাবস। আপনি চাইলে কোনো লেখা থেকে মানুষের মতো স্বাভাবিক কণ্ঠে অডিও তৈরি করতে পারেন। যারা ভিডিও বানান বা কনটেন্টে ভয়েস দিতে চান, তাদের জন্যে এটি দারুণ সহায়ক। ঠিকানা : https://elevenlabs.io।
* গ্রামারলি : ইংরেজি লেখার ভুল ধরতে এবং ভাষা উন্নত করতে এটি অন্যন্য একটি টুলস। শুধু ব্যাকরণ ঠিক করে না, লেখাকে আরও প্রফেশনাল করে তোলে। চাকরিপ্রার্থী বা ছাত্রদের জন্যে এটি খুবই দরকারি। ঠিকানা : https://grammarly.com।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এআই-এর সুযোগ
বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরের ধারা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এখন সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে। তরুণরা যদি এই প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার শেখে, তবে নিজেদের কাজ আরও দ্রুত, সৃজনশীল ও আধুনিকভাবে করতে পারবে।
যেমন : একজন ফ্রিল্যান্সার ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক বা ফাইবারে কাজ করছেন, তিনি এআই ব্যবহার করে সময় বাঁচাতে পারেন। একজন শিক্ষক পাঠ পরিকল্পনা তৈরিতে বা কুইজ বানাতে এআই ব্যবহার করতে পারেন। একজন সাংবাদিক সংবাদ বিশ্লেষণ বা তথ্য যাচাইয়ের কাজে চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য টুল ব্যবহার করতে পারেন।
তবে মনে রাখতে হবে, এআই হলো সহায়ক হাত, বিকল্প নয়। এটি ব্যবহার করার সময় যাচাই-বাছাই করা জরুরি, কারণ সব তথ্য সবসময় শতভাগ সঠিক হয় না। তাই নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এআই এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি এক প্রয়োজনীয় দক্ষতা। যে যত দ্রুত এআই ব্যবহার শেখবে, সে তত এগিয়ে থাকবে। সময় বাঁচবে, কাজের মান বাড়বে, আর নতুন সুযোগ তৈরি হবে। তাই আজ থেকেই নিজের কাজের ধরণ অনুযায়ী এক বা দুটি এআই টুল ব্যবহার শুরু করুন। দেখবেন—প্রযুক্তিই হয়ে উঠবে আপনার সবচেয়ে দক্ষ সহকর্মী।
নুরুন্নবী চৌধুরী : সাংবাদিক ও লেখক।