প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০১
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ কি জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশ মানছেন?

বৃহস্পতিবার চাঁদপুরে ৫২তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুর রকিব, পিপিএম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাজমুন্নাহার। জেলার আটটি উপজেলা থেকে নির্বাচিত বিজয়ী ৮টি করে ফুটবল, হ্যান্ডবল ও কাবাডি দল উদ্বোধনী খেলায় অংশগ্রহণ করে। খেলোয়াড়দের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে চাঁদপুর স্টেডিয়াম। উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভেন্টভিত্তিক দল গঠন করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ দিতে হবে। এতে করে মেধা বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুর রকিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু বইমুখী না করে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের মাঝে শৃঙ্খলা ও দলগত চেতনা গড়ে তোলে। সভাপতির বক্তব্যে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ জানান, জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বছরের শুরুতে ক্লাবভিত্তিক দল গঠনের জন্যে। যেমন ফুটবল ক্লাব, কাবাডি ক্লাব, ভলিবল ক্লাব, ক্রিকেট ক্লাব, ব্যাডমিন্টন ক্লাব, দাবা ক্লাব, সুইমিং ক্লাব ইত্যাদি। তিনি আরো জানান, সপ্তাহের নির্দিষ্ট একদিন এসব ক্লাবের কার্যক্রম শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্লাবগুলো সঠিকভাবে গঠন এবং পরিচালনা হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার এবং জেলা শিক্ষা অফিসের পরিদর্শকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সমান্তরালেই যেনো জেলা শিক্ষা অফিসার বক্তব্য দিয়েছেন। কথা হলো, ক্লাবভিত্তিক দল গঠনে জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশ কতোজন প্রধান শিক্ষক মেনেছেন তার কি কোনো দৃষ্টান্ত আছে? ইতিবাচক মানসিকতায় ধরে নিলাম, দৃষ্টান্ত আছে। যদি দৃষ্টান্ত নাও থাকে, তাহলে আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশ মানার উদ্যোগ নেবেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাবভিত্তিক ক্রমশ ক্রীড়ামুখর হয়ে উঠবে, আর শিক্ষার্থীদের মোবাইল-আসক্তি সহ অন্যান্য বাজে অভ্যাস কম-বেশি হ্রাস পাবে। আমরা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই প্রত্যাশা করি।
তিক্ত হলেও বর্তমান বাস্তবতার কথা উল্লেখ করতেই হয়। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আউটডোরের ক্রীড়াচর্চার জন্যে পর্যাপ্ত পরিসর বা মাঠ নেই। মাঠ থাকলেও প্রয়োজনীয় পরিচর্যার অভাবে ক্রীড়াচর্চার উপযোগিতা নেই। আর ইনডোর ক্রীড়াচর্চা (ক্যারাম, দাবা, লুডু ইত্যাদি)-এর জন্যে জায়গা কতোটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে, সেটা জানতে গিয়ে সংখ্যাগত স্বল্পতায় কৌতূহলী মাত্রই বিব্রত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। নিয়োজিত ক্রীড়া শিক্ষককে কাজে লাগানোর মতো মানসিকতা ও দক্ষতা এবং তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পারঙ্গমতা অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নেই। চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়াকণ্ঠের একাধিক প্রতিবেদনে সে চিত্র ফুটে উঠেছে। এমন বাস্তবতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জেলা শিক্ষা অফিসারের ক্লাবভিত্তিক ক্রীড়াচর্চায় মুখর করার উদ্যোগ কষ্টকর হবে এবং চ্যালেঞ্জিংও হবে। তারপরও এমন সময়োপযোগী উদ্যোগের সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করছি।