প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১৬
আখ ও পানে প্রণোদনা নেই কেন?

‘সুদিন ফেরাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চায় ফরিদগঞ্জের আখ চাষিরা’Ñএটি বুধবার প্রকাশিত চঁাদপুর কণ্ঠের অন্যতম শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, কোনো প্রকার রোগ ও পোকার আক্রমণ না থাকায় ফরিদগঞ্জে এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে, অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চাষিদের। এদিকে আখ চাষে স্বাবলম্বী এ উপজেলার কৃষকরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে এ উপজেলার আখ। তবে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। স্থানীয় কৃষকরা জানান, ফলন ভাল হলেও মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারণে পাইকারী বাজারে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এছাড়া পুঁজি স্বল্পতা, উন্নত প্রযুক্তির অভাবে চাষকাজ সমৃদ্ধ হচ্ছে না। অন্যদিকে খুচরা বাজারে চড়াদামে আখ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। আবার খুচরা বিক্রেতারা জানায়, বেপারীদের কাছ থেকে অধিক দামে আখ ক্রয় করায় বেশি দামে খুচরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি থাকায় এ বছর আখের অধিক সফল হয়েছে। পাশাপাশি সঠিক মূল্য পেতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের আখ বিক্রির নানা পরামর্শ দিচ্ছে বলেও জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চাষিরা জানান, বন্যা পরবর্তী সময়ে চাষের আসল টাকা ওঠানো সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে কোনো সহায়তাও পাওয়া যায়নি। এখন এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা চান চাষিরা। লোহাগড় গ্রামের আখ চাষি মো. খলিল তপদার জানান, তিনি বাল্যকাল থেকেই কৃষি আবাদের সাথে জড়িত। এ বছর ১শ’ ৫০ শতক জমিতে তিনি আখ চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে মৌখিকভাবে পরামর্শ দিলেও কোনো প্রকার প্রণোদনা দেয়া হয়নি। আখের ফলনও ভালো হয়েছে, কিন্তু বেপারীদের কাছে আখের মূল্য কম পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন তিনি। আখ চাষিদের সুদিন ফেরাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন তিনি। আরেক চাষি নুরুল ইসলাম জানান, তার ৭০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া লাখ টাকার আখ তিনি বিক্রি করেছেন। বেপারীরা আখের দাম কম দেয়ায় বাম্পার ফলনেও লাভের মুখ দেখছেন না তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, এ বছর ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। আখ চাষিদের জন্যে কোনো বরাদ্দ আসে না, তবে তাদের নানান পরামর্শ দেয়া হয়।
আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এতে ভোক্তা উপকৃত হলেও আলুচাষিরা ভালো দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসন্ন মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সরকারের পক্ষ থেকে যাতে কাঙ্ক্ষিত প্রণোদনা পায় সরকারকে সে বিষয়ে ভাবতে হবে। ফরিদগঞ্জে আখের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও আখচাষিরা প্রকৃত দাম না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসার চাষিদের জন্যে প্রণোদনা হিসেবে কোনো বরাদ্দ আসে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এতে আখচাষিরা হতাশায় ভুগছেন, যেটা স্বাভাবিক। হাইমচরের অন্যতম অর্থকরী ফসল পান। পানচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রণোদনা দাবি করলেও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বলা হয়, পানের জন্যে প্রণোদনা দেয়া হয় না। এ প্রেক্ষিতে আমাদের কথা হলো, অন্যান্য অনেক ফসলের জন্যে সরকারি প্রণোদনা পাওয়া গেলেও আখ ও পানের জন্যে চাষিরা প্রণোদনা পাবে না কেন? এ দুটি ফসল কি বিদেশি ফসল, যে কারণে চাষিরা প্রণোদনা পাবে না? তাহলে কি এ দুটি ফসলের দেশিয় ফসলের স্বীকৃতি আদায়ের জন্যে দাবি জানাতে হবে, আন্দোলন করতে হবে?