বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২৬

‘উড়াল’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে চাঁদপুরের কৃতী সন্তান শান্ত চন্দ্র সূত্রধর

মঞ্চ থেকে বড়ো পর্দায় দেশের মিডিয়ার জনপ্রিয় মুখ, ১৬ বছরের মঞ্চ অভিজ্ঞতায় প্রথম চলচ্চিত্রেই দর্শক-সমালোচকের প্রশংসায় ভাসছেন

সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদক
‘উড়াল’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে চাঁদপুরের কৃতী সন্তান শান্ত চন্দ্র সূত্রধর

চাঁদপুরের গর্ব, সাংবাদিক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধরের পুত্র, নাট্যমঞ্চের প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা শান্ত চন্দ্র সূত্রধর এখন বড়ো পর্দার জনপ্রিয় মুখ। দীর্ঘ ১৬ বছরের শিল্প-সংগ্রাম, মঞ্চাভিনয়ের অভিজ্ঞতা ও অভিনয়শিল্পের প্রতি গভীর ভালোবাসা নিয়ে তিনি প্রথমবার চলচ্চিত্রে হাজির হলেন ‘উড়াল’ সিনেমায়। তরুণদের বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও স্বপ্নের গল্প নিয়ে নির্মিত এ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই দর্শক-সমালোচকের প্রশংসায় ভাসছে।

‘উড়াল’-এ শান্ত অভিনয় করেছেন ‘বাচ্চু’ নামে এক কেন্দ্রীয় চরিত্রে। বাচ্চু একজন দক্ষ সাধারণ সাইকেল মেকার, কিন্তু তার স্বপ্নের আকাশ সীমাহীন। সহজ-সরল জীবন, নিরন্তর পরিশ্রম আর বড়ো হয়ে ওঠার স্বপ্নে ভর করে বাচ্চুর যাত্রাপথ দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শান্তর অভিনয়ে মঞ্চের দৃঢ়তা ও গভীর প্রস্তুতির ছাপ যেমন স্পষ্ট, তেমনি ক্যামেরার সামনে তিনি যেন একেবারেই নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে হাজির হয়েছেন। তাঁর সংলাপ, চোখের ভাষা ও শরীরী অভিব্যক্তি দর্শকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছে।

‘উড়াল’-এর গল্প গড়ে উঠেছে তিন বন্ধুর চারপাশে। বাচ্চু চরিত্রে শান্ত চন্দ্র সূত্রধর, রঞ্জু চরিত্রে সোহেল তৌফিক, যিনি একজন আড়ত কর্মচারীর ভূমিকায়, আর মতি চরিত্রে মাহফুজ মুন্না, যিনি জীবিকার তাগিদে পত্রিকা বিক্রি করেন। এই তিন বন্ধুর বন্ধুত্ব, সংগ্রাম ও স্বপ্নপূরণের যাত্রাই পুরো সিনেমার আবেগকে বুনে দিয়েছে। গল্পে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন নারী চরিত্র কুমকুম, যাঁর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কাব্যকথা। এ ছাড়া কে এম আবদুর রাজ্জাক, কবরী দাশ, রোশেন শরিফ, মীর সরওয়ার আলী মুকুলসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন সিনেমাটিতে, যা সিনেমাকে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা।

প্রথম চলচ্চিত্র হলেও ‘উড়াল’-এর নির্মাণে পরিচালক জোবায়দুর রহমান দেখিয়েছেন নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত। সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন সম্রাট প্রামানিক। আর প্রযোজনায় ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা শরীফ সিরাজ। যাত্রাপার্টি ব্যানারের প্রযোজনায় সিনেমাটি বড়ো পর্দায় উপস্থাপিত হয়েছে দারুণ পরিসরে।

শুধু বড়ো পর্দার সাফল্য নয়, সম্প্রতি শান্ত চন্দ্র সূত্রধরের ঝুলিতে যোগ হয়েছে এক আন্তর্জাতিক সম্মাননা। কলকাতায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক আসর ‘Bangashree 2025’-এ তাঁকে প্রদান করা হয়েছে মর্যাদাপূর্ণ ‘বঙ্গরত্ন সম্মান’ (Banga Ratna Samman)।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কালচার ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (Culture Development Foundation) আয়োজিত মেগা নৃত্য ও সঙ্গীত উৎসবে দেশ-বিদেশের গুণী শিল্পীদের উপস্থিতিতে শান্ত এই সম্মান গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের মঞ্চ ও মিডিয়া সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মানকে ধরা হচ্ছে এক অসাধারণ অর্জন।

অভিনয়ের প্রতি শান্তর ভালোবাসা শুরু হয়েছিলো চাঁদপুরের প্রসিদ্ধ সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী থেকে। সেখানে অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক শরীফ চৌধুরীর কাছেই তাঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়। ছোট্ট শহরের নাট্যমঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি একের পর এক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, মঞ্চনাটকের প্রযোজনায়ও যুক্ত ছিলেন।

২০১৯ সালে ভারত সরকারের উচ্চতর শিক্ষাবৃত্তি ICCR Scholarship অর্জন করে তিনি পাড়ি জমান কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই নাটক বিভাগে অভিনয়, পরিচালনার ও মিডিয়ার অনন্য শিল্প-সম্পৃক্ত বিদ্যার ওপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণী শিক্ষক ও বরেণ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে যে শিক্ষালাভ করেছেন, তা আজ তাঁর প্রতিটি কাজে প্রতিফলিত হয়। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নরওয়ে, ফ্রান্স ও আরও কয়েকটি দেশের খ্যাতনামা গুণী শিল্পীর সংস্পর্শে কাছ থেকেও তিনি নাটক, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির ওপর বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই সমৃদ্ধ শিক্ষার ভাণ্ডার তাঁকে করেছে অভিনয়ের এক বহুমাত্রিক শিল্পী।

“এছাড়াও, দেশের গুণী নির্মাতা ও তারকারা ‘উড়াল’ দেখতে এসে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছেন।”

প্রথম সিনেমার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত শান্ত চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “ ‘উড়াল’ আমার অভিনয় জীবনের নতুন অধ্যায়ের শুরু। মঞ্চ আমাকে শিখিয়েছে চরিত্রকে বুঝতে, জীবন্ত করে তুলতে। সেই অভিজ্ঞতা বড়ো পর্দায় কাজে লাগাতে পেরেছি। আশা করি দর্শকরা সবসময় পাশে থাকবেন।’’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি আরো যোগ করেন, “দেশের ভালো ভালো সাহিত্যনির্ভর স্ক্রিপ্টে কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিকভাবেও সিনেমায় কাজ করার স্বপ্ন দেখি। একজন দক্ষ অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করে যাচ্ছি। বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করে যেতে চাই।”

মুক্তির পর থেকেই ছবিটি চলছে দেশের একাধিক প্রেক্ষাগৃহে। ঢাকায় বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস (যমুনা ফিউচার পার্ক) ও লায়ন্স সিনেমা হলে দর্শক ভিড় জমাচ্ছেন। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের স্টার সিনেপ্লেক্স, রাজশাহীর গ্র্যান্ড রিভার ভিউ সিনেপ্লেক্স এবং বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সসহ আরও বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহে চলছে ছবিটি। প্রতিটি হলেই দর্শকদের ভিড় ও প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করছে, ‘উড়াল’ এ বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি হতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘উড়াল’ কেবল একটি সিনেমা নয়, বরং নতুন প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীদের স্বপ্নপূরণের এক প্রতীক হয়ে উঠছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়