সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে বিএনপি অফিস ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সাবেক এমপি প্রতিনিধি নিরু আটক

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ০৮:৪৫

জেলা পরিষদ ও পৌরসভার বাজেটে পুকুর সংরক্ষণের বরাদ্দ রাখুন

অনলাইন ডেস্ক
জেলা পরিষদ ও পৌরসভার বাজেটে পুকুর সংরক্ষণের বরাদ্দ রাখুন

একসময় পুকুরে গোসল ছিলো চাঁদপুর শহরবাসীর প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। ঠাণ্ডা জলে ডুব দিয়ে প্রাণ জুড়ানো, বিকেলের আলোয় পুকুরের পাড় ঘেঁষে গল্প, সব মিলিয়ে পুকুর ছিলো একান্ত আবেগ, মনের প্রশান্তি ও প্রয়োজনের জায়গা। আজ সেই চিত্র শুধুই স্মৃতি। আধুনিক নগরায়ন, দখল ও অদূরদর্শী পরিকল্পনার বলি হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুর শহরের পুকুরগুলোর ঐতিহ্য। একসময় চাঁদপুর শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতেই ছিলো একাধিক পুকুর। আদালত পাড়া, কদমতলা, পাল পাড়া, উকিল পাড়া, প্রফেসর পাড়া, ট্রাক রোড, বিষ্ণুদী মুন্সিবাড়ি মাদ্রাসা রোড, মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিলো পরিচ্ছন্ন ও রক্ষণাবেক্ষণকৃত বহু পুকুর, যা গোসল করা, মাছ চাষ ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো।

চাঁদপুর শহরের প্রবীণ নাগরিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৫-৩০ বছর আগেও চাঁদপুর শহরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মালিকানাধীন পুকুর ছিলো সাধারণ চিত্র। শিশু থেকে বৃদ্ধ, ছাত্র থেকে দিনমজুর, সবার জীবনেই পুকুর ছিলো একটি অনিবার্য অবলম্বন। সময়ের বিবর্তনে একে একে এসব পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কোথাও গড়ে উঠেছে দালান, কোথাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোথাও বাসা-বাড়ি, কোথাও পাকা রাস্তা। কারো কারো দাবি, নিজস্ব প্রয়োজনে বা উন্নয়ন কাজের নামে পুকুর ভরাট করা হলেও এর অধিকাংশই হয়েছে বিনা অনুমতিতে বা প্রভাবশালীদের চাপে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, পুকুর মানে শুধু জলাধার নয়, এটা একটি শহরের পরিবেশের শ্বাস-প্রশ্বাস। পুকুর হারালে শহরের মাটি শুকিয়ে যায়, পানির স্তর নিচে নেমে যায়, আর জলাবদ্ধতা বেড়ে যায়। আগের তুলনায় শহরে এখন তেমন পুকুর না থাকায় শহরের বহু মানুষ এখন প্রাকৃতিক জলাধারের পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত। অনেকে বলেন, এখন আর শহরের পুকুরে ডুব সাঁতারে প্রাণ খুলে গোসল করার সেই সুযোগ নেই। সেসব এখন যেনো সোনালী অতীত। গোসলের জন্যে টিউবওয়েল বা গভীর নলকূপই ভরসা। কিন্তু সেই ঠাণ্ডা জল আর নেই, সেই আরামও নেই। তরুণরা আজ সাঁতার শেখে না, শিশুরা জলে ডুবে খেলতে শেখে না। শহরের শিশুরা জানেই না পুকুর মানে কী!

বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। কারণ বৃষ্টির পানি যাওয়ার মতো স্বাভাবিক জলাশয় আর নেই। পুকুর শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতেরও নিরাপত্তা। এখন সময় এসেছে পুকুর রক্ষা ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার। পৌরসভা বা জেলা প্রশাসনের উচিত শহরের যেসব পুকুর এখনও টিকে আছে, তা সংরক্ষণে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা। পুরানো পুকুরগুলোর ঐতিহাসিক মূল্যায়নে শহরের পরিকল্পনায় নতুন জলাশয় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে মনে করছেন চাঁদপুরবাসী।

আমরা মনে করি, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে পুকুর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। একসময় ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর ছিলো কুমিল্লা। এখন সেটি আগের মতো নেই। তারপরও ক’টি বিখ্যাত দিঘির কারণে কুমিল্লার সেই রূপ কিছুটা হলেও আছে। চাঁদপুর শহরে একসময় ট্যাংক (পুকুর/দিঘি)-এর প্রাচুর্য থাকলেও এখন যে আগের মতো নেই, সেটা নিয়েই চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি কবির হোসেন মিজি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যার বিবরণ সংক্ষিপ্তভাবে উপরে তুলে ধরা হয়েছে। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ও মনিটরিংয়ে চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা পরিষদকে বিদ্যমান পুকুরগুলো সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের ২০২৫-২০২৬ বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। এজন্যে ‘জলবায়ু তহবিল’ থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আনার জন্যে জেলা পরিষদ ও পৌরসভাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করতে হবে এবং তদবির চালাতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সুদৃষ্টি ও আন্তরিক সহযোগিতা নেয়ার বিকল্প আপাতত নেই। এসব কিছু মাথায় রেখেই চাঁদপুর জেলা পরিষদ ও চাঁদপুর পৌরসভা আসন্ন বাজেটে নিজস্ব তহবিল থেকে সম্ভাব্য বরাদ্দ রেখে পুকুর সংরক্ষণের কাজ শুরু করাটা যথার্থ হবে এবং সেটা দেখেই জলবায়ু তহবিল ও অন্যান্য খাত থেকে সংশ্লিষ্টরা বরাদ্দ প্রদানে আগ্রহী হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়