প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ০০:৫২
জেলায় পুলিশের সাম্প্রতিক সাফল্য প্রসঙ্গে

৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ও জুলাই বিপ্লবে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের পুলিশ। মনোবল হারানো অবস্থায় পুলিশকে দেশের স্বার্থে কাজ শুরু করতে হয়। দাবিদাওয়া পূরণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস, সেনাবাহিনীর সাহচর্য ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাউন্সেলিংয়ে পুলিশ ক্রমশ মনোবল ফিরে পেতে শুরু করে। সারাদেশের অন্য কোথায় কী অবস্থা জানি না, তবে ১০ মাস পর সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম-এর সুদক্ষ নেতৃত্বে ও সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনায় চাঁদপুর জেলায় পুলিশকে প্রায় পূর্ণ মনোবল সম্পন্নই মনে হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ অভিযানে প্রাত্যহিক সাফল্যের পাশাপাশি স্বতন্ত্র সাফল্যে পুলিশকে বেশ উজ্জীবিত মনে হচ্ছে। মেধাবী ও নিবেদিতপ্রাণ পুলিশ অফিসাররা একের পর তাঁদের সাফল্যে সাড়া ফেলেছেন চাঁদপুর জেলায়। পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে এবং মাসিক কল্যাণ সভায় পুরস্কৃত করেও তাঁর ফোর্সকে দিচ্ছেন প্রেরণা ও প্রণোদনা। এর ফলে মতলব উত্তরে বিদেশি পিস্তল উদ্ধার, কচুয়ায় দুটি অটোবাইক সহ পাঁচ চোর গ্রেফতার, শাহরাস্তিতে কাঠ ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসায়ী ও মতলব দক্ষিণে মুদি ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক ও সর্বশেষ মঙ্গলবার শাহরাস্তির চাঞ্চল্যকর দিনমজুর আলমগীর হত্যার পলাতক প্রধান আসামী তপনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতারে পুলিশ লাগাতার সাফল্য দেখিয়ে চলছে। এতে সাধারণ্যে পুলিশের ভাবমূর্তি বেড়ে চলছে।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, শাহরাস্তি উপজেলার আলোচিত দিনমজুর আলমগীর হত্যা মামলার প্রধান আসামি তাজুল ইসলাম তপনকে ঢাকার উত্তরখান থেকে গ্রেফতার করেছে শাহরাস্তি মডেল থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়, আলমগীরকে হত্যার পর আত্মগোপনে চলে যায় তপন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৪ জুন ২০২৫) রাতে ছদ্মবেশে ঢাকার উত্তর খান এলাকায় ভ্যানে করে জুতা বিক্রি করা অবস্থায় তপনকে আটক করা হয়। রাতেই তাকে শাহরাস্তি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। গত রমজানে পরকীয়া প্রেমের জেরে সোনিয়া আক্তার মামা শ্বশুর তপনের সহযোগিতায় গলা কেটে আলমগীরকে হত্যা করে। তপন চিতোষী পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপনের ছোট ভাই। এলাকায় তিনি একজন বখাটে ও প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আলমগীর হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। এর আগে মামলার অন্যতম আসামী সোনিয়া আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানান, আলমগীরের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো এবং সেই সম্পর্কের কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে মামা শ্বশুর তপনের সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে শাহরাস্তির মনিপুর এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়ির ছাদে ডেকে নিয়ে আলমগীরকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। আলমগীর ছিলেন স্থানীয়ভাবে ‘মাইক ম্যান’ হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় এরই মধ্যে আলমগীরের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত থাকা সোনিয়াকে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
খুনের শিকার শাহরাস্তির আলমগীর ছিলেন দিনমজুর। তিনি প্রভাবশালী ছিলেন না কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয়ও নন। তার খুনের তদন্তে কোনো উপদেষ্টা, সাবেক এমপি, বর্তমান ও সাবেক কোনো জনপ্রতিনিধি, উচ্চ পদস্থ কোনো আমলা তদবির করেছেন বলে জানা যায় নি, তবে সাধারণ মানুষ সংক্ষুব্ধ হয়েছে, পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টিতে খুনির বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। পুলিশ তাতেই সক্রিয় হয়ে আলমগীর হত্যার রহস্য তাৎক্ষণিক উদঘাটনে মনোযোগী হয়েছে এবং সফল হয়েছে। পলাতক প্রধান আসামী তপনকে ঢাকা থেকে ধরতে পারায় তদন্তে বিশেষ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এতে আলমগীর হত্যার বিচার দ্রুতই সম্পন্ন হবে, যদি বিচারিক প্রক্রিয়ায় অন্যান্য আনুকূল্য সংশ্লিষ্ট বিচারক সময়মত পেয়ে যান। আমরা শাহরাস্তি মডেল থানার পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে স্বল্পতম সময়ে জমাদানের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা শাহরাস্তি মডেল থানার ন্যায় চাঁদপুর জেলার অন্যান্য থানার পুলিশকে চলমান সক্রিয়তা ও সাফল্যের ধারা বজায় রাখার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করে দায়িত্ব পালনে অধিকতর আত্মনিবেদন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।