বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ০৮:৩৭

মুদি ও কাঠ ব্যবসার আড়ালে যখন মাদক ব্যবসা!

অনলাইন ডেস্ক
মুদি ও কাঠ ব্যবসার আড়ালে যখন মাদক ব্যবসা!

মতলব দক্ষিণে ইয়াবা বেচাকেনার দায়ে দু জনকে ১ বছর করে কারাদণ্ড ও ৬ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (২৩ জুন ২০২৫) রাতে শহরের টিএন্ডটি রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ দণ্ড প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমজাদ হোসেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো : মাদক বিক্রেতা মুদি ব্যবসায়ী আক্তার গাজী (৪২)। তার বাড়ি পৌরসভার দক্ষিণ বাইশপুর এলাকায়। অপরদিকে ক্রেতা ট্রাক ড্রাইভার মো. সালাউদ্দিন সরদার (৩০), যার বাড়ি বোয়ালিয়া গ্রামে। জানা যায়, মতলব শহরের টিএন্ডটি রোডের গাজী স্টোর নামক একটি মুদি দোকানে মুদি ব্যবসার অন্তরালে দোকান মালিক আক্তার গাজী দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক বেচাকেনা করে আসছিলো। এমন অভিযোগে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণে থাকে পুলিশ প্রশাসন। সোমবার রাতে আক্তার গাজীর কাছ থেকে একজন ক্রেতা ৬০০ টাকার বিনিময়ে ২ পিচ ইয়াবা ক্রয় করার সময় তাদের দুজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ যৌথভাবে ওই মুদি দোকানে তল্লাশি চালায়। পরে মুদি দোকানটি সিলগালা করে তাদের দুজনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুজনকে ১ বছর করে কারাদণ্ড ও ৬ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

মঙ্গলবার (২৪ জুন ২০২৫) রাত পৌনে ৩টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডস্থ শোরশাক-কালীবাড়ি সড়কের পশ্চিম পাশে আব্দুল জলিলের কাঠের দোকানের ভেতরে অভিযান পরিচালনা করে তাকেই মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল (৩৭) নিজ দোকানের খাটিয়ার নিচ হতে নিজ হাতে বের করে দেয়া মতে একটি সাদা পলিথিনের ভেতরে একটি পোটলায় দু কেজি গাঁজা (মূল্য অনুমান চল্লিশ হাজার টাকা) এবং একটি লাল রংয়ের ছোট ব্যাগের ভেতরে গাঁজা বিক্রয়ের নগদ বায়ান্ন হাজার টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ধৃত আ. জলিল কাঠ ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন যাবৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে স্বল্প মূল্যে গাঁজা (মাদকদ্রব্য) ক্রয় করে বিভিন্ন স্পটে বেশি দামে বিক্রি করে যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এই দুটি সংবাদ পড়ে পাঠকমাত্রই উদ্বিগ্ন হয়েছে। কারণ, মাদক ব্যবসা এখন শুধু চিহ্নিত ও পুলিশের তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরাই করে না, মুদি ও কাঠ ব্যবসার আড়ালেও চলে। এর বাইরে আরো অন্যান্য ব্যবসার আড়ালেও যে চলে না, সেটা হলফ করে বলার সুযোগ নেই। এটা ওপেন সিক্রেট যে, শহর ও গ্রামের কিছু ঔষধের দোকানেই হরহামেশা চলে মাদক ব্যবসা। হাইওয়ে রেস্তোরাঁর কর্মচারীরাও করে মাদক ব্যবসা, যেটা র‌্যাবের জালে বারবার ধরা পড়েছে। মাথায় টুপি দিয়ে ও গায়ে লম্বা পাঞ্জাবি পরিধান করে অনেক শ্মশ্রূমণ্ডিত লোক ধর্মীয় বেশভূষার আড়ালে, কেউ ঠাকুর-পুরোহিত সেজেও মাদক ব্যবসা করে, যারাও মাঝেমধ্যে ধরা পড়ে পুলিশের জালে। মাদক পাচারে ও ব্যবসায় বোরকা ও হিজাব পরিহিত নারীদের ব্যবহারও দেখা যায়। মাদকের বিস্তার ও সহজলভ্যতা নিশ্চিতে মাদক সিন্ডিকেটের সকল অভিনব কৌশল যে মাদকের ব্যাপক সয়লাব ও ভয়াবহতাকে ইঙ্গিত করে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমতাবস্থায় সমাজে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড শুধু সরকারিভাবে চললে হবে না, ব্যাপক জনসম্পৃক্ততায় বেসরকারি পর্যায়েও এই কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় একদিন মাদককেন্দ্রিক সামগ্রিক পরিস্থিতি সকল মহলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। অতএব, সময় থাকতেই নিতে হবে সর্বাত্মক ব্যবস্থা, নয়তো অপেক্ষা করবে ভয়াবহ দুরবস্থা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়