প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ২১:৪২
চাঁদপুর পৌরসভার টিএলসির সভায় প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজে পৌরসভার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য

চাঁদপুর পৌরসভার নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি)-এর সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৫ জুন ২০২৫) বেলা ১১টায় চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর প্রশাসক ও চাঁদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) মো. গোলাম জাকারিয়া।
|আরো খবর
চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম ভূঁইয়া ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা চন্দ্রনাথ ঘোষ চন্দনের সঞ্চালনায় নগর সমন্বয় কমিটির এ সভায় পৌরসভার নাগরিক সার্টিফিকেট সেবা, বর্ধিত পানির বিল, রাস্তাঘাটের সমস্যা, অস্বচ্ছ দুর্গন্ধময় পানি সরবরাহ, জলাবদ্ধতা, স্যানিটেশন সমস্যা, শহরের যানজট, খেলার মাঠ, রাস্তার উপর ভ্যান গাড়ি ও হকারদের দৌরাত্ম্য, ময়লার ডাম্পিং স্টেশন, মশক নিধনসহ বিরাজমান সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ এবং আসন্ন নতুন বাজেট প্রসঙ্গে নাগরিক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে মতামত তুলে ধরা হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় পৌরসভার বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আক্তার হোসেন মাঝি, টিএলসিসির সদস্য রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট তমাল কুমার ঘোষ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্য মামুনুর রশিদ বেলাল, বিপণীবাগ পৌর সুপার মার্কেটের সভাপতি মো. সফিউল্লাহ, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাইনুল ইসলাম পাটওয়ারী, শহর জামাতের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই লাভলু, বিভিন্ন ওয়ার্ডের নারী প্রতিনিধি শাহানারা আক্তার শানু, নাসরিন আক্তার, নাহিদ সুলতানা সেতু, ঈশিতা বেগম, রাবেয়া বেগম প্রমুখ।
২০২৫-২৬ অর্থ বছরের চাঁদপুর পৌরসভার খসড়া বাজেট নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। এ আলোচনায় টিএলসিসি সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন। এই মতামতের ভিত্তিতে উপস্থাপিত বাজেটে সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের চূড়ান্ত বাজেট ঘোষণা করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
সভায় সিভিল সার্জন প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা অফিসার, চাঁদপুর সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার পুলিশ পরিদর্শক ফেরদৌস, অ্যাড. মনিরা চৌধুরী, অবসরে শিক্ষিকা কাজী সুরাইয়াসহ অন্যরা এবং পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবিত বিষয়াদি চাঁদপুর পৌরসভার কর্মকাণ্ডে বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দেন বক্তারা। তারা বলেন, পৌর এলাকার যানজট নিরসন, পুরাণবাজার থেকে দোকানঘর রাস্তা সংস্কার, শহরের ময়লা ডাম্পিং স্টেশন অন্যত্র স্থানান্তর, পৌরসভার বর্ধিত অংশের উন্নয়ন, শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, মশক নিধন, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহসহ সকল নাগরিক সেবার মান উন্নত করতে এবং নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
২০২৫–২৬ পৌর অর্থ বছরের খসড়া বাজেট নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেন বক্তারা। খসড়া পৌর বাজেট নিয়ে আলোচনায় টিএলসিসির সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন।
এছাড়া পৌরসভার সকল নাগরিক বিনা হয়রানিতে পৌর সেবাগুলো যেনো সহজে নিতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেন তারা।সভাপ্রধানের বক্তব্যে চাঁদপুর পৌর প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজে পৌরসভার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আগামী অর্থ বছরে আমরা পৌরসভায় কী করতে চাই, নাগরিক প্রতিনিধি হিসেবে আপনারা কী চান সে পরামর্শের জন্যেই আজকের এ সভায় আলোচনা হয়েছে। যৌক্তিক পর্যায়ে পানির বিল বাড়ানো হয়েছে। এখনো পৌরসভা পানি সরবরাহে ভর্তুকি দিচ্ছে। আসলে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারলে আরো উন্নয়ন ত্বরান্বিত সম্ভব। আমি পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। হয়তোবা এখানে দীর্ঘ সময় থাকার সুযোগ থাকবে না। পৌরবাসীর উন্নয়নে সবার সহযোগিতা নিয়ে যতোদিন আছি কাজ করে যেতে চাই। অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে। কিন্তু পৌরসভার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
পৌর প্রশাসক বলেন, লোহারপুল-দোকানঘর রাস্তাটা চাঁদপুর সড়ক বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যতদিন না তারা এই রাস্তার কাজ না করছে, ততদিন জনগণের ভোগান্তি লাঘবে আমরা রাস্তাটির সংস্কার কাজ চালিয়ে যাবো। কোর্ট স্টেশন-বড় স্টেশন রাস্তা এবং চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সড়ক থেকে মৈশাদী অভিমুখী রাস্তার উন্নয়ন এলজিইডিকে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। পৌরসভার অনেক রাস্তায় বিদ্যমান সমস্যার ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। বাকি যেসব রাস্তা রয়েছে, সেগুলোরও পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে। নতুন নামকরণের রাস্তা মিশন রোড থেকে ফরিদগঞ্জ সড়ক পর্যন্ত উন্নয়ন কাজের জন্যে আমরা ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এখানে রাস্তাটি ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ প্রশস্ত হবে। মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরায় ওয়াকওয়ে আদলে ফুটপাত হবে। এছাড়া রেলওয়ে কোর্ট স্টেশন থেকে বাইপাস একটি সড়ক রেল লাইনের দক্ষিণ পাশ দিয়ে করার একটা প্ল্যান আমাদের রয়েছে। পৌরবাসীর জ্ঞাতার্থে পৌর প্রশাসক জানান, রাজস্ব খাতে এই পৌরসভার আয় মাত্র ৪০ কোটি টাকা। তার মধ্যে বিশ কোটি টাকা চলে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাসে। ময়লা ডাম্পিং খাতে ব্যয় হয় ছয় কোটি টাকা। পরিবহন জ্বালানি খাতসহ অন্যান্য খাতে ৪ কোটি টাকা, সব মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকা পৌরসভা পরিচালন খরচ হয়। বাকি থাকে আট-দশ কোটি টাকা। এই টাকার ওপর রাস্তাঘাটের উন্নয়ন। সরকারিভাবে কিছু প্রজেক্ট হয়, সেগুলোর উন্নয়ন কাজ আবার আলাদা।
প্রশাসক বলেন, নতুন বাজেট ঘোষণা করা হবে। এই বাজেট যাতে টেকসই উন্নয়ন ও জনবান্ধব হয় সেই লক্ষ্য থাকবে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে শহরকে সুন্দর রাখার জন্যে ময়লা ডাম্পিং স্টেশন অন্যত্র স্থানান্তরে নতুন জায়গা ক্রয়ে ২ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি কবরস্থানের জন্যেও জায়গা ক্রয় করা হবে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জায়গা দেখে দেয়ার জন্যে পৌর নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
পৌর প্রশাসক চাঁদপুর শহরবাসীকে আরেকটি সুখবর দেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে চাঁদপুরে নতুন আরেকটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হবে। মেঘনা নদীর সুপেয় মিঠা পানির দ্বারা প্রস্তাবিত ক্লাস্টার টাউন পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প। যার পরামর্শ মিশনের দেশি-বিদেশি কর্মকর্তারা আজ বুধবার চাঁদপুর ঘুরে গেছেন।