প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ০৮:৪১
শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারে এমন অনিয়ম, আর গ্রামাঞ্চলে?

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া প্রতিনিধি মো. নাছির উদ্দিন কর্তৃক পরিবেশিত এক সংবাদে লিখা হয়েছে, কচুয়া পৌরসভাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ইউএনও’র বাসভবন পর্যন্ত সড়ক মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক মেরামতে দেয়া হচ্ছে না বিটুমিন। কোনো প্রকার তদারকি ছাড়াই কাদার ওপর চলছে নিম্নমানের কার্পেটিং কাজ। সরজমিনে সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, কচুয়া পৌরসভার এসও মো. জসীম উদ্দীনের উপস্থিতিতেই চলছে কার্পেটিং। কার্পেটিং কাজে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। কোনো কারণে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিটুমিন পুড়ে গেলে তা সড়কে ব্যবহার করা যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কার্পেটিংয়ে বিটুমিন না দিয়েই চলছে কাজ। যদি কেরোসিন তেলও দেয়া হতো, তাও তারা দেখতে পেতেন। কিন্তু তারা এরকম কিছু দেখেননি। কার্পেটিং করার আগে ঝাড়ু দিয়ে সড়কটি পরিষ্কার করার কথা। কিন্তু বৃষ্টিতে জমে থাকা কাদার উপরই দেয়া হচ্ছে ঢালাই। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কাদলা গ্রামের বাসিন্দা হালিম বলেন, যেভাবে কাজ করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামী কিছুদিন পরেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে। কাজের মান দেখে মনে হচ্ছে খুবই নিম্নমানের কাজ। যদি সড়কটি ভালোভাবে সংস্কার করা হতো, তাহলে তারা দীর্ঘদিন এটা ব্যবহার করতে পারতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী জানান, বিটুমিন প্রয়োগের ফলে পুরোনো সড়কপৃষ্ঠের ময়লা-আবর্জনা দূর হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যমান সড়কের সঙ্গে নতুন যে অংশটি তৈরি করা হয় তার বন্ডিং ভালো হয়। সড়কপৃষ্ঠে ময়লা-আবর্জনা থাকলে তা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং অবশ্যই ঝাড়ু দিয়ে সড়কপৃষ্ঠ পরিষ্কার করতে হবে। ময়লা-আবর্জনার মধ্যে কার্পেটিং কাজ করলে তা অল্পদিনের মধ্যেই উঠে যাবে।
এদিকে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া প্রতিনিধি বিষয়টি পোস্ট করার পর কচুয়া পৌরসভার প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক এবং উক্ত কাজের এসও মো. জসিম উদ্দীন পোস্টটি ডিলেট করার অনুরোধ করেন ০১৭১২১৪১৪৭৩ নাম্বার থেকে। কচুয়া পৌরসভার প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সকালে কাজের ওইখানে উপস্থিত ছিলাম। রিপোর্ট লেখাকালীন তিনি বলেন, কচুয়া পৌরসভার প্রশাসক মহোদয়ের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। আগামীকাল আমার ছেলের ভর্তি। ঢাকা থেকে এসে আপনার সাথে কথা বলবো।ফেসবুকের পোস্টটি ডিলেট করে দেন। এ বিষয়ে কচুয়া পৌরসভার প্রশাসক, ইউএনও মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া যায়নি। এ বিষয়ে চাঁদপর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. গোলাম জাকারিয়া মুঠোফোনে জানান, যেহেতু পৌরসভার দায়িত্বে ইউএনও, তাই উনাকে বিষয়টি অবগত করেন। আমাকে যেহেতু বিষয়টি জানিয়েছেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
কচুয়া শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ইউএনও’র বাসভবন পর্যন্ত রাস্তা। ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) আবার পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে। তাঁর বাসা অভিমুখী সড়কে যদি পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদার পৌর প্রকৌশলী ও এসও’র সামনেই নিম্নমানের কাজ করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে--গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত অসাধু ঠিকাদাররা কী কাজ করেন। তার প্রমাণ তো সম্প্রতি ফরিদগঞ্জে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের অনিয়মের মাত্রা দেখেই আন্দাজ করা যায়। গণমাধ্যমকর্মীরা সরব হওয়াতে সেই কাজে অনিয়ম কমানোর জন্যে লোকদেখানো কিছু তৎপরতা চলছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ম্যানেজ করা গেলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চোখ বুঁজে পুকুর চুরিতে সহায়তা করতো। কচুয়ায় নাছির উদ্দিন সরব হয়েছেন বলে তাকে নীরব করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু তিনি নীরব না হওয়ায় চাঁদপুর কণ্ঠে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারের অনিয়ম উত্থাপিত হয়েছে। আশা করি এই অনিয়ম প্রতিহত করতে পৌর প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরব হবেন তথা ত্বরিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।