প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ০৯:৪৯
মরণোত্তর তাঁর আরো মূল্যায়ন হোক

চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কৃতী সন্তান, শাহতলী নিবাসী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বহু প্রতিষ্ঠানের রূপকার শাহ্তলী জিলানী চিশতী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাওলানা এ টি আহমেদ হোসাইন রুশদীর ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী গতকাল শুক্রবার পালন করা হয়েছে। তিনি ১৯৭৫ সালের এইদিনে ঢাকা হ্যালি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানা গেছে, মরহুম এটি আহমেদ হোসাইন রুশদী এজিবিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন। শিক্ষা প্রসারে নিজের বহু অর্থ সম্পদ ও জমি দান করেছেন। গড়ে তুলেছেন শাহতলী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে : শাহতলী কামিল মাদরাসা, শাহতলী জিলানী চিশতী কলেজ, জিলানী চিশতী উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর শাহতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর শাহতলী দাখিল মাদ্রাসা, ৩০নং মধ্য শাহতলী কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯নং উত্তর শাহতলী যোবাইদা বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর শাহতলী যোবাইদা সরকারি (বালিকা) প্রাথমিক বিদ্যালয়, হামানকর্দ্দিতে শাহতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাপানিয়া রুশদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেনাপুর আগরজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেনগাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লাকসাম উচ্চ বিদ্যালয় ও ঢাকার দক্ষিণ মুহসেন্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শাহ্তলীর সন্নিহিত অঞ্চলের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়, মাদরাসা ও মসজিদসহ নানা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আন্তরিক সহযোগিতা করেন। তাঁর নিজের এলাকায় মানুষদের নিরক্ষরমুক্ত রাখার জন্যে তিনি এ মহৎ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে তাঁর ছিলো অক্লান্ত পরিশ্রম। পরিশ্রম এবং সততা যে মানুষকে সৌভাগ্যবান এবং সফল করতে পারে তার মূল্যায়নস্বরূপ জাতীয়ভাবে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন। শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখায় তৎকালীন সরকার তাঁকে গোল্ড মেডেল ও রুশদী উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘রুশদী’ শব্দের অর্থ বুদ্ধিমান, পরিপক্ক, সঠিক পথে পরিচালিত, সঠিক পথের অনুসারী। এ টি আহমেদ হোসাইনকে চৌদ্দটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া সহ অসাধারণ-অসামান্য বিদ্যোৎসাহ তথা শিক্ষানুরাগের জন্যে পরাধীন সময়ের সরকার রুশদী উপাধিতে ভূষিত করেছে ও গোল্ড মেডেল দিয়েছে, যেটা অনেক বড়ো কিছু। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে তো তাঁর মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি পাওয়া দরকার। তাঁর শিক্ষাপ্রেম কোনোভাবেই আত্মপ্রচারের জন্যে ছিলো না। তিনি এক্ষেত্রে ছিলেন নিঃস্বার্থ ও নিভৃতচারী। রুশদী নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া নিজের পুরো নামে করেন নি কোনো প্রতিষ্ঠান। তিনি উপজেলা সদর নয়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের নিকটস্থ স্থানে নয়, রেলপথ ও বড়ো সড়কের পাশে নয়, কোনো স্টেশন ও বাজারের পাশে নয়, নিজ বাড়ির নিকটে নিজ গ্রামে কলেজ প্রতিষ্ঠার যে সাহস দেখিয়েছেন, সেটা নিতান্তই বিরল। সারাদেশে এমন বিদ্যোৎসাহী ও সাহসী উদ্যোক্তার সংখ্যা একেবারে নগণ্য। তাঁকে মরণোত্তর সরকারি কোনো স্বীকৃতি দেয়া যায় কিনা সেটা ভেবে দেখতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।