শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫, ১২:১০

ইলিশ নিয়ে হোক সম্মিলিত ভাবনা ও অভিযান হোক সঁাড়াশি

অনলাইন ডেস্ক
ইলিশ নিয়ে হোক সম্মিলিত ভাবনা ও অভিযান হোক সঁাড়াশি

বছর দেড়েক আগে চঁাদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদককে সেনাবাহিনীর এক মেজর জেনারেল ফোন করলেন। খুব দুঃখ করে বললেন, ঢাকা থেকে আমার একজন সৈনিককে চঁাদপুর মাছঘাটে পাঠিয়ে চড়া মূল্যেই পর্যাপ্ত ইলিশ সংগ্রহ করলাম। কারণটা হলো, চঁাদপুরের ইলিশ অনেক সুস্বাদু। মাছ নিয়ে সেই সৈনিক বাসায় আসামাত্রই প্যাকেট খুলে রান্নার ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু রান্না চলাকালে ইলিশের কোনো ঘ্রাণ তো পাওয়া গেলোই না, এমনকি খাওয়ার সময় ইলিশের স্বাদও পাওয়া গেলো না। কারণ কী? জবাব একটাই : এই ক্রেতার কাছে চঁাদপুর/ ভোলা সহ বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চল/ লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকা/ নোয়াখালীর হাতিয়ার মাছ নয়, চট্টগ্রাম/কক্সবাজার কিংবা মায়ানমারের চকচকে ইলিশ যাচ্ছেতাই চড়া মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। চকচক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনি চকচক করলেই সব ইলিশ সুস্বাদু হয় না। মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা ব্যক্তিদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে কিংবা মৌন সমর্থনে এবং স্থানীয় প্রশাসনসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীরব ভূমিকায় চঁাদপুর মাছঘাটে ‘চঁাদপুরের ইলিশ’ বিক্রির নামে কিছু ব্যবসায়ীর এমন প্রতারণা বছরের পর বছর চলেই আসছে। আর প্রতারক শ্রেণীর এমন মাছ ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।

ইলিশের দাম নিয়ে কি প্রতারণা হয় না? যেহেতু ইলিশের দাম নির্ধারণে চঁাদপুর মাছঘাটে চলে সিন্ডিকেট-প্রভাবিত স্বনির্ধারণী প্রক্রিয়া, চলে স্বেচ্ছাচারিতা, সেহেতু দাম নিয়েও চলে প্রতারণা--এটা হলফ করে বলা যায়।

উপরোল্লিখিত বিষয় তো মাছঘাটের কিছু ব্যবসায়ীর প্রতারণা। আর অনলাইন প্রতারণা? সেটা তো ‘ইলিশের বাড়ি’ নামে ব্র্যান্ডিংকৃত চঁাদপুরের ইমেজ ও ইজ্জতকে অনেকটা পদদলিত করেই চলছে। অনলাইনে ইলিশ কিনে প্রতারিত হওয়া ক্রেতাদের ভুরিভুরি অভিযোগই যার প্রমাণ। এটা নিয়ে পুলিশের টনক নড়েছে ক’বছর ধরেই। সেজন্যে তারা গণমাধ্যমে ‘অনলাইনে ইলিশ ক্রয়ে প্রতারক হতে সাবধান’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে, যাতে লিখছে : অনলাইনে ইলিশ মাছ ক্রয়ে ক্যাশ অন ডেলিভারি (ঈঙউ) পদ্ধতি ব্যবহার করুন, অর্থাৎ মাছ হাতে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করুন। ইলিশ মাছের লোভনীয় অফার দেখে প্রতারণার ফঁাদে পা দেবেন না এবং কোনোভাবেই পণ্য পাওয়ার আগে টাকা পাঠাবেন না। ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)-এর ফঁাদে পা দিয়ে ইলিশের অনলাইন প্রতারক ব্যবসায়ী ধরাও পড়েছে। আশা করি আরো ধরা পড়বে।

জাতীয় মাছ ইলিশের মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতায় টনক নড়েছে চঁাদপুর জেলা প্রশাসনেরও। গত মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) ইলিশের মূল্য নির্ধারণে মৎস্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছেন চঁাদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি কেনো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইলিশের মূল্য নির্ধারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা লাগবে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আশা করি ইলিশ-সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় এই চিঠি সংশ্লিষ্ট ফাইল চাপা না পড়লে আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলবে।

ইলিশ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ভাবলেই কেবল চলবে না। ভাবনাটা হতে হবে সম্মিলিত। প্রতারিত ও শোষিত ভোক্তাদেরকেও তাদের করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে এবং আওয়াজ তুলতে হবে। সচেতন মহলকেও হতে হবে প্রতিবাদী। ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)কে নিতে হবে ইলিশকেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। পর্যবেক্ষকদেরকে দিতে হবে ইলিশের মূল্য নিয়ে বিশ্লেষণী বক্তব্য বা লিখতে হবে তথ্যবহুল লেখা। ইলিশ নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে সেমিনার করার কথা ভাবতে হবে মৎস্য ব্যবসায়ীদের বা তাদের সংগঠনের। আমরা বিশ্বাস করি, ইলিশের অযৌক্তিক চড়া মূল্য ও অনলাইনে ইলিশ বিক্রির প্রতারণা রোধে সম্মিলিত ভাবনার বিকল্প নেই। বস্তুত এতেই ইলিশ-অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঁাড়াশি অভিযান সফল করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়